Date: April 30, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / বিশেষ নিবন্ধ / মসজিদে নারীদের পথ অবারিত হচ্ছে - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

মসজিদে নারীদের পথ অবারিত হচ্ছে

June 19, 2023 11:19:36 AM   সম্পাদকীয়
মসজিদে নারীদের পথ অবারিত হচ্ছে


▪ আয়েশা ছিদ্দিকা
ঈদ ও ঈদের জামাত একে অপরের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। ঈদের দিন ঈদের জামাতকে ঘিরেই মুসলমানদের মূল আনন্দ। নতুন পাঞ্জাবি গায়ে, টুপি পরে, খুশবু মাখিয়ে ঈদের জামাতে যোগ দিতে ঈদগাহে আসেন হাজারও মুসল্লি। বাবার হাত ধরে ছোট ছোট শিশুরাও বিপুল আনন্দ নিয়ে জামাতে যোগ দেয়। জামাতের পর মুসল্লিরা একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন। এতে তাদের মধ্যে ¯্নহে, ভ্রাতৃত্ব, সহানুভূতি, সহমর্মিতা, পারস্পরিক সহযোগী মনোভাব ঈদের আনন্দকে বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে। এটা আমাদের সমাজে ঈদের বাস্তবচিত্র। 
ঈদের জামাতকে ঘিরে পুরুষদের মধ্যে ব্যাপক তোড়জোড় থাকলেও নারীদের ঈদের আনন্দ সেই গৃহস্থালী কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। পুরুষরা ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করবে আর নারীরা ঘরে রান্না-বান্না করবে এটাকেই ইসলামের ঈদের চিত্র মনে করা হয়। কিন্তু গত কয়েক বছর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও টিভি সংবাদে চোখে পড়ছে ভিন্ন কিছু ছবি। তা হল পুরুষ ও শিশুদের পাশাপাশি কিছু নারীও সমাজের প্রচলিত নিয়ম ভেঙে ঈদের জামাতে যোগ দিচ্ছে। এ ঈদেও জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে বহুসংখ্যক নারীকে ঈদের জামাতে অংশ নিতে দেখা গেছে, তারা অনেকেই গণমাধ্যমের সামনে বলেছেন যে, তারা খুবই আনন্দিত ও উৎসাহিত। সামনে তারা আবারও আসতে চান। সচরাচর আমাদের দেশে নারীদের মসজিদে যাওয়ার পথে অনেক প্রতিবন্ধকতা আরোপ করা হয়। ঈদের দিনের এই ভিন্ন চিত্র দেখে মনে হচ্ছে মসজিদে নারীদের প্রবেশের পথ বুঝি ধীরে ধীরে অবারিত হতে শুরু করেছে। দেরিতে হলেও আমাদের মুসলিম মানসে চিন্তাভাবনার জট খুলছে, সংকীর্ণ চিন্তা থেকে সমাজ মুক্ত হচ্ছে। ঈদগাহ, মসজিদের মত সমষ্টিগত ধর্মীয় অঙ্গন থেকে নারীদের বাদ দিয়ে ঘরোয়া জীবনের গণ্ডিতে নির্বাসিত করে রাখার মত কূপমণ্ডূকতা থেকে তারা বের হয়ে আসছে। 
এখন তো অনেক মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজেও আলাদা কক্ষে নারীদের অংশগ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে। তবে এটাও বলতে হয়, যে দুই এক জায়গায় নারীদের নামাজের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে, সেখানেও তাদেরকে পর্যাপ্ত সুবিধা দেওয়া হয় না, বরঞ্চ সেখানে তাদের সাথে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের মতো আচরণ করা হয়। যেমন- মসজিদে নারীদের প্রবেশদ্বার থাকে ঘোরানো পথে, নারীরা তাদের পুরুষ সঙ্গীদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ বা কথা বলার সুযোগ পান না। তারা আলাদা সংকীর্ণ ঘরে বসেন, সেখান থেকে বের হয়ে আসেন, মসজিদের মূল অংশে যেতেও পারেন না। সেখানে সাউন্ডের পর্যাপ্ত সুবিধা থাকে না। এমন হাজারো অসুবিধার পরও ভাবখানা এমন যেন এই জায়গাটি তোমার নয়, তোমাকে দয়া করে ঢুকতে দেয়া হয়েছে এতেই সন্তুষ্ট থাকো। এই অধিকারটুকু কেউ নারীদের হাতে তুলে দেয়নি, বর্তমানে কিছু নারীদের মসজিদে অংশগ্রহণের বিষয়টিও অনেক প্রতিবাদের ফসল। এমনি এমনি কেউ মসজিদের দরজায় ‘নারীরা স্বাগত’ লিখে দেয়নি। বরং লিখে রেখেছে ‘মসজিদে নারীদের প্রবেশ নিষেধ।’ কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা আজ থেকে চৌদ্দশ বছর আগে মসজিদে নববিসহ অন্যান্য মসজিদে কিংবা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অঙ্গনে ছিল না। 
আল্লাহ পৃথিবীতে মানুষকে তাঁর প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছেন। নারী ও পুরুষ উভয়েই আল্লাহর খলিফা। তাদের দায়িত্ব আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পৃথিবীকে শান্তিপূর্ণ করা। পবিত্র কোর’আনে আল্লাহ মানুষকে তার দায়িত্ব পালনের জন্য কর্মপদ্ধতি বাতলে দিয়েছেন। সেখানে ব্যক্তিগত দু-একটি বিষয় ছাড়া জাতীয় ও সামষ্টিক সকল ক্ষেত্রেই মো’মেনদেরকে হুকুম দিয়েছেন, কোথাও আলাদা করে পুরুষদেরকে বা নারীদেরকে কোন হুকুম দেননি; যেমন- হে মো’মেনগণ! তোমরা সালাহ কায়েম করো, যাকাত প্রদান কর (সুরা বাকারা ৪৩), সওম পালন কর (সুরা বাকারা ১৮৩), হজ্জ করো (সুরা বাকারা ১৯৬)। আল্লাহ মো’মেনদেরকে মসজিদে গিয়ে সালাহ (নামাজ) কায়েম করতে বলেছেন এ ব্যাপারে কোর’আনে একাধিক আয়াত রয়েছে। আল্লাহ বলেন, আল্লাহর ঘর মসজিদ তো তারাই আবাদ করবে, যারা আল্লাহ ও পরকালের উপর ঈমান আনে, নামাজ কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, আর আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। আশা করা যায় এরা হেদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে” (সুরা তওবা-১৮)। আয়াতটিতে আল্লাহ তাদেরকে মসজিদের অধিকার দান করেছেন যারা ঈমানদার, যারা সালাত কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, এবং আল্লাহকে ছাড়া আর কাউকে ভয় পায় না। এখানে নারী পুরুষ আলাদাভাবে উল্লেখ করেননি। আর তাই আল্লাহর দেয়া হুকুম সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (দ.) একদল মো’মেন মোজাহেদ-মোজাহেদাদের নিয়ে দুনিয়াব্যাপী যে সংগ্রাম সূচনা করেছিলেন তার কেন্দ্রবিন্দু ছিল মসজিদে নববি। সেই নবগঠিত সভ্যতার সমস্ত কিছু পরিচালিত হয়েছে এই মসজিদ থেকে। জনসংখ্যা, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শি¶া, অর্থনীতিক, সামরিক, কূটনৈতিক, শত্রুদের গতিবিধি সম্পর্কে গোয়েন্দা তৎপরতা, যুদ্ধ পরিচালনা, আহতদের চিকিৎসাসহ হাজারো কর্মসূচি ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে এই মসজিদ থেকে। সেই মসজিদের সর্বত্র ছিল নারী পুরুষ সাহাবীরে পদচারণায় সর্বদাই সরগরম। 
প¶ান্তরে আমাদের সমাজের চিত্র সম্পূর্ণ উল্টা, এখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ব্যতীত মসজিদ অন্য কোন সামাজিক কার্যক্রমে ব্যবহার হয় না। অধিকাংশ মসজিদ নামাজের সময় ছাড়া বাকি সময় তালাবদ্ধ থাকে। মসজিদগুলোতে রাষ্ট্রীয় বা মানব কল্যাণকর কোন কাজের পরিকল্পনা দূরে থাক কোনো ধরনের দুনিয়াবী কথা বলাই নিষেধ। যেখানে মসজিদে নববিতে রসুল (সা.) এর খুতবার মাধ্যমে মানুষ মানবতা, ন্যায় ও সত্যের শিক্ষা লাভ করতেন, সেখানে আজকের সমাজে কিছু কিছু মসজিদে মিম্বরের মত পবিত্র জায়গায় দাঁড়িয়ে অন্যের সমালচনা আর প্রতিহিংসাপূর্ণ বক্তব্যের মাধ্যমে উগ্রতা বিস্তার করছে। নতুন একটি রাষ্ট্র যেটা নিয়ে সর্বদাই শত্রুর ষড়যন্ত্র চলছিল, সেই বিপদজনক পরিবেশেই যখন আল্লাহর রাসুল নারীদের মসজিদে যাওয়া শিথিল করেননি, তাহলে পরবর্তীতে কীসের অজুহাতে নারীদেরকে এমনভাবে মসজিদ থেকে বয়কট করা হল যে,  আমাদের বর্তমান সমাজের অধিকাংশ নারীরা জানেইনা যে, আল্লাহ তাদেরকেও মসজিদে যেতে বলেছেন। আজ অনেক মসজিদে এও লেখা থাকে যে নারীরা যেন মসজিদের পবিত্রতা রক্ষার্থে পার্শ্ববর্তী রাস্তা দিয়েও না হাঁটে। অথচ আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে কাউকে মসজিদে আসতে বাধা দেয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে নিষেধ করে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘যে কেউ আল্লাহ্র মসজিদেসমূহে তাঁর নাম স্মরণ করতে বাধা প্রদান করে এবং তাদের বিনাশ সাধনে প্রয়াসী হয় তাহার অপেক্ষা বড় জালিম কে হইতে পারে?’ (সুরা বাকারা ১১৪)।
আজকের এই আধুনিক সভ্য যুগে যখন নারীরা আকাশ-মহাকাশ চষে বেড়াচ্ছে, ঠিক তখন মুসলিম জনগোষ্ঠীর আলেম দাবিদাররা তাদের নারীদেরকে সামান্য মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দিতে আপত্তি করছে। যেখানে আজকের পাশ্চাত্যের নারীরা বিশ্ব পরিচালনায় ভূমিকা রাখছে, ঠিক সেই সময় মুসলিম জনগোষ্ঠীর কিছু মেয়ে কালেভদ্রে ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করতে পারছে দেখে খুশি থাকতে হচ্ছে। অথচ আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে আল্লাহর রসুল (সা.) আইয়্যামে জাহেলিয়াতের সমাজের মেয়েদেরকে ঘর থেকে বের করে জীবনমুখী করলেন। সে সময় নারীরা নবীর সাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করতেন। মহানবী (সা.) এর স্ত্রী উম্মে সালামা (রা.) বর্ণনা করেন, “রসুল (সা.) এর যুগে নারীরা সাধারণত ফরয নামাজ শেষে উঠে চলে যেতেন এবং রসুল (সা.) মাঝে মধ্যে পুরুষদের সাথে বসে থাকতেন” (বুখারী নামায অধ্যায় ১৯৫/২ এবং মুসলিম মসজিদ অধ্যায় ১১৮/২)। জুমার সালাতে অংশগ্রহণ করতেন, ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করতেন। এমন কি ঋতুর্বতী কারণে কোন নারীর সালাত না থাকলে তাকেও মসজিদে এসে খুতবা শুনতে হত। একজন নারীর পর্যাপ্ত কাপড় নেই বলার পরও আল্লাহর রসুল (সা.) সেই নারীকে মসজিদে আসার ব্যাপারে ছাড় দেননি, বলেছেন অন্য কারো কাছ থেকে ওড়না ধার করে মসজিদে আসার জন্য (উম্মে আতিয়া রা. থেকে বোখারি ও মুসলিম)। অর্থাৎ মসজিদের সকল কার্যক্রমে নারী-পুরুষের চলাফেরা ছিল সমাজের অন্যান্য অঙ্গনের মতই স্বাভাবিক। মসজিদ কেন্দ্রিক দান-সদকায় অংশগ্রহণ, মসজিদের কোন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তৈরিতে, মসজিদে আমন্ত্রিত কোন অতিথি আপ্যায়নে, অসুস্থ রোগীর সেবায়, মসজিদ পরিচ্ছন্ন রাখায় নারীদের অবদান ছিলো সর্বাগ্রে। রসুল (সা.) এর সময় মসজিদে নববি ঝাড়ু দিতেন একজন নারী। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, মসজিদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাজে নিয়োজিত সেই নারীর মৃত্যুতে রাসুল (সা.) তার জানাজায় অংশ গ্রহণ করতে পারেননি বিধায় পরবর্তীতে এই মহিলার কবরের কাছে তিনি তার জন্য জানাজার নামাজ আদায় করেন।
এছাড়াও নারীরা পুরুষ সাহাবীদের সাথেই রসুল (সা.) এর সামনে বসে শি¶া গ্রহণ করেছেন। প্রয়োজনে প্রশ্ন করে জেনে নিয়েছেন। কোন বিষয় বুঝতে অসুবিধা হলে পাশের পুরুষ সাহাবীদের কাছ থেকে জেনে নিয়েছেন। যার অসংখ্য উদাহরণ সিরাত গ্রন্থগুলোতে রয়েছে। নারীরা মসজিদে ইতেকাফে বসতেন। স্বয়ং রসুলের (সা.) এর স্ত্রীরাও মসজিদে ইতেকাফ বসেছেন (হাদিস আয়শা (রা.) থেকে বুখারী নারীদের ইতেকাফ অধ্যায়)। যুদ্ধাহত সৈনিকদের মসজিদে নববির তাঁবুর মধ্যে সেবা-শুশ্রূষা করেছেন নারী সাহাবিরা। এ কারণে রসুল (সা.) এর সৈন্য বাহিনীর চিকিৎসা বিভাগের প্রধান রুফায়দা (রা.) তাবু ছিল মসজিদে নববির সীমানার ভিতরে।  
রাসুল (সা.) এই মসজিদ ভিত্তিক বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে নারীদেরকে এমন যোগ্যতা সম্পন্ন করলেন, যে পরবর্তীতে এই নারীরা সমাজের সকল ক্ষেত্রে যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন। অথচ আজকে যেসব মসজিদে নারীদের যেতে দেওয়া হয়, সেখানে মসজিদের ভেতর নারী পুরুষের সাধারণ কথাবার্তাকেই অত্যন্ত স্পর্শকাতর হিসেবে দেখা হয়। রসুলের (সা.) সময় মসজিদে কিছু ঘটনা থেকে থাকলেও এ ধরনের সীমালংঘন মূলক ঘটনার কারণে নারী পুরুষের মধ্যে কথাবার্তা বলার যে প্রচলন ছিল, তাতে যেমন কোন পরিবর্তন আনা হয়নি, তেমনি মসজিদ কাঠামোরও কোন পরিবর্তন করা হয়নি। যার দ্বারা সীমালংঘন হয়েছে শুধু সেই নির্দিষ্ট নারী বা পুরুষকেই দোষারোপ করা হয়েছে। একবার এক সুন্দরী নারীর নজরে আসার জন্য কিছু লোক কখনো সামনের  কাতারে আবার কখনো পিছনের কাতারে দাঁড়াত। তখন আল্লাহ এই মর্মে আয়াত নাযিল করলেন, “নিশ্চয়ই আমি জানি, তোমাদের মধ্যে কে সামনে চলে যায় এবং কে পিছনে থেকে যায়” (সুরা ফিতর-১৫:২৪)। এখানে ল¶ণীয় বিষয় হল কিছু পুরুষ যখন মসজিদে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ করল তখন তাদেরকেই দায়ী করে উপদেশ প্রদান করা হল। মেয়েটার উপর কোনো দোষ চাপানো হয়নি। অথচ একই ধরনের ঘটনার ¶েত্রে বর্তমানে নারীদের মসজিদ আসার উপরই নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেওয়া হয়। ফতোয়া দেওয়া হয় যে, ‘নারীদের জন্য ঘরে নামাজ পড়াই উত্তম।’ কথা হচ্ছে, কিসের ভিত্তিতে তারা এ ধরনের ফতোয়া দিয়ে থাকেন, রাসুল (সা.) কি আদৌ এমন কোন কথা বলেছেন? হ্যাঁ রসুল বিশেষ একজন নারীকে লক্ষ্য করে বলেছেন, ‘তোমার জন্য জামায়াতে নামাজ পড়ার চেয়ে ঘরে নামাজ পড়া উত্তম’। পুরো ঘটনাটা কেউ উল্লেখ না করে কর্তিত লাইনটি উল্লেখ করে একজনকে দেওয়া নির্দেশ উদ্দেশ্যমূলকভাবে সকল নারীর উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। হাদিসটির প্রে¶াপট হল, মদিনার খাজরাজ গোত্রের একজন নারী সাহাবী যার নাম উম্মে হুমায়ীদ (রা.)। উম্মে হুমায়ীদ মসজিদে নববি থেকে অনেক দূরে মদিনার এক প্রান্তে বসবাস করত। নিজ এলাকায় মসজিদ থাকা সত্ত্বেও রসুলের পেছনে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে উম্মে হুমায়ীদ (রা) দীর্ঘ পথ হেঁটে আসতেন। যার ফলে সন্তান ও সংসারে সময় দিতে না পারায় তার স্বামীর সাথে দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হয়। স্বামী যখন রসুল (সা.) এর কাছে এই ঘটনা বর্ণনা করলেন তখন রসুলাল্লাহ সেই নারীর সন্তান ও পরিবারের সুবিধা বিবেচনা করে তাকে স্বামীর অনুরোধ মেনে নিতে পরামর্শ দিয়ে তাকে নিজ গোত্রের মসজিদ কিংবা ঘরে নামাজ আদায় করতে বলেছিলেন। এছাড়া এমন কোন প্রমাণ নেই যে নারীদের মসজিদে আসার সাধারণ নিয়মকে রাসুল (সা.) পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। বরং অনেকগুলো বর্ণনায় রসুল (সা.) উল্লেখ করেছেন নারী পুরুষ যে কেউ মসজিদে নববিতে এসে নামাজ পড়লে বিশেষ সওয়াব যাবে। 
সুতরাং আমরা দেখলাম কোর’আনে আল্লাহ কোথাও নারী-পুরুষকে আলাদা করে হুকুম দেননি। তিনি সাধারণভাবে মো’মেনদের উপর যা কিছু আদেশ করেছেন তা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য।  আর কোর’আনের প্রকৃত ব্যাখ্যা হল রসুলের জীবন। সেখানে দেখি তাঁর জীবনজুড়ে নারীদেরকে বহির্মুখী করার প্রমাণ বিদ্যমান। আল্লাহ ও রসুলের সিদ্ধান্ত স্পষ্ট হওয়ার পর যদি এখন পুরো পৃথিবীর সব আলেম ফকিহ মুফতি মুফাসসির একত্রিত হয়েও যদি নারীদেরকে মসজিদ থেকে বিতাড়িত করে ঘরবন্দী করতে চায় তাহলেও সেটা মানা যাবে না। জীবনের সকল কাজে নারীদের পরিপূর্ণ অংশগ্রহণ ও সক্রিয়তা ব্যতীত মুসলিম জাগরণ এবং মানব জাতির প্রতি সত্যিকারের অবদান রাখা কখনোই সম্ভব নয়।