Date: April 30, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / বিশেষ নিবন্ধ / নারীরা কেন পত্রিকা বিক্রি করেন? - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

নারীরা কেন পত্রিকা বিক্রি করেন?

July 01, 2024 02:49:21 PM   অনলাইন ডেস্ক
নারীরা কেন পত্রিকা বিক্রি করেন?

রুফায়দাহ পন্নী
হেযবুত তওহীদের মেয়েরা কেন রাস্তায় বই বিক্রি করে, পত্রিকা বিক্রি করে, কেন তারা সভা সমাবেশে অংশ নেয়- এই প্রশ্নের জবাবে তাত্ত্বিক আলোচনায় না গিয়ে সরাসরি বলব, অস্ত্রব্যবসায়ী পশ্চিমা পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর ষড়যন্ত্রে মুসলমানসহ গোটা মানবজাতি আজ হুমকির মুখে। আমাদের সমাজও আজ ভয়াবহ অন্যায় অশান্তিতে নিমজ্জিত।  আমাদের কারও ভবিষ্যতই নিরাপদ নয়। এই বিষয়টা হেযবুত তওহীদের নারী-পুরুষ সবাই সমানভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছে। তারা আরো বুঝেছে, দেশ আক্রান্ত হলে, সমাজ ধ্বংস হলে নারীরা ঘরের ভেতর কালো বোরখা পেচিয়েও আত্মরক্ষা করতে পারবে না। এই সমাজে তিন বছরের শিশু থেকে ষাট বছরের বৃদ্ধা পর্যন্ত ধর্ষিত হয়।

আমরা মনে করি, এমন একটি সংকটকালে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেকের দায়িত্ব হয়ে পড়েছে যার যার অবস্থান থেকে এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। হেযবুত তওহীদের নারী ও পুরুষরা সেটাই করছে। যারা মানবজাতির মহাবিপদ আঁচ করতে পারেনি, দাজ্জালকে চেনেনি, যারা উপাসনালয়ের চার দেয়ালের ভেতর থেকে নিজেদের দৃষ্টি বাইরে পর্যন্ত বিস্তৃত করতে পারেনি, তারা মসজিদ- মাদ্রাসা কিংবা হুজরার জানালা দিয়ে মুখ বের করে নারীরা কেন মাঠেঘাটে সেই প্রশ্ন তুলতেই পারে। কিন্তু যারা বাস্তব জগতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন তারা এই প্রশ্ন না করে এই আত্মত্যাগী নারীদেরকে সেলুট জানাতে বাধ্য হবেন। তারা বুঝবেন যে, হেযবুত তওহীদের নারীরা নিজেদেরকে পণ্য বানাতে বের হননি, তারা বের হয়েছেন মানুষের কল্যাণে, নিজেদের ঈমানের দাবিতে। তারা এক মহান সংগ্রামের অংশীদার। এরা ভালো পরিবারের মেয়ে, শিক্ষিতা রুচিশীল সম্ভ্রান্ত। অনেকের বয়স পঞ্চাশ ষাট পেরিয়েছে, অনেক কিশোরী তরুণী। আমাদের সমাজে নারীদেরকে রাস্তায় বেরোলে বহু অবমাননাকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়, এটা জেনে বুঝে, মানুষের কটূক্তি, বাঁকা দৃষ্টি উপেক্ষা করার মনোবল নিয়েই তারা এই সংগ্রামের পথে নেমেছেন। যদি এ কাজকে তারা নিজেদের কর্তব্য বলে জ্ঞান না করতেন তবে প্রচুর অর্থ বা কোনো কিছুর বিনিময়েই তাদেরকে মাঠে নামানো যেত না। আমি বলব, যারা প্রশ্ন তুলছেন ‘নারীরা’ কেন মাঠেঘাটে- মূলত সেই অংশটারই এই সমাজ পরিবর্তনের জন্য মাঠে থাকার কথা ছিল। কিন্তু তারা আত্মকেন্দ্রিক জীবনযাপন করছেন আর অন্যদের দোষত্রুটি খুঁজে বেড়াচ্ছেন।

এই সংকটকালে এই যুগসন্ধিক্ষণে ভুল সিদ্ধান্ত নিলে সেই ভুলের মাশুল আর দেওয়া সম্ভব হয় না। কথায় আছে, সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়। শাস্ত্রকানারা পর্দার কথা তুলবে, তারা নারীদেরকে ঘরে আবদ্ধ থাকার কথা বলবে। নাকমুখ ঢেকে, হাতমোজা, পা মোজা পরে বসে থাকার কথা বলবে। কিন্তু এসবের পরেও কি তারা নারীদের সুরক্ষিত থাকার গ্যারান্টি দিতে পারবে? না, পারবে না। তারা স্বভাবে ঘরকুনো কাপুরুষ, অন্তর্মুখী। তাদের চরিত্র বীরের চরিত্র নয়। ইরাকেও তাদের চাইতে ভালো ধার্মিক ছিল, সিরিয়ায়ও ছিল, মায়ানমারেও ছিল। ওসব দেশের নারীরা আমাদের দেশের নারীদের চেয়েও বেশি বোরকা পরত, পর্দা করত। কিন্তু তাদের পুরুষরা তাদেরকে রক্ষা করতে পারেনি। এরাও পারবে না। সুতরাং নারীদের চিন্তা নারীদেরকেই করতে হবে। আজকে গুটিশুটি হয়ে ঘরে বসে থাকলে কাল ঘর থেকে তুলে নিয়ে যাবে। সিরিয়া, ফিলিস্তিনের নারী পুরুষরা পালিয়ে বাঁচার জন্য বাধ্য হয়েছে সাগরে ভাসতে। যারা ডুবে মরেনি তারা শরণার্থী শিবিরে অমানবিক জীবনযাপন করছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসাবে আমাদের উপরও এমন আঘাত আসতে পারে। তখন আমাদের নারীদেরও সেই ভাগ্য বরণ করা লাগতে পারে। আমাদের তিনদিকে তারকাঁটার বেড়া, খোলা শুধু বঙ্গোপসাগর। সুতরাং ঘর থেকে যেহেতু বের হতেই হবে, বের না হলে ঘর থেকে জোর করে বের করা হবে সেহেতু আগেই বেরিয়ে যদি বাঁচা যায়, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে জাগানো যায় তবে সমস্যা কোথায়?

কোর’আনের আয়াত অনুযায়ী নারীদের বাইরের জনসমাগমে চলায় নিষেধাজ্ঞা নেই। শালীন পোশাক পরে তারা যে কোনো কাজে পুরুষের সাথে অংশ নিতে পারে। রসুলাল্লাহর জীবদ্দশায় এবং তার পরেও নারীরা যুদ্ধে গেছে। সাধারণত তারা দ্বিতীয় সারিতে থেকে রসদ সরবরাহ ও চিকিৎসা সেবা দিতেন, কিন্তু কেনো কোনো সময় তলোয়ার হাতেও তারা বীরাঙ্গনার বেশে আবির্ভূত হয়েছেন, শত্রুদেরকে তাঁবুর খুঁটি দিয়ে পিটিয়েছেন। যুদ্ধে পুরুষদের পিঠ দেখানোর ইতিহাস আছে, নারীদের নেই।

যুদ্ধের ময়দানে নারীদের এমন এমন ভূমিকা রয়েছে যেগুলো জানলে কোনোভাবেই মনে হবে না যে- ইসলাম কেবল নারীকে অন্তপুরের বাসিন্দা বানানোর কথা বলে। তবে এর মানেই এই নয় যে জাহেলিয়াতের মতো এখন নারীদেরকে বেহায়াপনায় জড়াতে হবে। আল্লাহ অশ্লীলতা ও বেহায়াপনাকে নিষেধ করেছেন। তবে দীনের পথে সংগ্রামে তিনি নিষেধাজ্ঞা দেননি। সেখানে নারী-পুরুষ সকলের প্রতি দায়িত্বের কথা তুলে ধরেছেন। তাছাড়া বুঝতে হবে এটা স্বাভাবিক সময় নয়, এটা জরুরি সময়, অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্নের সময়। এই মুহূর্তে পর্দার নামে বাড়াবাড়ি করা অনুচিত। তারপরও যদি এই মহৎ সংগ্রামে নেমে একটু এদিক সেদিক যদি হয়ে যায়, তবে অবশ্যই আল্লাহ ক্ষমাশীল, গাফুরুর রহিম।

[লেখক: সম্পাদক, নারী বিভাগ হেযবুত তওহীদ,
যোগাযোগ: ০১৬৭০১৭৪৬৪৩, ০১৭১১০০৫০২৫, ০১৭১১৫৭১৫৮১]