
ওবায়দুল হক বাদল:
‘নারী জাগরণের মূলমন্ত্র, ইসলামের সঠিক আদর্শ’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় নারী সম্মেলন-২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১১ মে, ২০২৪) রাজধানীর ইন্সটিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) তে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
হেযবুত তওহীদের নারী বিষয়ক সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের সর্বোচ্চ নেতা এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।
প্রধান অতিথি হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম তার বক্তব্যে বর্তমান সভ্যতার সঙ্কট তুলে ধরে বলেন, বিশ্ব আজ নানামুখী সঙ্কটে জর্জরিত। চলছে যুদ্ধ-বিগ্রহ, অত্যাচার-অনাচার, অর্থনৈকিত যুলুম, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক অবক্ষয়। মানুষের তৈরি জীবনব্যবস্থা একটার পর একটা প্রয়োগ করে দেখা হয়েছে কোনোটিই মানাবজাতিকে শান্তি দিতে পারেনি, সবগুলিই ব্যর্থ হয়েছে। এমতাবস্থায় আমরা মানবজাতির সামনে আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা মেনে নেওয়ার প্রস্তাব করছি। কিন্তু ইসলাম আজ মানুষের কাছে আবেদন হারিয়েছে। শত সহস্রবছর ধরে ধর্মের নামে ব্যবসা, অপরাজনীতি, নারীদের প্রতি হীন দৃষ্টিভঙ্গী ও মিথ্যা ফতোয়াবাজি করে করে এর আসল রূপটি গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। ধর্মের ধ্বজাধারীরা নারীদের কালো কাপড়ে আবৃত করে, গৃহবন্দী করে ইসলামের যে বিকৃত রূপ তুলে ধরে আসছে তা মানুষের মনে ইসলাম ফোবিয়া তৈরি করেছে। অথচ প্রকৃত ইসলামের চিত্র মোটেও এমন নয়। প্রকৃত ইসলামই নারীদের অধিকার দিয়েছে, মর্যাদা দিয়েছে, মুক্তি দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি হেযবুত তওহীদের নারীদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা ন্যায়সঙ্গত দাবি নিয়ে মাঠে-ময়দানে কাজ করে যাবেন। এটা আপনাদের ধর্মীয় অধিকার। আপনাদের মানবাধিকার। কোনো উগ্রবাদী, সন্ত্রাসী জঙ্গী যদি আপনাদের সামনে দাঁড়ায়, আপনাদের পথকে কণ্টকাকীর্ণ করতে চায় আপনারা বীরাঙ্গনার ভূমিকা পালন করবেন। আল্লাহ ছাড়া কাউকে পরোয়া করবেন না, কখনো পিছপা হবেন না।
সভাপতির বক্তব্যে নারী বিষয়ক সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী গত দশ বছরে দেশে নারী নির্যাতনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে নারী নির্যাতনের হারে সারা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চার নাম্বারে উঠে এসেছে। আমর যখন নারীদের মুক্তির জন্য কাজ করছি, নারীর অধিকারের জন্য কাজ করছি, আমাদের নারীরা যখন দেশের জন্য, জাতির জন্য কাজ করছে, ইসলামের আদর্শ প্রচার করছে তখন আমাদের সামনে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে ধর্মব্যবসায়ী একটি গোষ্ঠী। ধর্মান্ধ উগ্রবাদী গোষ্ঠীটি বিভিন্নভাবে মিথ্যা ফতোয়াবাজি করে মানুষকে উস্কে দিয়ে হেযবুত তওহীদের নারীদের অপমানিত লাঞ্ছিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, এই উগ্রবাদীদের যদি এভাবে আস্কারা দেওয়া হয়, তাদের যদি বিচারের আওতায় না আনা হয় তবে বাংলাদেশ অচিরেই নারী নির্যাতনে বিশ্বে চ্যাম্পিয়ন হবে। উগ্রবাদ যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে এবং এরা যেন আইনের আওতায় আসে সেদিকে বিশেষভাবে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী নিজাম উদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা খাদিজা খাতুন, তথ্য সম্পাদক এস এম সামসুল হুদা, প্রচার সম্পাদক শফিকুল আলম উখবাহ, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক উম্মুত তিজান মাখদুমা পন্নী, নারী ও শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক সুলতানা রাজিয়া, আন্তঃধর্মীয় যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক শারমিন সুলতানা চৈতি, ঢাকা মহানগর হেযবুত তওহীদের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন রাব্বানী প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক কমিটির সভাপতি ঢাকা বিভাগীয় আমির ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিভাগীয় নারী নেত্রী তাসলিমা ইসলাম, রংপুর বিভাগীয় নারী নেত্রী উম্মে হানী ইসলাম, ময়মনসিংহ বিভাগীয় নারী নেত্রী রোজিনা আক্তার, খুলনা-১ বিভাগীয় নারী নেত্রী পাপিয়া সুলতানা নিরু, খুলনা-২ বিভাগীয় নারী নেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস মিম, সিলেট বিভাগীয় নারী নেত্রী মাহমুদা আক্তার দিপা, চট্টগ্রাম বিভাগীয় নারী নেত্রী জোবেদা আক্তার বেবি, রাজশাহী বিভাগীয় নারী নেত্রী নাঈমা খাতুন।
এরআগে সকাল ৯টায় পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের পর দলীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। আয়োজক কমিটির সভাপতি ঢাকা বিভাগীয় আমির ডা. মাহবুব আলম মাহফুজের স্বাগত বক্তব্যের পরে বিভাগীয় নারীনেতৃন্দ শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন। বেলা ১২ টায় অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেন অনুষ্ঠানের মধ্যমনি প্রধান অতিথি এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। এসময় হেযবুত তওহীদের নারীদের স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয় অডিটোরিয়াম। প্রধান অতিথির আসন গ্রহণের পর নারী নেতৃবৃন্দ তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। প্রধান অতিথি হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের দীর্ঘ মূল্যবান বক্তবর শেষে হেযবুত আদর্শ প্রচারে বিশেষ ভূমিকা রাখা অগ্রগামী নারীদের পুরষ্কৃত করা হয়। তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধান অতিথি, অনুষ্ঠানের সভাপতি ও বিশেষ অতিথিবৃন্দ।
এরপর মধ্যাহ্নের বিরতির পর মাটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সংগীত পরিবেশন করেন মাটি’র নিয়মিত শিল্পী শাহীন আলম, তহমিনা আক্তার চাঁদ ও তাহী। কথকদা নামে খ্যাত ওবায়দুল হক বাদলের আবৃত্তি করা কাজী নজরুলের ‘নারী’ কবিতাটি উপস্থিত নারীদের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে।
এরপর হেযবুত তওহীদের নারীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন বর্তমান সময়ে নারী জাগরণের পথিকৃত খ্যাত অনুষ্ঠানের সভাপতি হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় নারী বিষয়ক সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী। তার আগুন ঝরা বক্তব্যে আরো উদ্দীপ্ত, আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে হেযবুত তওহীদের নারীরা; বক্তব্যের মাঝে মাঝে নারীদের ঝড়োয়া স্লোগানে তেমনটাই প্রকাশ পায়।
সভাপতির বক্তব্যের পরে হেযবুত তওহীদের নারীদের উপর ধর্মব্যবসায়ী উগ্রবাদীদের নির্যাতনের ঘটনা বর্ণনা করেন হামলার শিকার কয়েকজন নির্যাতিতা নারী। যাতে উঠে আসে ধর্মব্যবসায়ীদের উগ্রতার এক ভয়ঙ্কর পৈশাচিক রূপ।
এরপর হেযবুত তওহীদের আন্দোলনের সদস্য আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের স্মৃতিচারণ করেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। এসময় অনুষ্ঠানস্থলে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এরপর ইসলামের ইতিহাসের নানা দিক নিয়ে কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগীতায় বিজয়ী ৬ জনকে তওহীদ প্রকাশনীর পক্ষ থেকে বই পুরস্কৃত করা হয়। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে ‘সারা বিশ্বে সালাতে নারীদের অংশগ্রহণ’ ও ‘হেযবুত তওহীদের নারীদের কার্যক্রম’ বিষয়ে দুুটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
সবশেষে প্রশ্ন-উত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা প্যানেলে ছিলেন আন্তঃধর্মীয় যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক শারমিন সুলতানা চৈতি, হেযবুত তওহীদের সদস্য নাজমুন নাহার বিথি, জান্নাতুল ফেরদৌস, নওশীন আমিন। প্যানেল পরিচালনায় ছিলেন মুখলেছুর রহমান সুমন।