Date: April 30, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সারাদেশ / রাজশাহী / জয়পুরহাটে হেযবুত তওহীদের ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

জয়পুরহাটে হেযবুত তওহীদের ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

March 09, 2025 07:55:08 PM   জেলা প্রতিনিধি
জয়পুরহাটে হেযবুত তওহীদের ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

জামাল উদ্দিন:
জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার চত্বর হেযবুত তওহীদের প্রধান কার্যালয়ে আজ রবিবার ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে জয়পুরহাট জেলা হেযবুত তওহীদের সভাপতি মাসুদ রানা চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় আমির ও আন্তর্জাতিক প্রচার সম্পাদক মশিউর রহমান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি সওমের মূল উদ্দেশ্য, শিক্ষা এবং বর্তমান বিশ্বে চলমান সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, সওম শব্দের অর্থ হলো আত্মসংযম, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং সংযত থাকা। রোযার প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে মো’মেন ব্যক্তির সারাদিন পানাহার ও জৈবিক চাহিদা পূরণ থেকে বিরত থাকা, আত্মশক্তি বৃদ্ধি করা এবং সর্বোপরি আল্লাহর হুকুম মানার প্রতি অবিচল থাকা।

তিনি বলেন, রমজান সংযমের মাস হলেও বাস্তবতায় দেখা যায়, এ মাসেই মুসলিমদের মধ্যে অপচয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যায়, বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির ফলে দরিদ্র মানুষের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। অথচ রমজানের প্রকৃত শিক্ষা হলো ত্যাগ ও সংযম। আজকাল রোযা যেন কেবল ‘না খেয়ে থাকা’র নামান্তর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে এ পবিত্র ইবাদত। কিছু মানুষ আত্মপ্রচারের আশায় দান-খয়রাত করলেও প্রকৃত অর্থে তাকওয়া অর্জন করতে পারছে না। আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, তাকওয়া সৃষ্টি করাই রোযার মূল লক্ষ্য। কিন্তু যখন এই উদ্দেশ্যই পূরণ হচ্ছে না, তখন আমাদের সারাদিন না খেয়ে থাকার মূল্য কতটুকু?

তিনি আরও বলেন, নবী করিম (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, এমন এক সময় আসবে যখন মানুষ সওম পালন করবে, কিন্তু তা হবে শুধু না খেয়ে থাকা। বর্তমান সময়ে আমরা তারই বাস্তব রূপ দেখতে পাচ্ছি। মানুষের নফস ভোগবাদী, সে দুনিয়ার সম্পদ ও ইন্দ্রিয়সুখ ভোগ করতে চায়। পক্ষান্তরে রোযার শিক্ষা হচ্ছে ত্যাগ, সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণ। মানবতার কল্যাণে কাজ করা, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সংগ্রাম করা হচ্ছে ত্যাগের প্রকৃত বহিঃপ্রকাশ, যা ভোগের ঠিক বিপরীত। এই ত্যাগের মানসিকতা গড়ে তুলতেই সওম ফরজ করা হয়েছে।

তিনি উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ করে বলেন, রোযার নির্দেশ মো’মেনদের জন্য। কিন্তু মো’মেন কারা? তারাই মো’মেন, যারা আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি পূর্ণ ঈমান রাখে, সন্দেহ পোষণ করে না এবং জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করে। প্রকৃত মো’মেনদের জন্যই রোযা, নামাজ, হজ্ব, সব ইবাদত নির্ধারিত। হেযবুত তওহীদ তার অনুসারীদের প্রকৃত মো’মেন হয়ে ওঠার শিক্ষা দিয়ে আসছে।

তিনি বলেন, আজকের পৃথিবীতে ১৬০ কোটি মুসলমানের সংখ্যা থাকা সত্ত্বেও তারা লাঞ্ছিত ও নির্যাতিত। অথচ তাদের হাতে বিপুল পরিমাণ সম্পদ, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং বিশাল জনশক্তি রয়েছে। কিন্তু তারা নিজেদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। মুসলিমদের নামাজ, রোযা ইত্যাদি ইবাদতে ঘাটতি নেই, কিন্তু সত্যিকারের তাকওয়ার অভাব রয়েছে। তাদের দুর্দশা ঘোচাতে হলে সর্বপ্রথম আল্লাহর হুকুম তথা সত্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অন্যায়, অবিচার, দালালাতের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জেহাদ অর্থাৎ আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। ফেরকা, মাজহাব, রাজনৈতিক দল ও বিভেদের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে এসে একক নেতৃত্বের অধীনে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে হবে। হেযবুত তওহীদ সেই ঐক্যের ডাক দিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আসুন আমরা এই পবিত্র রমজানের হক আদায় করি। আমরা অঙ্গীকার করি যে, আল্লাহর বিধান ছাড়া অন্য কোনো বিধান মানবো না, আমরা সবাই এক জাতি হবো, আমাদের নেতা থাকবেন একজন, আমাদের সমাজ হবে শান্তির, যেখানে চুরি, ডাকাতি, ঘুষ, সুদ, দুর্নীতি, নারী নির্যাতন থাকবে না। সবাই একে অপরের পাশে দাঁড়াবে, কেউ অনাহারে থাকবে না। রমজানের প্রকৃত শিক্ষা সমাজে বাস্তবায়ন করার জন্য হেযবুত তওহীদ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের কোনো রাজনৈতিক অভিসন্ধি নেই, কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই। আমাদের সম্পর্কে বিভ্রান্তির শিকার না হয়ে আমাদের কথা ও কর্মসূচি জানুন, আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বুঝতে চেষ্টা করুন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানের প্রকৃত শিক্ষা উপলব্ধি করে তা সমাজে বাস্তবায়ন করার তওফিক দান করুন।

অনুষ্ঠানে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, শুভানুধ্যায়ী এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। ইফতার ও দোয়া মাহফিল শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।