
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি:
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় ১৬ বছর কারাবাস শেষে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার রবিউল ইসলাম (৩৪) মুক্তি পাচ্ছেন। রোববার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে অনুষ্ঠিত অস্থায়ী আদালতে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ যে ২৫০ জন বিডিআর সদস্যকে খালাস দিয়েছে, তাদের মধ্যে একজন ছিলেন রবিউল ইসলাম।
রবিউলের ভাই শাহাজাহান আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রবিউল ইসলাম উপজেলার ভানোর ইউনিয়নের নেংটিহারা গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে। তার মুক্তির খবরে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং গ্রামের লোকজন আনন্দিত। আগামী বৃহস্পতিবার কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে শুক্রবার সকালে বাড়ি ফিরে আসবেন তিনি। ১৬ বছর পর তার ফেরার খবরে পরিবারের সদস্যরা এবং গ্রামের লোকজন তাকে একনজর দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন।
মঙ্গলবার বিকালে রবিউলের বাড়িতে গিয়ে জানা গেছে, তিনি এসএসসি পাশ করার পর চাকরি পেয়ে বিডিআর সদর দপ্তরে যোগ দেন। তবে মাত্র ২৬ দিন পর পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং কারাগারে রাখা হয়। প্রথমে একটি মামলায় সাত বছর সাজাভোগ করার পর, কয়েক মাস পরে বিস্ফোরক আইনের মামলায় আবারও গ্রেফতার হন রবিউল।
রবিউলের ভাই শাহাজাহান আলী জানান, "চাকরি পাওয়ার পর বাবা ও মা খুব খুশি হয়েছিলেন, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সমস্ত খুশি ম্লান হয়ে যায়। চাকরি করে রবিউল আমাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করবে ভাবছিলাম, কিন্তু তার উল্টো হয়ে গেল। রবিউল কারাগারে থাকা অবস্থায় তাকে প্রতি মাসে খাওয়া-খরচ, কাপড়-চোপড় এবং আদালতপাড়ায় খরচ করতে গিয়ে পুরো পরিবার প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেছে।"
রবিউলের চাচা রেজাউল করিম জানান, "রবিউলের জন্য নানা দুশ্চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তার বাবা আব্দুর রহমান। দীর্ঘ ১৬ বছর অপেক্ষা করতে করতে গত অক্টোবর মাসে তিনি মারা গেছেন। তার মা সালেহা খাতুন এখনও অসুস্থ এবং ঠাকুরগাঁও শহরে বোনের বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আজ যদি রবিউলের বাবা বেঁচে থাকতেন, তবে তার বাড়ি ফেরার খবরে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন।"
রবিউলের দাদী জমেলা বেগম জানান, "ছেলেটা কোনো অপরাধ করেনি, অথচ ১৬ বছর জেলে থাকতে হলো। এতদিন বাড়িতে থাকলে, তার বাবা-মা নাতি-পুতির মুখ দেখতেন।"
রবিউলের ভাই শাহাজাহান আলী সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন, রবিউল ইসলামকে পুনরায় চাকরিতে পুনর্বহাল করা হোক, এবং তার দীর্ঘদিন বিনা অপরাধে কারাগারে থাকার জন্য এবং পরিবারটির আর্থিক ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়া হোক।