
শেখ হাসিনার ছাত্র সমাজের উদ্দেশে ভাষণের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন থেকে শুরু হয় হামলা-ভাঙচুর। পরবর্তীতে তা দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এই দুই দিন ধরে চলমান ঘটনাগুলো নিয়ে সরকারের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এ ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য অনেকেই ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়ী করছেন। কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, বাংলাদেশের ভেতরে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে তা বহির্বিশ্বে প্রদর্শন করার উদ্দেশ্যে এটি একটি পরিকল্পিত পদক্ষেপ।
এদিকে, শেখ হাসিনার নাম দিয়ে বিশৃঙ্খলাকে 'জায়েজ' করা হচ্ছে বলেও এক পক্ষের মত। তবে, এসব ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হলে তা দেশের অস্থিতিশীলতা বাড়াতে পারে এবং বহির্বিশ্বের কাছে নেতিবাচক বার্তা যেতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন বিশিষ্টজনেরা।
বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা বৃহস্পতিবারও চলতে থাকে। শুক্রবারেও দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাসভবনে লুটপাটের খবর পাওয়া যায়। এই অস্থিতিশীলতার কারণ হিসেবে শেখ হাসিনাকে দায়ী করার পাশাপাশি, জুলাই মাসের হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু না হওয়ার কারণে জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ এবং অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা মনে করেন, ভাঙচুর ও ক্ষোভের পেছনে গভীর কারণ রয়েছে, যা খুঁজে দেখা প্রয়োজন। তিনি বলেন, "এই কমিউনিটি বারবার প্রতারিত হয়েছে, এবং তারা বিচার আশা করলেও বিচার না পেয়ে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের মধ্যে।"
এদিকে, মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেনও একই মত পোষণ করেন। তার মতে, চলমান বিশৃঙ্খলার মূল কারণ গণহত্যা ও নৈরাজ্যের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের বিলম্ব এবং আন্দোলনে আহত ও নিহতদের পরিবারের সংগ্রাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা এবং দার্শনিক ফরহাদ মজহার মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতি দেশের জন্য বড় সংকেত বহন করছে। ফরহাদ মজহার বলছেন, "জনগণের মধ্যে গভীর অসন্তোষ ঘটছে, যা অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে।"
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, "সরকারের কোনো ভূমিকা না থাকলে, এটি গণহত্যার পরিণতি হতে পারে।"
বিশেষজ্ঞদের মতে, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনটি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সুতরাং, সরকারের উচিত ছিল এটি রক্ষা করা, তবে সরকারের শিথিলতা এ ঘটনায় ক্ষোভ বাড়িয়েছে। অধ্যাপক সামিনা লুৎফা মনে করেন, "সরকারি প্রোপার্টি হিসেবে কিংবা বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ হিসেবে এটি রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের ছিল।"
কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দেশের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছেন, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। লেখক ফাহাম আবদুস সালামও এ মত প্রকাশ করেছেন, "শেখ হাসিনা এসব কাজ করছেন যাতে ভারতের কাছে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল দেখানো যায়।"
এ ঘটনার সময় সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে তা হলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা। দেশব্যাপী চলমান হামলা ও ভাঙচুরে সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো কার্যকর ভূমিকা নেননি। অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, "সরকারি বাহিনী থাকার পরেও ভাঙচুর থামাতে দেখা যায়নি।"
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনা হয়, তবে এটি দেশের ভবিষ্যতের জন্য বিপদজনক হতে পারে।