
চিলাহাটি (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
নীলফামারী জেলার চিলাহাটি স্টেশনের নবনির্মিত আইকনিক ভবনে হস্তান্তরের আগেই ফাটল দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান একাধিকবার সংস্কার করলেও শেষ পর্যন্ত টাইলস পরিবর্তন করে তা ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনাকে ঘিরে এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিদর্শক ফরিদ আহমেদ চিলাহাটি রেল স্টেশন পরিদর্শনকালে স্থানীয়রা আইকনিক ভবনের ফাটল এবং নবনির্মিত ওয়াশরুমের পিলারের ফাটলসহ নিম্নমানের কাজের চিত্র তুলে ধরেন।
স্থানীয় রুবাইয়াত হোসেন, ইসমাইল, সুমনসহ অন্যান্যরা অভিযোগ করেন যে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের রড ব্যবহার করে এবং রাতের আধারে ঢালাইয়ের কাজ করেছে। তারা আরও বলেন, রেলওয়ের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা এ বিষয়ে জানলেও কোনো পদক্ষেপ নেননি।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অফিস সূত্রে জানানো হয়, ইঞ্জিন দাঁড়ানোর কারণে ওই জায়গায় ফাটল ধরতে পারে, তবে স্থানীয়দের দাবি, নিম্নমানের কাজের কারণে ভবনটি ফাটল ধরেছে। অত্যাধুনিক ও ব্যয়বহুল এই ভবনের কাজ শুরু থেকেই কোনো সিটিজেন চাট না দিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের ইচ্ছামতো কাজ করেছে। রেলওয়ের পক্ষ থেকে তদারকির জন্য পাকশী ডিভিশনের প্রকৌশলী-২ আব্দুর রহিমকে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হলেও সিটিজেন সিট নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগিদ দেওয়া হয়নি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সের প্রকল্প পরিচালক নাজমুল হোসেন রকি এ ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি।
স্থানীয়রা আইকনিক ভবনের ফাটল রেলওয়ের প্রকল্প পরিচালক আব্দুর রহিম ও আইডব্লিউ শরিফুল আজিমকে অবহিত করেন। এই খবর পাওয়ার পর, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফাটল জায়গায় উন্নত মানের আঠা দিয়ে তা বন্ধ করে রং লাগিয়ে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে, তবে কিছুদিন পর আবার ফাটল চিহ্ন দেখা দেয়। পরে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফাটলস্থানের টাইলস খুলে ফেলেছে এবং পুডিং করে পুনরায় টাইলস বসানো হয়েছে।
রেলের একটি সূত্র জানায়, চিলাহাটি রেল স্টেশনকে আধুনিকীকরণ করার লক্ষ্যে প্রথম ধাপে ৮০ কোটি এবং দ্বিতীয় ধাপে ১৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের শেষের দিকে কাজ শুরু হয়, এবং ইতিমধ্যে আইকনিক ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে।
এছাড়া, স্টেশন মাস্টার, কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টার ও বুকিং অফিসে এসি স্থাপন করা হয়নি। বর্তমানে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবনটি হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, এবং যেকোনো সময় ভবনটি হস্তান্তর হতে পারে। ইতিমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের মালামাল সরিয়ে ফেলেছে।
ভারত, নেপাল, ভুটান ও চীনের সাথে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপনের জন্য নীলফামারী জেলার চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রেল যোগাযোগ পুনরায় চালু করার জন্য চিলাহাটি রেল স্টেশনকে উন্নত করা হয়েছে।
রেলওয়ের প্রকল্প পরিচালক আব্দুর রহিম বলেন, বিষয়টি জানার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, ভবনের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। মহাপরিদর্শক ফরিদ আহমেদ বলেন, বিষয়টি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে।