
শাহাদৎ হোসেন:
মানবিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় রাব্বানী শাসন ব্যবস্থার ভূমিকা শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার (৩১ মে ২০২৫) সকাল ১০টায় মুসলিম ইন্টেলেকচুয়াল ফোরামের উদ্যোগে বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও ফারেল করাচি দারুল উলুম-পাকিস্তানের মাওলানা আহমাদুল্লাহ। সঞ্চালনায় ছিলেন মুসলিম ইন্টেলেকচুয়াল ফোরামের সেক্রেটারি শরীফ মুহাম্মদ শাহরিয়ার।
সভায় উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন- সাবেক ধর্ম ও পানি সম্পদ মন্ত্রী এবং জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ এম নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব ড. মাওলানা গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, ইসলামি গবেষক ও সমাজসেবক মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন, ইসলামিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান এ.বি.এম খাইরুল আহসান, আন্তর্জাতিক শ্রমিক নেতা শাহ মোঃ আবু জাফর, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সহ-সভাপতি পারভিন নাসরিন খান ভাসানী, বাংলাদেশ রুলতার পার্টির আহবায়ক আব্দুল আহাদ নুর, দৈনিক দেশেরপত্র সম্পাদক ও রাষ্ট্রচিন্তক রুফাইদা পন্নী, বিশিষ্ট আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ এ্যাড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মাসিক সংস্কারের সম্পাদক ও ইসলামি গবেষক ড. মাওলানা মোঃ ইসমাইল, দৈনিক যুগান্তরের সহকারী সম্পাদক ও ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা তোফায়েল গাজ্জালী, ইসলামি গবেষক ও খতিব মুফতি রফিকুন্নবী হক্কানী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক উপাধ্যক্ষ নুরুজ্জামান হীরা, গবেষক ও রাষ্ট্রচিন্তক ডাক্তার ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, ইসলামি ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল করিম, অগ্রাসন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাওলানা শওকত আমিন।
বক্তারা বলেন, পবিত্র কোরআনের আলোকে এবং ইসলামের ন্যায়ের শিক্ষার ভিত্তিতে বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থার অন্যায় ও বৈষম্যমূলক শাসন থেকে মুক্তি পেতে রুবুবিয়্যাতভিত্তিক রাব্বানী শাসন প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। বক্তারা ইহুদি আধিপত্য, পাশ্চাত্য সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, মুসলিম বিশ্বে বিভক্তি, এবং জাতীয়তার নামে স্বতন্ত্র ইসলামী পরিচয়ের বিলুপ্তির কথা তুলে ধরে বলেন, এটি এক গভীর মানবিক সংকট।
তারা বলেন, সাহাবি আবু দারদা (রা.)-এর সাইপ্রাস বিজয়ের পর কান্না করা থেকে শিক্ষা নিয়ে বুঝতে হবে, শত্রুর পরাজয় তখনই ঘটে যখন তারা আল্লাহর বিধান উপেক্ষা করে। মুসলমানদের জন্য এটি আত্মসমালোচনার মুহূর্ত- কারণ আজ মুসলিম জাতি নিজেরাই আল্লাহর বিধান উপেক্ষা করছে।
বক্তারা আরও বলেন, রাব্বানী শাসন মানে হল মহান আল্লাহকে সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে মেনে রাষ্ট্র পরিচালনা করা, যেখানে কোন প্রবৃত্তি, দলীয় স্বার্থ বা লোভ-লালসা স্থান পায় না। সমাজে অন্যায়, বৈষম্য, লুটপাট ও শোষণ বন্ধ করে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় এ পদ্ধতির বিকল্প নেই।
উল্লেখ্য হুকুমতে রব্বানী মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী প্রদত্ত একটি রাজনৈতিক আদর্শ, যার মূল ভিত্তি হচ্ছে ‘রুবুবিয়াত’অর্থাৎ মহান আল্লাহর সর্বময় অভিভাবকত্বের উপর নির্ভরশীল একটি মানবিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা। ভাসানী তার দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের শেষ প্রান্তে এসে উপলব্ধি করেন যে, প্রচলিত পুঁজিবাদী ও মতানৈক্যপূর্ণ রাজনীতি দিয়ে সমাজে ন্যায়, ইনসাফ ও শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তাই তিনি মানুষের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে হুকুমতে রব্বানীর ধারণা দেন, যা শুধু একটি ধর্মভিত্তিক নয় বরং মানবিক শাসনব্যবস্থার রূপরেখা। এই আদর্শ অনুযায়ী, রাষ্ট্র পরিচালিত হবে আল্লাহর অভিভাবকত্বের ছায়ায়, যেখানে শাসক হবে জাতির খিদমতগার এবং শাসন হবে ন্যায়, সুবিচার ও নৈতিকতায় পূর্ণ। হুকুমতে রব্বানী মূলত একটি সংগঠিত আন্দোলন ও চিন্তাধারা, যার লক্ষ্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ, শোষণমুক্ত ও আল্লাহভীরু সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।