Date: May 12, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / জাতীয় / প্রচণ্ড দাবদাহে বিপর্যস্ত জনজীবন - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

প্রচণ্ড দাবদাহে বিপর্যস্ত জনজীবন

May 11, 2025 04:26:43 PM   অনলাইন ডেস্ক
প্রচণ্ড দাবদাহে বিপর্যস্ত জনজীবন

দেশজুড়ে তীব্র গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে জনজীবনে। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গা পর্যন্ত প্রতিদিনই তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাচ্ছে। গরমের এমন তীব্রতা কোথাও যেন স্বস্তির ন্যূনতম ছোঁয়াও নেই- না ঘরে, না বাইরে। সবচেয়ে করুণ অবস্থা খেটে খাওয়া মানুষদের। প্রচণ্ড রোদে কাজ করতে গিয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, কেউবা ঝুঁকছেন সস্তা ঠান্ডা পানীয় বা অস্বাস্থ্যকর শরবতের দিকে। রাজধানীর প্রতিটি মোড়েই এখন শরবত বিক্রেতাদের ভিড়; অথচ এসব খোলা খাবারের মান নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গায় গতকাল বছরের সর্বোচ্চ ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকায়ও সর্বোচ্চ পৌঁছায় ৪০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা চলতি বছরের সর্বোচ্চ। এমন গরমে রাজধানীর রাস্তায় যানবাহন অপেক্ষমাণ যাত্রীদের চেহারায় ক্লান্তি ও বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। বাস-লেগুনার গাদাগাদি আর ভ্যাপসা গরমে কেউ কেউ হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

উত্তরার রিকশাচালক শফিক মিয়া বললেন, “এই রোদে দাঁড়ালে মাথা ঘুরে পড়ে যাই, তবু কাজ করতে হয়। না করলে তো খেয়ে বাঁচতে পারব না। পানি খেতে খেতে শরীরই ক্লান্ত হয়ে পড়ে।” একই সুরে গুলিস্তানের রিকশাচালক সুজন খান জানালেন, গরমে তাঁর পেট খারাপ হয়েছিল, দুই দিন রিকশা চালাতেই পারেননি। তিনি বলেন, “এমন গরম আমি কোনো দিন দেখিনি।”

শুধু ঢাকায় নয়, দেশের প্রায় সব জায়গাতেই একই অবস্থা। গরমের চাপে কর্মস্থলে উপস্থিতি কমে গেছে অনেক প্রতিষ্ঠানে। গার্মেন্টস কর্মী থেকে শুরু করে হকার, রিকশাচালক, দিনমজুর- প্রত্যেকেই এই গরমে কার্যত নাকাল হয়ে পড়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়া, বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কমে যাওয়া, দক্ষিণ দিক থেকে জলীয় বাষ্পের আগমন হ্রাস এবং বাতাসের গতি কমে যাওয়াই এই দাবদাহের মূল কারণ। এর ফলে হিটস্ট্রোক, ত্বকজনিত সমস্যা ও ডিহাইড্রেশনের মতো সমস্যাও বাড়ছে। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্যমতে, প্রতিদিনই বাড়ছে গরমজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে তা মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। শহরে বসবাসরত নাগরিকদের জন্যও এটি উদ্বেগজনক। যদিও পরিবেশবান্ধব নগর ব্যবস্থাপনার কথা বহু আগে থেকেই বলা হচ্ছে, বাস্তবে তার প্রয়োগ চোখে পড়ে না।

অন্যদিকে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে এখনো দৃশ্যমান কোনো বড় উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না, যা নিয়ে জনমনে অসন্তোষ বাড়ছে। নাগরিক সমাজ ও বিশেষজ্ঞদের দাবি, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে সামনের দিনগুলোতে জনদুর্ভোগ ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, দেশের আটটি জেলায় বর্তমানে তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা, ঢাকা, ফরিদপুর, রাজশাহী, যশোর, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ জেলার পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ। এ ছাড়া দেশের অন্যত্রও মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা আরও কয়েকদিন স্থায়ী হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

তবে আবহাওয়া অফিস আশার কথা দিয়েছে- আগামী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও সেটি সারাদেশের জন্য নয়, তাই তাতেও সামগ্রিক স্বস্তি আসবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।