
গাজীপুরে বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে টানা তৃতীয় দিনের মতো ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন চলছে। পুলিশ, প্রশাসন, সেনাবাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা বারবার চেষ্টা করেও তিন দিন ধরে চলা এই সমস্যার সমাধান করতে পারছে না।
গাজীপুর মহানগরীর মোগরখাল এলাকায় টিএনজেড গ্রুপের ছয়টি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে শনিবার সকাল থেকে টানা তিন দিন ধরে ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটি অবরোধ করে আছেন।
সোমবার (১১ নভেম্বর) সকালে মোগরখাল এলাকায় গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন এসে তাদের বেতন পরিশোধ করার জন্য সাত দিনের সময় চেয়েছিল, কিন্তু তারা সেটা মানেননি। কারণ গত প্রায় এক মাস ধরে বিভিন্ন সময় তারিখ দেওয়া হলেও মালিক এবং প্রশাসন তাদের কথা রাখতে পারেনি। তাই তারা কোনো কথাতেই আশ্বস্ত হতে পারছেন না। তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ না করা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
জানা গেছে, শ্রমিকরা দ্বিতীয় রাতও মহাসড়কে কাটিয়েছে। তারা পালাক্রমে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে দাবি আদায়ের পক্ষে বিক্ষোভ করছেন। সড়কের পূর্ব পাশে একটি অটোরিকশায় মাইক লাগিয়ে শ্রমিকদের মহাসড়কে অবস্থান করতে বলা হচ্ছে।
এদিকে শ্রমিক অবরোধের কারণে তৃতীয় দিনের মতো গাজীপুর থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে এই মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী হাজার হাজার গণপরিবহন যাত্রী, শ্রমিক, কর্মচারী ও সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা সাধারণ মানুষকে গাজীপুর চন্দনা চৌরাস্তা ও বিকল্প পথ দিয়ে রাজধানী ঢাকায় প্রবেশ করতে হচ্ছে। আর ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া যাত্রীরা বিকল্প পথ দিয়ে গাজীপুর চৌরাস্তা ও চন্দ্রা হয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা ইউনাইটেড পরিবহনের এক চালক জানান, শনিবার সকাল ৯টা থেকে তিনি কলম্বিয়া গার্মেন্টসের উত্তর পাশে এসে আটকা পড়েছেন। ওইদিন যাত্রীরা বাস থেকে নেমে গন্তব্যে চলে গেলেও তিনি এবং তার দুই সহকারী তিন দিন ধরে আটকা পড়ে আছেন। তিনি জানান, রাস্তা বন্ধ থাকায় ঘুরে পেছন দিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। তিন দিন ধরে গোসল ও খাবারের সমস্যা হচ্ছিলো, তবে কোনো উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে গাড়িতেই অবস্থান করছেন।
একইভাবে উত্তরাঞ্চল থেকে মালবোঝাই কাভার্ডভ্যানের চালক ইব্রাহিম হোসেন বলেন, তিন দিন ধরে আটকা পড়ে আছি সড়কে। কোম্পানির মাল ঢাকায় পৌঁছাতে হবে, তবে সড়ক অবরোধের কারণে যেতে পারছি না। খাওয়া ও গোসলের মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ইব্রাহিম খান বলেন, শনিবার আন্দোলনের শুরু থেকেই গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, ক্রাইম ডিভিশন, ট্রাফিক ডিভিশন, শিল্প পুলিশ ও যৌথ বাহিনী সকলে মিলে কলম্বিয়া গার্মেন্টসের সামনে টিএনজেড এর শ্রমিকদের বারবার রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলেছে, তবে তারা যে বেতন পাচ্ছে না, এই দাবিতে তারা অবস্থান নিয়েছে। আমরা মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের বিষয়টি বিজিএমইএ সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করা হচ্ছে। আশা করছি দ্রুতই এর সমাধান হবে।