
খাগড়াছড়ি সংবাদদাতা:
খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলার হাটবাজারে শাক-সবজি ও অন্যান্য পাহাড়ি পণ্য বিক্রি করতে আসেন নারী বিক্রেতারা। এই বাজারগুলোতে মহিলাদের অংশগ্রহণ একটি বিশেষ দৃষ্টান্ত, যেখানে পাহাড়ি অঞ্চল ও সমতলের মানুষ একত্রিত হয়ে তাদের দৈনন্দিন জীবনধারা পরিচালনা করেন। হাটের দিনে বাজারে লোকসমাগম দ্বিগুণ হয়, বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলের নানা ধরনের শাক-সবজি বিক্রির জন্য আসে।
ভোর থেকে শুরু হয় পাহাড়ি নারীদের প্রস্তুতি। তারা অটোরিকশা, পিকআপ, চাঁদের গাড়ি কিংবা মোটরসাইকেলে তাদের উৎপাদিত শাক-সবজি বাজারে নিয়ে আসেন। তাদের সঙ্গে থাকে পাহাড়ি খাবারেরও বিশাল সমাহার। এসব শাক-সবজির মধ্যে ঠান্ডা আলু, পাহাড়ি কচু, ক্ষিরা, জংলি আলু, তিত বেগুন, শামুক, পাহাড়ি হলুদ, আদা, বরই, কাঁচা তেতুল, আমলকি, কলা, উলুফুল ইত্যাদি বিশেষভাবে পরিচিত।
পাহাড়ে উৎপাদিত শাক-সবজির মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় হলো ঠান্ডা আলু, যা পাহাড়ি জাতের আলু হিসেবে পরিচিত। এটি কাঁচা খাওয়া যায় এবং পাহাড়িরা শুটকি দিয়ে রান্না করেন। এই আলুর চাষ ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে হয়। এছাড়া পাহাড়ে উৎপাদিত মরিচও বেশ ঝাল এবং স্থানীয় খাবারে এর ব্যবহার ব্যাপক।
পাহাড়ি সবজির মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি নাম হলো পাহাড়ি আলু, যেটি পাহাড়ি এলাকায় শিমুল আলু হিসেবে পরিচিত। এটি দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ি মানুষের খাদ্য তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। এ আলু গাছটি দেখতে অনেকটা শিমুল গাছের মতো হওয়ায় এ নামটি ধারণ করেছে।
বাজারে অন্যান্য পণ্যের মধ্যে কলাও একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। পাহাড়ে কলা চাষ বেশ প্রচলিত এবং এই অঞ্চলের কলা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়। এছাড়া পাহাড়ের ফুল ঝাড়ু বা উলুফুলও একটি স্থানীয় প্রাকৃতিক পণ্য, যা বাড়ি পরিষ্কার রাখতে ব্যবহৃত হয়।
পাহাড়ি নারীদের এই বাজারে অংশগ্রহণ শুধু অর্থনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি তাদের সামাজিক অবস্থান এবং পারিবারিক অর্থনীতির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নারীরা শাক-সবজি উৎপাদন থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত সব দিকেই অংশগ্রহণ করেন, যা পাহাড়ি সমাজে নারীর অবস্থানকে শক্তিশালী করে।
এখানে নারীদের ভূমিকা শুধুমাত্র শাক-সবজি বেচাকেনায় সীমাবদ্ধ নয়, তারা পরিবারে কৃষি উৎপাদনেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। এই বাজারে এসে তারা শুধু পণ্য বিক্রি করেন না, বরং তাদের কাজের মাধ্যমে নারীর অবদানের গুরুত্বও তুলে ধরেন।
খাগড়াছড়ির এই ধরনের বাজার সারা দেশে একটি বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে, যেখানে পাহাড়ি ও সমতল অঞ্চলের মানুষ একে অপরের সাথে মেলামেশা করেন এবং পণ্য বিনিময়ের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নতির সুযোগ সৃষ্টি করেন।