
টঙ্গী প্রতিনিধি, গাজীপুর:
গাজীপুরের টঙ্গীর এরশাদনগর ৭নং ব্লক এলাকায় প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে সৎ মেয়ের জামাই মো. সেহেল, সতীন মোছা. মিনা বেগম ও তার মেয়ে অন্তরা ও চাদনী সহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন জোরপূর্বক বাড়িতে প্রবেশ করে ঘরের দরজা ভেঙে আয়েশা আক্তার (৫৬) নামে এক বৃদ্ধাকে নির্যাতন করে রাস্তায় ফেলে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। গত ৩০ মার্চ শনিবার সন্ধ্যা ৬ টায় এরশাদনগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসী গুরুতর আহত অবস্থায় আয়েশা বেগমকে মারধর করতে দেখে টঙ্গী পূর্ব থানায় খবর দিলে এসআই মনির ঘটনাস্থলে এসে আয়েশা বেগম কে উদ্ধার করে শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্ঠার জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় পুলিশ মিনার মেয়ে জামাই সোহেলকে গ্রেফতার করলেও অন্যরা পলাতক রয়েছে।
আয়েশা বেগম জানায়, আমি সারাদিন রোজা রেখে ঘরে ইফতার করবো এমন সময় হঠাৎ আমার স্বামীর ৩য় স্ত্রী মিনা ও তার মেয়ে অন্তরা, চাদনি ও মেয়ের জামাই সোহেল গালাগাল করতে করতে আমার বাড়ির ভিতর প্রবেশ করে। এ সময় তাদের হাতে লোহার রড, দা ও হাতুড়ি দেখতে পেয়ে আমি ভয়ে তাড়াহুড়া করে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেই। বাড়িতে ঢুকে অন্তরা বাড়ির মেইন গেইট লাগিয়ে দেয় এরপর বাড়ির বিদ্যুতের তার কেটে দিয়ে লোহার সাবাল ও হাতুড়ি দিয়ে ঘরের দরজা ভেঙে ফেলে। আমি ফোন করে অনেকের কাছে সহযোগিতা চেয়েছি চিৎকার করেছি কিন্তু মেইন গেইট আটকায়া দিয়েছে তাই কেউ সহযোগিতা করতে পারেনি। ওরা যেভাবে পারছে হাতুর দিয়া রড দিয়া আমারে পিটাইছে। টানা ১ ঘণ্টার মতো পিটাইতে পিটাইতে ওরা যখন হয়রান হয়ে গেছে তখন আমার হাত পা ধরে তুলে নিয়ে রাস্তায় ফেলে আসে। আর বলতে থাকে তোর পুলিশ বাবারা কই। আইতে ক এখন। তোরে এখন কোন বাপেরা বাচাইলো না। তারপর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফেরার পর দেখি আমি হাসপাতালে। ওরা আমাকে এমনভাবে মারছিল আমি ভেবেছিলাম আমি আর বাঁচবো না।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কনস্টেবল গিয়াস উদ্দিনের বড় স্ত্রী আয়েশা বেগম। আয়েশা দীর্ঘ ৩২ বছর যাবৎ এরশাদনগর এলাকায় ৭নং ব্লকের এই বাড়িতেই বসবাস করে আসছে। সব কিছু ঠিক ছিলো হঠাৎ একদিন গিয়াস তার ৩ য় স্ত্রী মিনা ও তার মেয়েদের পাশের একটি বাড়িতে নিয়ে আসে। এখানে আসার পর থেকেই তারা বিভিন্ন কায়দায় আয়েশা বেগমের সাথে বিবাদ সৃষ্টি করে আসছে। ৩য় স্ত্রীর প্রয়োচনায় পরে গিয়াস উদ্দিন প্রতিনিয়ত আয়েশাকে বিভিন্নভাবে অত্যাচার করতো। স্বামী ও সতীনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে আয়েশা নিরুপায় হয়ে গিয়াস উদ্দিনকে শরিয়া অনুযায়ী তালাক দিলেও এখনো রেহাই পায়নি। মিনা ও তার পরিবারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে এলাকাবাসী এর আগেও গণসাক্ষরসহ কাউন্সিলরের কার্যালয়ে আমরা অভিযোগ করেছে। গিয়াস উদিনের স্ত্রী মিনা, তার মেয়ে চাদনি, অন্তরা ও তার স্বামী সোহেল এর আগেও একাধিকবার হত্যার চেষ্টা করে মারধর করেছে। মারামারির ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মনির যখন তদন্ত করতে আসে তখন মিনা ও তার মেয়ে অন্তরা অত্যন্ত অশালীন প্রকৃতির আচরণ করে। আইনের প্রতি তাদের কোনো সম্মানবোধ নেই। তদন্তকালীন সময় মিনার মেয়ে অন্তরা এসআই মনির এর চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকিও দিয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমির হামজা বলেন, গিয়াস উদিন একাধিক বিয়ে করেছেন। তার বড় স্ত্রী আয়েশা বেগম প্রায় ৩২ বছর এই বাড়িতে বসবাস করছে। বাড়ির বিদ্যুৎ ও পানির বিল সবই আয়েশা বেগমের। মিনা ও তার মেয়েদের কর্মকাণ্ডে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ আমার কাছেও অভিযোগ এসেছে।
এ বিষয়ে টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, আয়েশা বেগম কে মারধর ঘটনায় সোহেল নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।