
নরসিংদী সংবাদদাতা:
সাবেক জেলা ছাত্রদলের যুগ্ন আহ্বায়ক ছাদিকুর রহমান সাদেক ও তার কর্মী আশরাফুল এর নৃশংস হত্যা মামলার আসামি বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন ও তার স্ত্রী শিরীন সুলতানা, নাহিদ এবং আরো অন্য আসামীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন হয়।
ছাত্রদল নেতা হত্যা মামলার আসামি বিএনপি নেতা খায়রুল কবির খোকন সহ সব আসামির গ্রেফতার চেয়ে গত ১০ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নরসিংদী জেলাখানা মোড়ে মানববন্ধন করে নিহতদের পরিবার ও নেতা কর্মীরা। এসময় তারা কাফনের কাপড় গায়ে জড়িয়ে অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। নিহত সাদিকুরের বড় ভাই আলতাফ হোসেন ও জেলা ছাত্রদলের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি মাইন উদ্দিন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে এই কর্মসূচিতে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যসহ শতাধিক নেতা কর্মী অংশ গ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য গত ২৫ মে বিকেল ৪টার দিকে বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে ঢোকার পথে শহরের জেলখানা মোড়ে দুর্বৃত্তের গুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ছাদিকুর রহমান (সাদেক) ও তাঁর কর্মী আশরাফুল। সাথে থাকা কর্মী সমর্থকরা চিকিৎসার জন্য ১০০ শয্যা বিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার তাদের অবস্থা গুরুতর দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথেই সাদিকুরের মৃত্যু হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন সকালে আশরাফুল ও মারা যান। এ ঘটনায় নিহত সাদিকুর রহমানের বড় ভাই আলতাফ হোসেন মেম্বার বাদী হয়ে নরসিংদী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির (খোকন) ও তাঁর স্ত্রী শিরিন সুলতানা সহ ৩০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৩৫-৪০ জনকে আসামি করা হয়। এখন পর্যন্ত মামলার এজাহারভুক্ত ৯ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মানববন্ধনে নেতা-কর্মীরা জানান, আজ সকালে নরসিংদী আদালতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির (খোকন) জামিন চাইতে আসবেন। এমন খবরে এই বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সকাল ১০টায় শহরের উপজেলা মোড় থেকে কাফনের কাপড় গায়ে জড়িয়ে বের হওয়া বিক্ষোভ মিছিলটি আদালত প্রাঙ্গণ-সংলগ্ন সড়ক ধরে এগিয়ে যায়। কিন্তু খায়রুল কবির খোকন আদালতে আসেন নি। জানতে পেরে মিছিলটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে জেলখানা মোড়ে যায়। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত প্রায় ৩০ মিনিট মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন তাঁরা। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ উঠিয়ে তাঁরা পুনরায় ওই সড়ক ধরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপজেলা মোড়ে ফিরে যাওয়ার পথে আদালত প্রাঙ্গণ-সংলগ্ন সড়কে দাঁড়িয়ে খায়রুল কবির (খোকন) ও তাঁর স্ত্রী শিরিন সুলতানার বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেয়।
কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেওয়া জেলা ছাত্রদলের বহিষ্কৃত সিনিয়র সহ-সভাপতি মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, মামলার প্রধান আসামি খায়রুলসহ সব আসামিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে আমরা কাফনের কাপড় পরে মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছি। আমরা সবাই চাইছি, দ্রুত তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা হোক। যত দিন তাঁরা গ্রেপ্তার না হবেন, তত দিন আমরা আন্দোলন করেই যাব। গত ২৬ জানুয়ারি জেলা ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ। দীর্ঘ ১২ বছর পর ঘোষিত ওই কমিটিতে সিদ্দিকুর রহমান নাহিদকে সভাপতি ও মেহেদী হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ওই কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী মাইন উদ্দিন ভূঁইয়াকে দেওয়া হয় সিনিয়র সহ সভাপতি পদ। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ২০-২৫ জন কর্মী-সমর্থক ওই রাতেই জেলা বিএনপির কার্যালয়ের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে শতাধিক প্লাস্টিকের চেয়ার, ব্যানার ও ফেস্টুনে আগুন লাগিয়ে দেয়। ইটপাটকেল ছুড়ে কার্যালয়ের জানালা ও সিঁড়ির গ্লাস ভাঙচুর করে। ৩০ জানুয়ারি বিকেলে ওই স্থানেই খায়রুল কবির খোকনের কুশ-পুত্তলিকা দাহ করেন তাঁরা। ওই কমিটি বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন পদ বঞ্চিতরা। ১১ ফেব্রুয়ারি শিবপুরের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ইটাখোলা মোড়ে খায়রুল কবির খোকনের গাড়িবহরে গুলি ও ককটেল হামলার ঘটনা ও ঘটে। ৫ এপ্রিল কার্যালয়ে একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণ ও ইটপাটকেল ছোড়া হয়। ২০ মে আবার ইট পাটকেল ছুড়ে কার্যালয়ের কাচ ভাঙচুরের ঘটনা ও ঘটে। এরই ধারা বাহিকতায় গত ২৫ মে বিকেলে পদবঞ্চিত নেতাদের মোটর সাইকেলের মিছিলে দুর্বৃত্তের গুলিতে দু’জন নিহত হন।