
ওবায়দুল হক বাদল:
মুক্ত বিশ্বকোষ ‘উইকিপিডিয়া’তে হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে প্রকাশিত বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন তথ্য পরিবেশনের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংস্কারমূলক আন্দোলন হেযবুত তওহীদ। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর তোপখানা রোডে অবস্থিত বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন হেযবুত তওহীদের ঢাকা বিভাগীয় আমির ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ। এসময় তিনি বলেন, উইকিপিডিয়ায় হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ঘৃণামূলক। যা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করছে এবং সংগঠনটির দীর্ঘদিনের সামাজিক, ধর্মীয় ও মানবিক কর্মকাণ্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করার একটি চক্রান্তের অংশ।
হেযবুত তওহীদের এই আমির বলেন, উইকিপিডিয়ায় হেযবুত তওহীদকে ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কালো তালিকাভুক্ত’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অথচ বাস্তবে এমন কোনো সরকারি প্রমাণ বা দলিল, নথি নেই যেখানে বলা হয়েছে যে হেযবুত তওহীদ কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কালো তালিকাভুক্ত সংগঠন।”
উইকিপিডিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে প্রচারিত বিভ্রান্তিকর তথ্য অবিলম্বে অপসারণ করে সঠিক তথ্য সংযোজন করা হোক। অন্যথায় সংগঠনটির পক্ষ থেকে আইনি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবেন বলে হুশিয়ার করেন হেযবুত তওহীদের এই আমির।
গত কয়েক বছর ধরে কিছু অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায়, বিশেষ করে উইকিপিডিয়ায়, হেযবুত তওহীদকে “কালো তালিকাভুক্ত জঙ্গি সংগঠন” হিসেবে আখ্যা দিয়ে বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। অথচ এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত প্রজ্ঞাপন বা আদেশ আজ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সাথে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে, হেযবুত তওহীদকে কালো তালিকাভুক্ত করার মতো কোনো সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি।
যাচাই-বাছাই ছাড়া হেযবুত তওহীদের বিষয়ে কোনো বিভ্রান্তিকর বা মিথ্যা তথ্য প্রচার না করা এবং পূর্বে প্রকাশিত বিভ্রান্তিকর তথ্যসমূহ সংশোধন ও অপসারণ করতে গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। ‘২০০৯ সালে একটি জাতীয় দৈনিকে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর একটি মৌখিক বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে এই অপপ্রচারের সূচনা হয়। এরপর বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম একে অপরকে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করে বারবার একই ভ্রান্ত তথ্য পরিবেশন করে আসছে। বিশেষ করে উইকিপিডিয়ায় এই তথ্য প্রকাশিত থাকায় সাধারণ জনগণ তা নির্ভরযোগ্য হিসেবে গ্রহণ করছে, ফলে হেযবুত তওহীদের সদস্যরা বিভিন্ন সামাজিক ও প্রশাসনিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন। -বলেন তিনি।
একটি স্পষ্ট সরকারি ঘোষণার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হোক যে হেযবুত তওহীদ কোনো কালো তালিকাভুক্ত সংগঠন নয় এবং তা দেশের সব প্রশাসনিক দপ্তরে জানানো হোক- সরকারের প্রতি এই অনুরোধ জানান তিনি।
এসময় আরো বক্তব্য রাখেন- হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় তথ্য সম্পাদক এসএম সামসুল হুদা, সহ-বিভাগীয় আমির আল আমিন সবুজ, সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন রব্বানী, গণমাধ্যম সম্পাদক শারমিন সুলতানা চৈতী, আন্তঃধর্মীয় যোগাযোগ সম্পাদক ইলা ইয়াসমিন, যুগ্ম নারী বিষয়ক সম্পাদক আয়েশা সিদ্দিকা প্রমুখ।
হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় তথ্য সম্পাদক সাংবাদিক নেতা এসএম সামসুল হুদা তার বক্তব্যে বলেন, “হেযবুত তওহীদ একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক, অসাম্প্রদায়িক ও শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় সংস্কারমূলক আন্দোলন। ১৯৯৫ সালে টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী পন্নী পরিবারের সন্তান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী এটি প্রতিষ্ঠা করেন। তার ইন্তেকালের পর বর্তমানে হেযবুত তওহীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংগঠনের বর্তমান ইমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।”
তিনি বলেন, “গত তিন দশক ধরে হেযবুত তওহীদ শান্তি, সহনশীলতা, মানবতা ও কোরআনের প্রকৃত শিক্ষা নিয়ে দেশব্যাপী কাজ করে যাচ্ছে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে কখনও কোনো সহিংসতা বা অরাজকতার পথ গ্রহণ করা হয়নি। কিছু কুচক্রী মহল ও ধর্মব্যবসায়ী চক্র দীর্ঘদিন ধরে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে গুজব ছড়িয়ে আসছে। এসব অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে কেউ কেউ উইকিপিডিয়ায় মিথ্যা তথ্য যোগ করেছেন, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও বেআইনি।”
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ উইকিপিডিয়ায় হেযবুত তওহীদকে কালো তালিকাভুক্ত সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করা একটি ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য উল্লেখ করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে ভুল তথ্যটি সংশোধন করে এবং আন্দোলন সম্পর্কে সঠিক তথ্য আপডেট করার অনুরোধ জানান। এসময় গণমাধ্যম, সিভিল সোসাইটি এবং বুদ্ধিজীবীদের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ এবং প্রকৃত সত্য উদঘাটনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বক্তারা।