
গাজীপুর সংবাদদাতা:
গাজীপুরে ‘ভণ্ড কবিরাজ’ খ্যাত আওয়ামী লীগ নেতা মোজাম্মেল হকের অবর্তমানে প্রতারণা আর দুর্নীতির অর্থে গড়ে ওঠা অবৈধ সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ এখন ছেলে রাজিবের হাতে। পিতাকে আইনের হাত থেকে রক্ষা এবং অবৈধ সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে ছেলে রাজিব নানা পন্থা অবলম্বন করে চলেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোনাবাড়ীর বাইমাইলে সরকারি সম্পত্তির উপর নির্মিত ‘ডায়মন্ড কার সার্ভিসিং সেন্টার’ যার অন্যতম একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিনিময়ে বিশেষ ব্যক্তিদের গাড়ি ফ্রিতে মেরামতের সুবিধা দেওয়া হয় এই সার্ভিসিং সেন্টারে।
বিগত সরকারের সময়ে মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে ওঠা প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোজাম্মেল গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী থানার ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক পদে থাকা অবস্থায় গাজীপুরসহ দেশব্যাপী দখলদারিত্ব, দুর্নীতি আর কবিরাজি চিকিৎসার নামে প্রতারণার জন্য যিনি বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন। তার অপকর্ম বেগবান করতে তৎকালীন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খানকে ‘বাবা’ হিসেবে সম্বোধন করতেন তিনি। সরকারি, প্রশাসনিক এবং সর্বমহলে আজমত উল্লাহ খানের ছেলে হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতেন এই মোজাম্মেল।
অভিযোগ অনুযায়ী, মোজাম্মেলের অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে দেওয়া হতো মিথ্যা মামলা, করা হতো নানা ধরনের হয়রানি। কবিরাজি চিকিৎসার নামে গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী থানাধীন ৯ নম্বর ওয়ার্ডে গড়ে তুলেছিলেন ‘কবিরাজের নিজস্ব সাততলা বাড়ি’। আর সেখান থেকেই কবিরাজির নামে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে কামিয়েছেন শত শত কোটি টাকা। দেশের দূরদূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে এসে প্রতারিত হওয়া রোগীরা প্রতিবাদ করতে গেলেই তার নিজস্ব গুণ্ডাপাণ্ডা দিয়ে দেখানো হতো বিভিন্ন ধরণের ভয়ভীতি। তৎকালীন সময়ে আওয়ামী লীগ নেতা হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় প্রশাসনও ছিল তার কব্জায়। এছাড়াও অভিযোগ ছিল, রোগী প্রতারণা ছাড়াও অবাধ্য প্রেমিক ও স্বামীদের ফিরে পেতে চাওয়া নারীদের আধ্যাত্মিক চিকিৎসার নামে অভিনব কৌশলে তাদের গোপন তথ্য হাতিয়ে নিতেন এই ভণ্ড কবিরাজ। পরে সেইসব তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করতেন মোজাম্মেল হক।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর আত্মগোপনে চলে গেছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও ভণ্ড কবিরাজ মোজাম্মেল। তিনি আত্মগোপনে যাওয়ার পর তার সব সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ এখন ছেলে রাজিবের হাতে। সাততলা কবিরাজ ভবনে হাকিম হিসেবে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন সুলতান।
কবিরাজ মোজাম্মেল হকের সকল অপকর্মের প্রত্যক্ষদর্শী সুলতান জানান, কোনাবাড়ী বাইমাইল এলাকায় মোজাম্মেল একটি মসজিদ নির্মাণ করেন, যার অর্ধেক জায়গার মালিক সরকার। তিনি জানান, মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে প্রায় ২/৩ বিঘা জায়গা দখল করে খামার, দোকান-পাট, বাসাবাড়ি এবং ডায়মন্ড নামক একটি কার সার্ভিসিং সেন্টার স্থাপন করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা মোজাম্মেল হক।
মোজাম্মেলের নারী কেলেঙ্কারি সম্পর্কে সুলতান জানান, দাম্পত্য জীবনে কলহ কিংবা প্রেমে ব্যর্থ এমন নারীদের সেবা প্রদানের আশ্বাস দিয়ে কৌশলে মোজাম্মেল তাদের কাছ থেকে গোপন তথ্য সংগ্রহ করে রাখতেন। পরবর্তীতে সংগৃহিত ওইসব গোপন তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তাদের শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার জন্য বাধ্য করতেন মোজাম্মেল হক। সুলতান আরও জানান, অনেক ক্ষেত্রেই লোকচক্ষুর ভয়ে ভুক্তভোগী নারীরা মোজাম্মেলের ব্ল্যাকমেইলের বিষয়টি প্রকাশ করতেন না।
এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে ছেলে রাজিবের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে কেউ লিখিত অভিযোগ দেয় নি। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি নজরদারিতে আছে।