
বগুড়া প্রতিনিধি:
বগুড়ার গাবতলীর বালিয়াদিঘী ইউনিয়নের কালাইহাটা দাখিল মাদ্রাসায় নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলেছেন এক ভুক্তভোগী। নিয়োগ বাণিজ্য করে মাদ্রাসার সভাপতি ও সুপারিন্টেন্ডেন্ট লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ তার। আবার কয়েকজনকে চাকুরি দেওয়ার কথা বলেও টাকা পকেটস্থ করে চাকুরি দেননি বলেও তিনি অভিযোগ করছেন। এদিকে ১০ লক্ষ পরিমাণ টাকা দিয়েও (ঘুষ) নিয়োগ না পাওয়ায় সভাপতি-সুপারিন্টেনডেন্টের বিরুদ্ধে বগুড়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গাবতলী থানা আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেছেন তিনি।
আয়া পদের ওই চাকুরিপ্রার্থী ও মামলার বাদীনি কালাইহাটা মধ্যপাড়া গ্রামের মামুনুর রশিদ প্রামানিকের মেয়ে মাসুদা আকতার। মামলার বিবাদী মাদ্রাসার বর্তমান সভাপতি মৃত নায়েব আলীর ছেলে বেলাল হোসেন, মাদ্রাসার সুপারিন্টেনডেন্ট মৃত গফুর সরকারের ছেলে মোয়াজ্জেম হোসেন, তৎকালীন সভাপতি মৃত আব্দুল কুদ্দুস ফকিরের ছেলে রফিকুল ইসলাম।
বাদীর মামলা সূত্রে জানা যায়, মাদ্রাসার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক তিনি আয়া পদে আবেদন করেন। এক পর্যায়ে মাদ্রাসার তৎকালীন সভাপতি ও সুপারিন্টেনডেন্ট তাকে চাকুরি দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে ১০ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। বাদীনি নিয়োগের জন্য লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। কিন্তু বিবাদী মাসুদা আকতারকে মনোনীত না করে আরও বেশি অংকের টাকার বিনিময়ে অন্য একজনকে চাকুরি দেন। এ ঘটনার পর মাসুদা আকতার গত ৯ ফেব্রুয়ারি বিবাদীদের কাছে ১০ লাখ টাকা ফেরত চান। কিন্তু বিবাদী ৩ জন টাকা ফেরত দিতে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকৃতি জানান। পরে ১১ ফেব্রুয়ারী বালিয়াদিঘী ইউনিয়ন পরিষদে বিবাদীদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। ইউপি কার্যালয় থেকে পরপর তিনটি নোটিশ দেওয়ার পরেও বিবাদীগণ হাজির হন নি।
চেয়ারম্যান ইউনুছ আলী গ্রাম আদালত ও শালিশ নামায় উল্লেখ করেছেন, বাদী কালাইহাটা দাখিল মাদ্রাসায় আয়া পদে চাকুরীর জন্য আবেদন করলে মাদ্রাসার নিয়োগ কমিটি বাদীকে নিয়োগ প্রদান করবে মর্মে মৌখিক ভাবে অঙ্গীকার করেন এবং সরকারি বিধি মোতাবেক নিয়োগ পরীক্ষা ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর বগুড়া ঠনঠনিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় বাদী আয়া পদে অংশগ্রহণ করে প্রথম স্থান অর্জন করেন। পরে নিয়োগ কমিটির সভাপতি বাদীকে নিয়োগ দেওয়ার শর্তে বিভিন্ন অজুহাতে বাদীর জবানবন্দী অনুযায়ী তার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। এমতাবস্থায় বিবাদী রফিকুল ইসলামের সভাপতি পদ বাতিল হয়। বাদী বিবাদীর সথে বার বার যোগাযোগ করলে তারা বাদীকে নিয়োগের জন্য ভূয়া রেজুলেশন করে এবং বাদীকে নিয়োগ করা হয়েছে মর্মে রেজুলেশনের ফটোকপি দিয়ে মিথ্যা শান্তনা দেয়। বাদী নিয়োগপত্র চাইলে বিবাদীরা বিভিন্ন তালবাহানা এবং দুর্ব্যবহার করে। বাদী বিবাদীদের কথাবার্তায় সন্দেহ হলে টাকা ফেরৎ চায়। কিন্তু বিবাদী এখন পর্যন্ত বাদীকে নিয়োগপত্র বা টাকা কোনটায় ফেরৎ দেয়নি। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে দরবার শালিস হয়েছে। এলাকার অধিকাংশ ব্যক্তিই টাকা নিয়ে চাকুরী দেওয়ার বিষয়টি জানে।
মাসুদা আকতার জানান, বালিয়াদিঘী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুছ আলী প্রকাশ্যে ও গোপনে তদন্তপূর্বক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বাদীকে উচ্চ আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন। নিরুপায় হয়ে চাকুরি প্রার্থী মাসুদা আকতার ৩০ আগস্ট আদালতে মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার তৎকালীন সভাপতি রাকিবুল ইসলাম জানান, টাকার পরিমাণটা একটু বেশি শোনা যাচ্ছে। তবে আমি শুধু নামে মাত্র সভাপতি ছিলাম, সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন সুপার সাহেব।
মাদ্রাসার সুপারিন্টেন্ডেন্ট মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, মাসুদা আকতার ইতিপূর্বে মামলা করেছে। মামলা পর্যবেক্ষণ করে বোঝা যাচ্ছে অচিরেই আমাদের পক্ষে রায় আসবে। এজন্য আবার নতুন করে মামলা করেছে। মাসুদার চাকুরীর বিষয়ে তৎকালিক সভাপতির সাথে তাদের যোগাযোগ হয়েছে। টাকা নেওয়ার বিষয়ে আমি সম্পৃক্ত নই।
এদিকে এলাকার সচেতন মহল মাদ্রাসার সুনাম রক্ষার্থে নিয়োগ বাতিল করে স্বচ্ছতার মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছেন।