Date: April 30, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / রাজনীতি / বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে বিবাদ যেসব ইস্যুতে - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে বিবাদ যেসব ইস্যুতে

February 16, 2025 11:01:43 AM   অনলাইন ডেস্ক
বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে বিবাদ যেসব ইস্যুতে

বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের সময় নিয়ে সন্দেহ-অবিশ্বাস থেকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী মধ্যে টানাপোড়েন বিবাদে রূপ নিয়েছে। এর জেরে বাড়ছে পাল্টাপাল্টি বক্তৃতা-বিবৃতি।

বিএনপির সঙ্গে তার একসময়ের মিত্র জামায়াতের টানাপোড়েন চলছিল কয়েক বছর ধরে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার শাসনের পতনের পর দল দুটির মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়েছে।

সংস্কার আগে নাকি নির্বাচন আগে -এই প্রশ্নে বিপরীত অবস্থান নিয়ে বিবাদে জড়িয়েছে বিএনপি ও জামায়াত। এরই মধ্যে জামায়াত জাতীয় সংসদের বিভিন্ন আসনে দলীয় প্রার্থীও ঘোষণা করেছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে আস্থার অভাব ও সন্দেহ বেড়ে যায়।

সর্বশেষ স্থানীয় সরকার নির্বাচন ইস্যুতেও পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে দল দুটি। বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের আগে অন্য কোনো নির্বাচন চায় না, আর জামায়াত আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায়।

সংস্কার প্রশ্নে দ্বন্দ্বের সূচনা:

অন্তর্বর্তী সরকারের শুরু থেকেই বিএনপি ন্যূনতম সংস্কার করে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন চায়। অন্যদিকে, জামায়াত শুরুতে ‘সার্বিক সংস্কারের পর নির্বাচন’ দাবি করলেও পরে ‘প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন’-এর পক্ষে অবস্থান নেয়। তবে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ নিয়ে তাদের অবস্থান বিএনপির থেকে আলাদা।

জামায়াত বলছে, প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য সরকারকে তারা সময় দেবে, আর বিএনপি চাইছে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হোক।

জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হতে পারে—এমন খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হলে সেটি নিয়ে আরও দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। যদিও সরকার বা নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো বক্তব্য আসেনি।

জামায়াতের নির্বাচনী তৎপরতায় বিএনপির সন্দেহ:

বিএনপির এক সিনিয়র নেতা জানান, তাদের ধারণা, বিএনপি যাতে দুই-তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী না হতে পারে, সেজন্য জামায়াত নির্বাচনের সময় দীর্ঘায়িত করতে চাইছে। অন্যদিকে, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, বিএনপির সঙ্গে তাদের কোনো বিরোধ নেই, তারা তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিএনপি-জামায়াত দ্বন্দ্বের পটভূমি:

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দৈনিক নয়া দিগন্তের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সালাউদ্দিন বাবর বলছেন, দল দুটির দ্বন্দ্বের মূল কারণ নির্বাচন। বিএনপি মনে করছে, জামায়াত ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে পারে, যা তাদের অবস্থান দুর্বল করবে। অপরদিকে, জামায়াত মনে করছে, সংস্কারের আগে নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় গিয়েই তা বাস্তবায়নে গড়িমসি করতে পারে।

এর আগে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের বক্তব্যেও বিএনপির ক্ষোভ দেখা গেছে। গত ২৭ ডিসেম্বর এক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘একজন চাঁদাবাজ পালিয়েছে, আরেকজন চাঁদাবাজিতে লেগে গেছে।’ বিএনপি মনে করছে, জামায়াত তাদের বিরুদ্ধে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করছে।

জামায়াতের বিকল্প জোট গঠনের তৎপরতা:

জুলাই আন্দোলনের কৃতিত্ব নিয়ে বিরোধ, ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে নিয়ে জোট গঠনের প্রচেষ্টা, নতুন দল গঠনের পরিকল্পনা এবং নির্বাচনের আগে সংস্কারের বাস্তবায়ন নিয়ে ভিন্ন অবস্থানের কারণে দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হয়েছে।

জামায়াত ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও বিএনপিও পাল্টা উদ্যোগ নিয়েছে। জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সঙ্গে সাক্ষাতের পর বিএনপির মহাসচিব ঢাকায় তার সঙ্গে বৈঠক করেন। এই ঘটনাগুলো রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গণ-অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব নিয়ে বিরোধ:

বিএনপি দাবি করে, ছাত্রদের আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলেও এর ভিত্তি তৈরি হয়েছে তারেক রহমানের নেতৃত্বে তাদের ১৫ বছরের আন্দোলনের মাধ্যমে। অপরদিকে, ছাত্রদের আন্দোলনকে জামায়াতও প্রশংসা করছে। বিএনপির অনেকে মনে করছে, ছাত্রদের নতুন দল গঠনের প্রক্রিয়ায় জামায়াতের ইন্ধন রয়েছে।

বিএনপি-জামায়াত দ্বন্দ্ব আরও প্রকাশ্য:

গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর বাগমারায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘জামায়াতের প্রতি উদারতা দেখিয়ে বিএনপি উপহার হিসেবে মুনাফেকি পেয়েছে।’

এর জবাবে জামায়াতের মুখপাত্র মতিউর রহমান আকন্দ বিবৃতিতে বলেন, ‘এই কথার কোনো ভিত্তি নেই। জামায়াত ভারতের আধিপত্যবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।’

ডিসেম্বরের শেষদিকে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান নিজেদের ‘পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক শক্তি’ বলে দাবি করলে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ একাত্তরে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এখন সবশেষ জামায়াত সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সমর্থন করায় বিএনপির মধ্যে জামায়াত-বিরোধিতা আরও জোরালো হয়েছে।

জামায়াত ইতিমধ্যেই ৩০০ আসনের প্রায় সবকটিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার জানিয়েছেন, চূড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচনকালে কেন্দ্র থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা:

সালাউদ্দিন বাবর মনে করেন, জামায়াত নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, তবে তারা আগে সংস্কার চায়। কারণ, নির্বাচনের পর যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে, তবে তারা সংস্কার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। অন্যদিকে, বিএনপি মনে করছে, জামায়াত নির্বাচনের বিলম্ব ঘটাতে চাইছে। মূলত, নির্বাচনকেন্দ্রিক মতপার্থক্যই দল দুটির মধ্যে বিভক্তির মূল কারণ।

-বিবিসি বাংলা