
ঠাকুরগাঁওয়ে প্রেমের ফাঁদে পড়ে অপহরণের শিকার হওয়া মিলন হোসেনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকা দিয়েও তাকে জীবিত ফেরত পায়নি পরিবার। বুধবার দিবাগত রাত ৩টায় ঠাকুরগাঁওয়ের জামালপুর ইউনিয়নের মহেশপুর বিটবাজার এলাকায় অপহরণকারীর বাসার পেছনের পরিত্যক্ত টয়লেট থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত মিলন হোসেন (২৩) ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাঁও চাপাপাড়া এলাকার পানজাব আলীর ছেলে। তিনি দিনাজপুর পলিটেকনিক কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন।
ভোরে বিক্ষুব্ধ জনতা প্রধান অভিযুক্ত সেজানের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট ঘটনাস্থলে গেলেও তাদের আগুন নেভাতে বাধা দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করেন স্থানীয়রা। এ ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিক কলেজের পেছন থেকে নিখোঁজ হন মিলন। একই দিন রাত একটার দিকে ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছে মোবাইলে অপহরণের বিষয়টি জানানো হয়। প্রথমে অপহরণকারীরা ১২ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তিপণের তিন লাখ টাকা দাবি করে। পরে একাধিকবার মুক্তিপণের পরিমাণ বাড়িয়ে একপর্যায়ে ২৫ লাখ টাকা দাবি করে তারা।
মিলনের বাবা পানজাব আলী জানান, পুলিশের কাছ থেকে সন্তোষজনক সাড়া না পেয়ে নিজেই মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করেন। ৯ মার্চ রাত ১০টার দিকে অপহরণকারীরা তাকে ঢাকাগামী ট্রেনে টাকা নিয়ে উঠতে বলে। পরে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে নির্দেশ দেওয়া হয়, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের সেনুয়া এলাকায় চলন্ত ট্রেন থেকে টাকার ব্যাগটি বাইরে ছুড়ে ফেলতে। মিনিট দশেক পর অপহরণকারীরা টাকা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে এবং মিলনকে দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশনে ফেরত দেওয়ার কথা বলে। তবে দীর্ঘ অপেক্ষার পরও মিলনের সন্ধান মেলেনি।
ঠাকুরগাঁও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি মামুনুর রশিদ জানান, বুধবার দিবাগত রাতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মিলনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। অপহরণকারীরা হত্যার দায় স্বীকার করেছে এবং মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকা নেওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, অপহরণকারীদের শনাক্ত করে ফেলায় মিলনকে হত্যা করা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম জানান, অনেক দিন ধরেই তদন্ত চলছিল, তবে কোনো ক্লু পাওয়া যাচ্ছিল না। প্রযুক্তির সহায়তায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন ঠাকুরগাঁও মহেশপুর বিটবাজার এলাকার মতিউর রহমানের ছেলে সেজান আলী (২৬), আরাজি পাইকপাড়া এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে মুরাদ (২৫) এবং মোছাঃ রত্না আক্তার রিভা (১৯)। আরও কেউ জড়িত আছে কিনা, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দ্বিতীয় অভিযুক্ত মুরাদের বাড়িতেও বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে।