Date: May 01, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সারাদেশ / ঢাকা / জুলাই বিপ্লবে গুলিবিদ্ধ রাকিবের মানবেতর জীবনযাপন - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

জুলাই বিপ্লবে গুলিবিদ্ধ রাকিবের মানবেতর জীবনযাপন

March 05, 2025 09:04:02 PM   উপজেলা প্রতিনিধি
জুলাই বিপ্লবে গুলিবিদ্ধ রাকিবের মানবেতর জীবনযাপন

সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি:
বৈষম্যবিরোধী জুলাই আন্দোলনে গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়েছিলেন রাকিব মোল্যা। গুলি তার বুক দিয়ে ঢুকে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে যায়। সবাই ভেবেছিল তিনি মারা গেছেন। কিন্তু কিছু সাহসী মানুষ তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।

ঘটনার পরপরই রাকিবের পরিবার তার মৃত্যুর খবর পেয়ে শোকে ভেঙে পড়ে। বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে যায়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে রাকিবের মা-বাবা তাকে দেখতে ঢাকা রওনা দেন। কিন্তু এখনো সেই গুলিবিদ্ধ রাকিব মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের চরবাংরাইল মোল্যা পাড়া এলাকার ভ্যানচালক মো. হান্নান মোল্যার বড় ছেলে মো. রাকিব মোল্যা (২৪)। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া রাকিব ছিলেন পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী। সাত বছর আগে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় যান এবং একটি মোটরসাইকেল গ্যারেজে কাজ শুরু করেন। যা আয় করতেন, তার বেশিরভাগই বাড়িতে পাঠিয়ে দিতেন পরিবারের ভরণপোষণের জন্য।

রাকিবরা পাঁচ ভাই ও এক বোন। দরিদ্র হলেও রাকিব মেধাবী ছিলেন, তবে অর্থের অভাবে বেশিদূর লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারেননি।

যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়ায় বসবাসকারী রাকিব সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুপুত্রকে দেখতে গ্রামে এসেছিলেন। নয় দিনের শিশুকে রেখে দুদিন পর আবার ঢাকায় ফিরেন তিনি। কারফিউর কারণে দুদিন বাসায় ছিলেন। পরে ২০ জুলাই টিভিতে আন্দোলনের খবর দেখে তিনিও ছাত্র-জনতার সঙ্গে যোগ দেন।

সেদিন ব্রিজের ঢালে অবস্থান করছিলেন রাকিব। হঠাৎ একটি বুলেট এসে তার বুকের ডান পাশ দিয়ে ঢুকে পিঠের বাম পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। পাশে থাকা লোকজন তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে দুপুর দেড়টার দিকে গুলি লাগলেও হাসপাতালে ভর্তি হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়।

বিকেল পাঁচটার পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং আইসিইউতে রাখা হয়। পরে ধীরে ধীরে কিছুটা সুস্থ হন। তিনটি অস্ত্রোপচার করা হয় ঢাকা মেডিকেলে। অবস্থার অবনতি হলে ১৯ আগস্ট তাকে বর্ডার গার্ড হাসপাতাল (বিজিবি) স্থানান্তর করা হয়, যেখানে আরও দুটি অস্ত্রোপচার হয়। পাঁচ মাসের চিকিৎসা শেষে ২০২৫ সালের ৯ জানুয়ারি গ্রামের বাড়িতে ফেরেন রাকিব।

চিকিৎসার সময় উচ্চপর্যায়ের অনেকেই খোঁজ নিয়েছিলেন, সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কেউ আর তার খবর নেননি। আহতদের তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য রাকিব কয়েকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।

গ্রামে ফিরে কোনো কাজ করতে পারছেন না তিনি। ভারী কিছু তুললেই বুকের ভেতর প্রচণ্ড ব্যথা হয়। ছোট্ট সন্তান রাফসানকে (৮ মাস) কোলে নিতে গেলেও যন্ত্রণা অনুভব করেন। রাকিব আক্ষেপ করে বলেন, "বাবা হয়েছি, কিন্তু বাবার কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারছি না। একসময় পরিবারের হাল ধরেছিলাম, আর এখন পরিবারের বোঝা হয়ে গেছি।"

স্থানীয়দের ভাষ্য, রাকিবদের কোনো জায়গা-জমি নেই। মাত্র তিন শতক জমিতে ঘর তুলে তার পরিবার বসবাস করছে। তার বাবা একজন ভ্যানচালক। ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে স্থানীয়রা চাঁদা তুলে একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে রাকিবের বাবা-মাকে ঢাকায় পাঠিয়েছিলেন।

তারা আরও বলেন, “রাকিবের চিকিৎসার খরচ চালাতে পরিবার সবকিছু হারিয়েছে। এখন তার শিশুর খাবার বা ওষুধ কেনারও সামর্থ্য নেই। আমরা দেশবাসীর কাছে রাকিব ও তার পরিবারের জন্য সহায়তা কামনা করছি।”

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনিছুর রহমান বালী বলেন, “জুলাই আন্দোলনে আহত-নিহতদের তালিকা যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। রাকিব প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণসহ আবেদন করলে তার নাম অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”