
রংপুরে বন্ধুর হাতে গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালের বেডে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে প্রহর কাটছে মিজু ইসলাম নামে এক স্বর্ণ কারিগরের। বিষয়টি থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়ালেও এখন পর্যন্ত আটক হয়নি আসামী মাধব চন্দ্র।
জানা গেছে, বেতপট্টি এলাকায় পৃথক দুই দোকানে কাজ করার সুবাদে পরিচয় ঘটে স্বর্ণ কারিগড় মিজু ইসলামের সাথে স্বর্ণ কারিগড় মাধব চন্দ্রের। তাদের মধ্যে বেশ সখ্যতাও ছিল ঘনিষ্ট। এরই মধ্যে পাওনা টাকা চাওয়ার জেরে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পৌছাবে মিজু ইসলাম, তা কথনোই কল্পনাও করতে পারছে না সহকর্মীরাসহ মিজুর পরিবার। টাকা লেনদেনের বিরোধের বিষয়টি মেট্রো কোতয়ালী থানায় সাধারন ডায়রী (জিডি) করে মিজু ইসলাম।
এদিকে এ বিষয়ে মহানগর স্বর্ণ শিল্পী শ্রমিক ইউনিয়নেও সালিশী বৈঠক হয় বলে একাধিক সুত্র দাবি করেছে স্বজনরা। তবে বিষয়টি সুষ্ঠু সমাধান করতে পারেনি তৃতীয়পক্ষ । এরই জের ধরে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন অপর বন্ধু মাধব চন্দ্র। তারই জের ধরে চলে আসছিল দুই বন্ধুর মাঝে মনোমালিন্য। মিজুর বড়ধরনের ক্ষতি করার জন্য ফন্দি খুজতেছিলেন ক্ষুব্ধ মাধব চন্দ্র। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৭ সেপ্টেম্বর রাত প্রায় সোয়া ১০টারদিকে নগরীর বেতপট্টি ডিসি হকার্স মার্কেটের নিজ দোকান হতে বের হয়ে মসজিদের রাস্তায় হাটছিল স্বর্ণ কারিগড় মিজু ইসলাম। এসময় স্বর্ণ কারিগড় মাধব চন্দ্র মিজু ইসলামের পথরোধ করে অতর্কিত ভাবে মাধবের কোমরে থাকা দেশীয় রামদা হাতে নিয়ে মিজুর মাথায় আঘাত করলে মিজু মাথার আঘাতটি ঠেকাতে মিজুর হাত এগিয়ে দিতেই মিজুর হাতের কব্জি কেটে ঝুলে যায় ওই অবস্থায় মিজুর মাথায় আবারো কোপ মেরে মাধব চন্দ্র, এতে মাথার ডান দিকের কান ঘেঁষে কাধে আঘাত লেগে গুরুতর জখম হয়ে সেখানেই লুটিয়ে পড়ে মিজু। অবস্থা বেগতিক দেখে হামলাকারী মাধব পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা গুরুতর অবস্থায় মিজু ইসলামকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে সে হাসপাতালের বেডে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে প্রহর গুনছে।
এ ঘটনায় গুরুতর আহত মিজু ইসলামের স্ত্রী কুহুলিকা ওরফে কুহু বলেন, আমি আমার আহত স্বামিকে বাদি করে গত ৯ সেপ্টেম্বর একটি এজাহার দায়ের করি। পুলিশ এজাহার আমলে নিয়ে তাৎক্ষণিক ধারা- ৩৪১/ ৩২৩/ ৩২৬/ ৩০৭/ ৫০৬ মামলা রুজু করেন। যার মামলা নং-১৭। মামলা দায়েরের পর হতে হামলাকারি মাধব আত্মগোপনে রয়েছে। এখন পর্যন্ত ওই আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ প্রশাসন। তিনি আরো বলেন, আমার স্বামীর উপর হামলাকারি সন্ত্রাসী মাধবকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের মাধ্যমে বিচার দাবি করছে।
এছাড়াও গুরুতর আহত মিজুর মা মহেসেনা (৫২) জানান, মাধব ওর বন্ধু ছিল। বাসায় যাতায়াত ছিল, তাকেও আমি ছেলের মতোই দেখতাম। আমার বুক খালি করার চেষ্টা করি ওর কি ভালো হবে? আজ আমার ছেলের উপর হামলা করছে মাধব। তাকে গেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা পুলিশের দায়িত্ব। আমি হামলাকারি মাধবের বিচার চাই।
এদিকে রংপুর মহানগর স্বর্ণ শিল্পী শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ জরুরী সভা করে স্বর্ণ কারিগড় মাধব চন্দ্রের সদস্য পদ বাতিল করে। সংগঠনের সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান হিরু জানান, রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকান্ডে কোন সদস্য জড়িত থাকলে সংগঠন তার দায় দায়িত্ব নেবে না। তাই জরুরী সভা করে তার সদস্য পদ বাতিল করা হয়েছে। হামলাকারি মাধবকে গ্রেফতারের জোর দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।
এ ব্যাপারে রংপুর মেট্রো কোতয়ালী থানার এস আই সোহেল রানা বলেন, আসামী গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে, গত রাতেও মিঠুপুকুর এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে। আসামী ফোন ব্যবহার করছেনা তাই একটু সমস্যা হচ্ছে। তবে, সে যতোই চতুর হোক তাকে গেস্খফতার করা হবেই বলে মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের খামার গারাগ্রাম এলাকার মৃত আসাদুল হকের ছেলে মিজু ইমলাম। সে নগরীর জুম্মাপাড়া এলাকায় স্ত্রী, সন্তান ও মাকে নিয়ে বসবাস করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন এবং সন্ত্রাসী মাধব চন্দ্র নগরীর বাবুপাড়া রেলগেট এলাকার ভবেস চন্দ্রের ছেলে।