Date: April 30, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / কৃষি সংবাদ / তাপপ্রবাহে ভয়াবহ সংকটের কবলে মৎস্য ও কৃষিখাত - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

তাপপ্রবাহে ভয়াবহ সংকটের কবলে মৎস্য ও কৃষিখাত

April 28, 2024 08:12:41 PM   জেলা প্রতিনিধি
তাপপ্রবাহে ভয়াবহ সংকটের কবলে মৎস্য ও কৃষিখাত

নজিরবিহীন তাপপ্রবাহে ভয়াবহ সংকটের কবলে পরেছে বরিশালসহ উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্য ও কৃষিখাত। মাঠে থাকা প্রায় চার লাখ হেক্টরের বোরো ধান থোর থেকে ফুলস্তরে থাকায় সেচসহ বিশেষ পরিচর্যার প্রয়োজন এ সময়ে। পাশাপাশি আউশের বীজতলা তৈরী ও রোপনের সময়ও শুরু হয়ে যাওয়ায় মাঠে মাঠে এখন কৃষকের নানামুখি ব্যস্ত থাকার কথা। কিন্তু স্বাভাবিকের চেয়েও প্রায় সাত ডিগ্রী বেশী তাপমাত্রা চলমান থাকায় কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা মাঠেই নামতে পারছেন না। এতে করে একদিকে কৃষকরা উঠতি বোরো ধান নিয়ে যেমন বিপাকে পরেছেন, তেমনি মাঠে কাজ করতে না পেরে বেকার কৃষি শ্রমিকরাও রুজি হারিয়ে মহাসংকটের মধ্যে পরেছেন।

অপরদিকে অব্যাহত তাপ প্রবাহে নদ-নদীর পানিতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে অভিপ্রয়ানী মাছ ইলিশ ক্রমশ গভীর সমুদ্রে চলে যাবার শঙ্কা তৈরী হয়েছে। অভয়াশ্রম বহির্ভূত নদ-নদীতে জেলেদের নিরাপদ মৎস্য আহরণও প্রায় বন্ধ রয়েছে অব্যাহত তাপপ্রবাহের কারণে। ফলে ইতোমধ্যে বাজারে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ সরবরাহ হ্রাস পেয়েছে। মাঠে আর নদীতে কাজ করতে গিয়ে ইতোমধ্যে বরিশাল অঞ্চলের বেশ কয়েকটি স্থানে কৃষক ও কৃষি শ্রমিকসহ জেলেরা অসুস্থ হয়ে পরেছেন।
বৈশাখের শুরু থেকে অদ্যবর্ধি অব্যাহত তাপ প্রবাহে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপন্ন হবার সাথে কৃষি ও মৎস্য সেক্টর ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পরেছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বরিশাল অঞ্চলে বোরো ধান কর্তন শুরুর হবার কথা। কিন্তু অব্যাহত তাপ প্রবাহে সময়মত বোরো কর্তন নিয়ে শংকিত বরিশালের কৃষি যোদ্ধারা। সূত্রমতে, গ্রীস্মের শুরুর এসময়ে বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসের স্থলে ইতোমধ্যে ৩৯.২ থেকে ৪০.২ ডিগ্রী সেলসিয়াসেও উঠে গেছে। আবহাওয়া বিভাগ থেকে আগামী কয়েকদিন দিনের তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। অব্যাহত এ তাপপ্রবাহের সাথে বরিশালে বৃষ্টির দেখা মিলছেনা।

আবহাওয়া বিভাগের মতে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই বরিশালে বৃষ্টিপাতের পরিমান স্বাভাবিকের অনেক নিচে রয়েছে। গত মাসেও বরিশালে স্বাভাবিকের ৩০% কম বৃষ্টি হয়েছে। চলতি মাসেও স্বাভাবিক অপেক্ষা কম বৃষ্টিপাতের খবর জানিয়ে বরিশালে ১২০ থেকে ১৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হলেও মাসের ২৮দিনে সর্বমোট বৃষ্টিপাতের পরিমান মাত্র ২২ মিলিমিটারের মতো। ফলে বোরো ধানে বাড়তি সেচ প্রয়োগে উৎপাদন ব্যয় বাড়ার সাথে সাথে অব্যাহত তাপ প্রবাহের সাথে বৃষ্টিপাতের সংকটে নদ-নদীর পানির উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

একইসাথে এ অঞ্চলে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টন চাল পাবার লক্ষ্য নিয়ে ২.৪০ লাখ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদে বীজতলা তৈরীর সময় অতিক্রান্ত হতে চললেও বৃষ্টির অভাবে বীজতলা প্রস্তুত বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তেমনি নজিরবিহীন অস্বাভাবিক তাপ প্রবাহে কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা মাঠে নামতে না পারায় এবার বরিশালে সময়মত আউশের আবাদ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এদিকে অব্যাহত তাপপ্রবাহের সাথে প্রখর রোদের কারণে জেলেরাও নদ-নদীতে মৎস্য আহরণ থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। এমনকি চলমান তাপ প্রবাহ অব্যাহত থাকলে বরিশালের অভ্যন্তরীণ ও উপকূল অভ্যন্তরের নদ-নদী থেকে ইলিশের ঝাক গভীর সমুদ্রে চলে যাবারও আশঙ্কা করছেন মৎস্য বিশেষজ্ঞরা।

মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, এসময়ে নদ-নদীতে পানির তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কথা বললেও তা ইতোমধ্যে ৩৬ ডিগ্রী অতিক্রম করায় পরিস্থিতি ইলিশসহ অনুরুপ মাছের জন্য অনুকূল নয়। সূত্র মতে, ইলিশ মাছের মাথায় ‘কেমো সার্ভার অর্গান’ রয়েছে, যা দ্বারা তারা নদ-নদীর তাপমাত্রা ও গভীরতাসহ সম্পূর্ণ পরিবেশ বুঝতে পারে। ইলিশ কখনোই তার জন্য প্রতিকূল পরিবেশে বসবাস করেনা। ফলে বর্তমান তাপ প্রবাহ অব্যাহত থাকলে অভিপ্রায়নী মাছ ইলিশের সাগরমুখি হবার প্রবনতা তরান্বিত হতে পারে।

এসব কারণে বরিশাল অঞ্চলের বাজারে গত ১৫ দিনেরও বেশী সময় ধরে ইলিশসহ নদ-নদীর মাছের সরবরাহে ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগের উপ-পরিচালক নৃপেন্দ্র নাথ বিশ^াস বলেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করে জেলেদের সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে আসছি।