
আল্লাহ মানবজাতিকে হেদায়াহ দেওয়ার জন্য বাবা আদম থেকে শেষ নবী পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ নবী-রসুল পাঠিয়েছেন। পূর্ববর্তী নবী-রসুলগণ এসেছেন যার যার অঞ্চল, সম্প্রদায়, জাতি এমনকি পরিবারের জন্যও। কিন্তু সর্বশেষ যিনি এসেছেন, আখেরী নবী মোহাম্মদ (সা.), তাঁর আগমন সমস্ত মানবজাতির জন্য। তিনি বলেছেন, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর প্রেরিত রসুল (আরাফ: ১৫৮)।’ সমস্ত মানবজাতির জন্য প্রেরিত হয়েছেন বলে তাঁর উপাধি হলো ‘রহমাতাল্লিল আলামিন’ (আম্বিয়া: ১০৭) অর্থাৎ সারা বিশ্বের জন্য রহমত। এই যে তিনি সারা বিশ্বের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে আবির্ভূত হলেন, তিনি কী নিয়ে আসলেন, কেনই বা আসলেন, তাঁর নবুয়তি জিবনীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো বিষয়টিকে এক নজরে দেখা ও বোঝার নামই হচ্ছে রসুলাল্লাহ সম্পর্কে আকিদা।
আজ বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান বিশ্বাস করছেন আখেরী নবী মোহাম্মদ (সা.) সত্যিই আল্লাহর প্রেরিত নবী, কিন্তু তাঁর সামগ্রিক জীবন সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকায় অর্থাৎ আকিদা না জানায় একেকজন একেকভাবে তাঁর সম্পর্কে ধারণা করে নিচ্ছেন। আল্লাহর রসুল সশস্ত্র জিহাদ করেছেন। ব্যস, এই উদ্ধৃতি দিয়ে একদল মানুষ জিহাদের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে পড়ছেন। আল্লাহর রসুল কেন জিহাদ করেছেন, কখন করেছেন ইত্যাদি সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান তাদের নেই। আরেকদল ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখলেন যে, ‘আল্লাহর রসুল রাষ্ট্রচালনা করেছেন।’ ব্যস, তারা পাশ্চাত্যের তৈরি প্রক্রিয়ায় রাজনীতি শুরু করে দিলেন। ওদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ নামাজ, রোজা, দোয়া-কালাম, জিকির আজকার ইত্যাদিকেই ইসলাম বলে সাব্যস্ত করে নিয়েছে। তাদের জিহাদ, রাষ্ট্র, আইন, কানুন, দণ্ডবিধি, অর্থনীতি ইত্যাদি নিয়ে মাথাব্যথা নেই। তাদের ধারণা শুধু নামাজ পড়েই তারা এত সওয়াব কামিয়ে ফেলবেন যে, জান্নাত অবধারিত হয়ে যাবে। অন্য কিছুর দরকার নেই।
এই যে আল্লাহর রসুলের ঘটনাবহুল জীবনী থেকে একেকজন একেক পাতা ছিঁড়ে নিয়ে সেটাকেই আল্লাহর রসুলের সংগ্রামী জীবনের একমাত্র দিক বলে গ্রহণ ও প্রচার করছেন, এটা সম্ভব হচ্ছে কারণ যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আল্লাহর রসুল সংগ্রাম করেছিলেন; জাতির সামরিক, অর্থনৈতিক, আধ্যাত্মিক, বিচারিক ইত্যাদি বিভিন্ন অঙ্গনে গতিশীল পদচারণা করেছিলেন, সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য জাতি হারিয়ে ফেলেছে। ফলে সামগ্রিকভাবে আল্লাহর রসুলের কর্মকাণ্ডকে বোঝা তাদের পক্ষে সম্ভব না হওয়ায় তারা রসুলাল্লাহকে জানছেন খণ্ডিতভাবে এবং সেটাকেই রসুলাল্লাহর আগমনের উদ্দেশ্য বলে চালিয়ে দিচ্ছেন।
এদিকে রসুলাল্লাহর জীবনীর সাথে যেহেতু পবিত্র কোর’আন ওতোপ্রোতভাবে জড়িত, কাজেই যখন কেউ রসুলাল্লাহর জীবনীকে খণ্ডিতভাবে ব্যাখ্যা দেয়, তখন তাকে পবিত্র কোর’আনেরও খণ্ডিত ব্যাখ্যা দিতে হয়। তাই করা হচ্ছে। প্রত্যেক ফেরকার কিছু পছন্দনীয় আয়াত আছে। কোর’আনের সামগ্রিক আকিদা জানা না থাকায় যেটুকু নিজেদের ফেরকার সাথে বা দলের সাথে বা মতের সাথে মিলছে- প্রত্যেকে সেটুকুই জোরেশোরে প্রচার চালাচ্ছেন আর অন্যান্য আয়াতগুলো আলোচনার বাইরে রেখে দিচ্ছেন। তারা ভুলে যাচ্ছেন আল্লাহর সতর্কবার্তা যেখানে তিনি বলেন, যারা কোর’আনকে খণ্ড খণ্ড করেছে, আপনার পালনকর্তার কসম, আমি অবশ্যই ওদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করব, ওদের কৃতকর্ম সম্পর্কে। (সুরা হিজর ৯০-৯৩)।
একজন মানুষ বলতে আমরা কী বুঝব? মাথা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত সমগ্রটা নিয়ে একজন মানুষ। যদিও পা তার দেহেরই অঙ্গ কিন্তু দেহ থেকে পা আলাদা করে নিলে সেই পা’কে আর মানুষ বলা যায় কি? যায় না। কিন্তু সেটাই বলা হচ্ছে ইসলামের বেলায়। একটি শ্রেণির দিকে তাকালে মনে হয় আল্লাহর রসুল এসেছেন মানুষকে শুধু মেসওয়াক করাতে, ডান কাতে শোয়াতে, খাওয়ার পরে মিষ্টি খাওয়াতে। আরেকদিকে তাকালে মনে হয় আল্লাহর রসুল এসেছেন বিধর্মীদের কতল করাতে। কারো দিকে তাকালে মনে হয় তিনি এসেছেন রাজনীতি শেখাতে। একইভাবে এক শ্রেণির দিকে দেখলে মনে হয় তাঁর আগমনের উদ্দেশ্য আর কিছুই নয়, সুফি দরবেশ, নামাজি, রোজাদার, হাজী সাহেব তৈরি করা। সমাজের অন্যায় অবিচার যাই হোক ওদিকে না তাকিয়ে ব্যক্তিগত আমল করে যাওয়া বা বিভিন্ন তরিকায় আত্মার ঘষামাজা করাই ছিল তাঁর মূল কাজ ছিল!
এই বহুমুখী দৃষ্টিভঙ্গি ও দিক-নির্দেশনার কারণে জাতি আজ বিভিন্নদিকে ছুটে চলেছে এবং তারা একে অপরকে বাতিল ও পথভ্রষ্ট বলে মনে করছে। যেমন যারা রসুলের জীবনের হাজারো শিক্ষা থেকে বেছে বেছে মেসওয়াককে গ্রহণ করেছেন কিন্তু দীন প্রতিষ্ঠার জেহাদকে বর্জন করেছেন। যারা আধ্যাত্মিকতাকে আঁকড়ে ধরেছেন তারা রাজনীতিকারীদের পছন্দ করেন না। বিপরীত দিক থেকেও একই কথা। অথচ এটা ইতিহাস যে, আল্লাহর রসুল যেমন সমস্ত নির্যাতন অপমান গায়ে না মেখে তওহীদের দিকে মানুষকে আহ্বান করেছেন, তেমনি শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধও করেছেন, প্রশিক্ষণ দিয়ে দুর্ধর্ষ যোদ্ধা জাতি তৈরি করেছেন, ক্ষমার অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, কুসুমের মত কোমলতা প্রদর্শন করেছেন, আবার পাথরের মত শক্ত ও পাহাড়ের মত অটল থেকে অপরাধীকে কঠোর দণ্ডও দিয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার প্রস্তাবকে দুই পায়ে ঠেলে দিয়েছেন, অর্থাৎ রাজনীতিকে উপেক্ষা করে গেছেন, আবার একটি পর্যায়ে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বও পালন করেছেন, বিচার ফয়সালা করেছেন। শুধু তাই নয়, জাতির চারিত্রিক উন্নতির জন্য বিভিন্ন ধরনের আত্মশুদ্ধিমূলক শিক্ষাও তিনিই দিয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, কোনটা কখন কীভাবে এবং কেন?
এই প্রশ্নের উত্তর মুসলিমদেরকে অবশ্যই জানতে হবে। কারণ, এর উত্তর জানাই আকিদা, যেই আকিদা ছাড়া ঈমান ও আমল সমস্তকিছুই নিষ্ফল হয়ে যায়। উদ্দেশ্য না জেনে না বুঝে ‘আল্লাহ বলেছেন তাই তাঁর সন্তুষ্টির জন্য করে যাচ্ছি’ এমন চিন্তা থেকে কোনো কাজ করলে আল্লাহ কখনও তার বিনিময় দিবেন না। আল্লাহর রসুল (দ.) বলেছেন, ‘কোন মানুষ নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, ওমরা (ইবনে ওমর (রা.) উল্লেখ করছেন যে ঐগুলি তিনি একে একে এমনভাবে বলতে লাগলেন যে, মনে হলো কোন সওয়াবের কথাই তিনি বাদ রাখবেন না) ইত্যাদি সবই করলো, কিন্তু কিয়ামতের দিন তার আকলের বেশি তাকে পুরস্কার দেয়া হবে না (ইবনে ওমর (রা.) থেকে- আহমদ, মেশকাত।) রসুলাল্লাহ (দ.) শব্দ ব্যবহার করেছেন আকল, যে শব্দটাকে আমরা বাংলায় ব্যবহার করি ‘আক্কেল’ বলে, অর্থাৎ মানুষের বুদ্ধি, বোধশক্তি, সাধারণজ্ঞান, যুক্তি ইত্যাদি। ইসলামের বহু বিধান রয়েছে- নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত, জিহাদ, কিতাল ইত্যাদি। মনে করুন এই বিধানগুলোকে একেকটি ফুল। আর ইসলামকে মনে করুন সেই ফুলগুলো দিয়ে তৈরি মালা। ফুলগুলোকে যতক্ষণ না একটি সুতো দিয়ে একত্রে গেঁথে সেই সুতোটি গিঁট দেওয়া হবে ততক্ষণ কি সেটা মালা হতে পারবে? পারবে না। এই সুতোর গিঁটটাই হচ্ছে আকিদা। আমরা বিয়ের ব্যাপারে ‘আকদ’ শব্দটি ব্যবহার করি একজন পুরুষের সাথে একজন নারীর ‘সংযোগ করে দেওয়া’ বোঝাতে। অর্থাৎ যে জ্ঞান বা ধারণার মাধ্যমে ইসলামের সমস্ত বিধান, সমস্ত বিশ্বাস, সমস্ত রীতি-নীতি এবং আল্লাহর রসুলের সংগ্রামী জীবনের সমস্ত কর্মপ্রক্রিয়া পরস্পরের সঙ্গে একটি সূত্রে সমন্বিত থাকে সেটাই আকিদা।
আজকে আমাদের সমাজে মসজিদ ভর্তি মানুষ নামাজ পড়ছে, লক্ষ লক্ষ লোক হজ্ব করতে যাচ্ছে, রমজান মাসে রোযা রাখছে, ঈদের দিনে উৎসব করছে, আবার কথিত জিহাদও করছে, কিন্তু এই বিধানগুলোর একটির সাথে আরেকটির কী সম্পর্ক তা কেউ জানে না। কোন আমলের পূর্বশর্ত কোনটা তাও তাদের অজানা। তারা নামাজ পড়ছে কিন্তু নামাজের উদ্দেশ্য অজানা। লাখ লাখ টাকা খরচা করে হজ্ব করতে যাচ্ছে কিন্তু জানে না হজ্বের উদ্দেশ্য কী। জিহাদের নামে শরীরে বোমা বেঁধে আত্মঘাতী হয়ে যাচ্ছে কিন্তু জানে না সেটা আসলেই জেহাদ হচ্ছে না প্রাণের অপচয় হচ্ছে। তারা জানে না নামাজের সাথে জিহাদের সম্পর্ক কী, আবার জিহাদের সাথে তওহীদের সম্পর্ক কী। অর্থাৎ ফুল অনেক থাকলেও সেগুলো কেবলই ছিন্নবিচ্ছিন্ন ফুল। সেই ফুল কখনও মালা হয়ে উঠে নি। আর যতক্ষণ এই ফুলগুলো একত্রে গ্রন্থিত হয়ে মালা তৈরি না হয় ততক্ষণ সেটা বিশ্বনবীর ইসলাম হয় না। এ কারণে আমাদের সমাজে ইসলাম বলে যেটা পালিত হচ্ছে বাইরে থেকে দেখতে সেটা আল্লাহ-রসুলের প্রকৃত ইসলামের মত মনে হলেও আদতে সেটা আল্লাহ-রসুলের প্রকৃত ইসলাম নয়, তার বিপরীত একটা কিছু। এবং এই জাতি তাদের বিকৃত ধারণায় আল্লাহর রসুলকে যেমনটা কল্পনা করে থাকে সেটাও ভুল। কেউ মনে করে আল্লাহর রসুল একজন জুবুথুবু বৃদ্ধ বুজুর্গ, কেউ মনে করে তিনি একজন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা, কেউ মনে করে তিনি একজন মাদ্রাসার শিক্ষক বা মসজিদের ইমাম। কিন্তু আল্লাহর রসুলকে প্রকৃতরূপে জানতে হলে অবশ্যই আল্লাহর রসুলের আগমনের উদ্দেশ্য ও সংগ্রামী জীবনের আকিদা জানা থাকা অপরিহার্য। সেই সামগ্রিক ধারণা জাতির নেই, আছে বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত কিছু খণ্ডিত ধারণা যা দিয়ে আল্লাহর রসুলকে বোঝা অসম্ভব।
একটি গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ থাকে। যার গাড়ি সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেই তাকে যদি গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ দিয়ে সেগুলো সংযুক্ত করতে বলা হয় তিনি কি পারবেন? সাধারণ জ্ঞানেই বোঝা যায়, তিনি ব্যর্থ হবেন এবং চূড়ান্তভাবে একটি গাড়ির যে উদ্দেশ্য থাকে অর্থাৎ মানুষকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া সেই লক্ষ্যও ওই ব্যক্তিকে দিয়ে অর্জিত হবে না। ১৪০০ বছরের কালপরিক্রমায় এক আল্লাহ, এক রসুল, এক কিতাবের অনুসারী এক জাতিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গাড়ির যন্ত্রাংশের মতই ভেঙে আলাদা আলাদা করা হয়েছে এবং শুধু তাই নয়, আজ বিভিন্ন ফেরকা, মাজহাব, তরিকা, দল উপদল ইত্যাদি ওই ভাঙা গাড়ির ভিন্ন ভিন্ন অংশকেই ‘গাড়ি’ মনে করছেন। গাড়ির যে কাজ সেটা তো লুকিং গ্লাস দিয়ে হাসিল করা যায় না, হোক সেটা গাড়ির অংশ। অথচ সেটাই করার চেষ্টা হচ্ছে। কেউ অতি নিখুঁতভাবে গাড়ির চাকা পরিষ্কার করছেন, ইঞ্জিন পরিষ্কার করছেন, লুকিং গ্লাসের ধুলোবালি মুছছেন, ক্যাসেট প্লেয়ার মেরামত করছেন এবং মনে করছেন খুব সওয়াবের কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু সম্যক ধারণা নেই বলে সমস্ত যন্ত্রপাতি সংযুক্ত করে যে গাড়িটির পূর্ণাঙ্গতা দিবেন এবং তারপর সেই গাড়িটি চালিয়ে গন্তব্যস্থলে যাবেন সেটা কেউ করছেনও না, জানছেনও না।
আল্লাহর রসুলের সংগ্রামী জীবনের লক্ষ্য (আকিদা) ভুলে গিয়ে লক্ষ্য অর্জনের বিভিন্ন প্রক্রিয়াকেই আজ লক্ষ্য বানিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং তার পরিণতি হয়েছে ভয়াবহ। আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে মুসলমান জাতি। সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের দেশগুলো একের পর এক ধ্বংস করে ফেলছে, গণহত্যা চালাচ্ছে। লক্ষ লক্ষ নারী ধর্ষিতা হচ্ছে। কোটি কোটি মুসলমান আজ উদ্বাস্তু। কিন্তু জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে এই আগ্রাসন যে মোকাবেলা করবে সেটা ভাবতেও পারছে না। কোথাও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছে না। এ অবস্থায় জাতির করণীয় ছিল দুইটি- প্রথমত নিজেদের মধ্যে যাবতীয় মতভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং দ্বিতীয়ত আল্লাহর রসুলের সংগ্রামী জীবনকে সামগ্রিকভাবে উপলব্ধি করে তিনি যেই কর্মপন্থায় যেই লক্ষ্যে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন সেই কর্মপন্থা মোতাবেক সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়া। কিন্তু হায়! ঐক্যবদ্ধ হবার সমস্ত পথই যে বন্ধ। দীনের প্রকৃত আকিদা ভুলে গিয়ে, আল্লাহর রসুলের আগমনের উদ্দেশ্য ভুলে গিয়ে, ঐক্যসূত্র তওহীদের রশি ছেড়ে দিয়ে, শতাব্দীর পর শতাব্দী ছোট-খাটো বিভিন্ন আমল নিয়ে তর্ক, বাহাস, মারামারি ইত্যাদিতে লিপ্ত থেকে ঐক্যের সমস্ত দরজাতেই তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর দীনের ছোট খাটো কম প্রয়োজনীয়, এমনকি অপ্রয়োজনীয় বিষয়েও বাড়াবাড়ি রকমের অতি বিশ্লেষণ করতে করতে ছোট খাটো বিষয়ের মধ্যেই জাতির দৃষ্টিভঙ্গি এমনভাবে নিবদ্ধ হয়ে গেছে যে, সেখান থেকে মাথা তুলে এক নজরে আল্লাহর রসুলের সামগ্রিক জীবনটাকে দেখার ও উপলব্ধি করার সক্ষমতা তাদের নেই। এমতাবস্থায়, এই জাতির ঐক্যের সূত্র কী হতে পারে এবং আল্লাহর রসুল কীজন্য আবির্ভূত হয়েছিলেন, কী লক্ষ্যে সংগ্রাম করেছেন এবং জাতির উপর কী দায়িত্ব অর্পণ করে গেছেন, তা জাতির সামনে তুলে ধরাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। হাজারো বিকৃতি ও মতভেদের চাদরে আবৃত আল্লাহ-রসুলের প্রকৃত ইসলামের যে আকিদা তা আবার জাতির সামনে উন্মোচিত করতে হবে। যদি জাতি এখনও ইসলামের প্রকৃত আকিদা উপলব্ধি করতে পারে, তাহলে এখনও ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব।
[লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট; যোগাযোগ: ০১৭১১৫৭১৫৮১, ০১৭১১০০৫০২৫, ০১৬৭০১৭৪৬৪৩]