
নির্মল খেলাধুলা কোমলমতি শিশুদের মননশীলতা বিকাশের সহায়ক। অথচ গাইবান্ধা সদর উপজেলার বল্লমঝাড় ইউনিয়নের কাজলঢোপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খেলার জন্য কোনও মাঠ নেই। এ কারণে খেলাধুলা চর্চার সুযোগ পাচ্ছে না এই প্রতিষ্ঠানের শিশু শিক্ষার্থীরা। টিফিন কিংবা অন্য বিরতির সময় শ্রেণিকক্ষে বসেই সময় পার করতে হয় তাদের। এছাড়াও মাঠের অভাবে বিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র-ছাত্রী সমাবেশ, বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা সম্ভব হয় না। এতে করে ছাত্রছাত্রীরা খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেছেন স্থানীয় শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, গাইবান্ধা সদর উপজেলার বল্লমঝড় ইউনিয়নের কাজলঢোপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, খেলার মাঠ নেই, ওয়াশ ব্লক নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. তানভীর বলে, ‘অন্য স্কুলে খেলার মাঠ থাকলেও আমারদের এখানে নাই। মাঠ না থাকায় খেলা খেলাধুলা করতে পারি না। টিফিন হইলে ক্লাশে বসি থাকা লাগে।
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতেমা বলে, ‘স্কুলের বারান্দা দিয়ে কষ্ট করি ক্লাশে যাওয়া লাগে’।
সহকারী শিক্ষিকা ফেরদৌসী সরকার বলেন, ‘আমাদের এখানে মূলত প্রধান সমস্যা মাঠের। জায়গা নেই যার কারণে আমাদের ছাত্রছাত্রীদের ধরে রাখতে পারি না। গ্রামের মধ্যে অবস্থিত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বাড়ি চলে যায় আমরা ভমণ পাচ্ছিনা, আর ওয়াশ বলক জায়গা না থাকার কারণে আমরা পাচ্ছি না। জায়গার স্বল্পতার কারণে অন্যের জায়গায় দৈনিক সমাবেশ করতে হয়। শিক্ষক শিক্ষার্থীর সবাই একটাই টয়লেট ব্যবহার করতে হয়, এতে অনেক ভোগান্তিহয়। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এবং সরকারের কাছে আমাদের বিনীত আবেদন থাকবে এই বিষয়টি যাতে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাহমিনা ইয়াসমিন বলেন, এখানে মূলত মাঠের সমস্যা আমাদের স্কুলে মোট ১৫৬ জন ছাত্রছাত্রী, বর্ষার দিনে স্কুলের চারদিক পানি দিয়ে ভরে যায়। ছাত্র-ছাত্রী ঘরের বাইরে যেতে পারে না, তাই আমাদের স্কুলে একটি মাঠ অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি আকর্ষন করছি।’
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবু সাঈদ আকন্দ বলেন, আমি সভাপতি হওয়ার পর থেকে দেখছি এই স্কুলের অনেক সমস্যা আমাদের পূর্ববর্তী স্কুলের ভমণ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে যেখানে ভমণ স্থাপন করা হয়েছে কোন জায়গা নেই। বর্ষার সময় কানাই কানাই ভরে যায় স্কুলের চারিদিক যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ বিষয়ে শিক্ষা অফিসার চেয়ারম্যান স্থানীয় প্রশাসনসহ অনেকের সাথে কথা বলা হয়েছে। আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের জন্য জেলা শিক্ষা অফিসার কর্তৃক শিক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছি।
বল্লমঝাড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুলফিকার রহমান বলেন, মাঠটা খুব জরুরি, তবে ওখানে মাঠ করতে গেলে একটা জায়গা দরকার। জায়গার বিষয়ে ওখানকার স্থানীয় গণ্যমান্যব্যক্তি ও জমির মালিকের সাথে কথা বলেছি। একটা কন্ডিশনে হয়তো জায়গাটা দিবে, জমির মালিককে পে করতে হবে।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ সারোয়ার কবির বলেন, প্রধান শিক্ষক আমাকে এসে বলে গেছে যে- আমাদের স্কুলের অবস্থা খারাপ, সেটা আমি শিক্ষা অফিসার কে বলেছি। তিনি বলেছেন- আমাদের সরকারি বরাদ্দ আসলে আমরা মাঠের ব্যবস্থা করে দিব।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জাকিরুল ইসলাম বলেন, শারীরিক-মানসিক নান্দনিক বিকাশের জন্য তাদের খেলার মাঠের অতীব জরুরি। আমি এসএমসি, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক যারা রয়েছে এবং স্থানীয় অভিভাবকরা মিলে স্কুলের সামনে যে পার্শ্ববর্তী অংশটা রয়েছে সেটা ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নিজে সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। স্থানীয় উদ্যোগে এবং সংশ্লিষ্ট বল্লমঝাড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে আমরা কথা বলার পর উনারা জমিটা কিনে দিতে চেয়েছে। আমরা সরকারিভাবে চেষ্টা করছি সেখানে একটা মাঠ করার জন্য। এবং খুব দ্রুত এটির সমাধান হবে আশা করছি।