Date: May 02, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সারাদেশ / রাজশাহী / রেশন ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালের বস্তায় একই সীল, হয়রানির শিকার রেশন ব্যবসায়ীরা - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্...

রেশন ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালের বস্তায় একই সীল, হয়রানির শিকার রেশন ব্যবসায়ীরা

September 01, 2023 07:08:20 PM   জেলা প্রতিনিধি
রেশন ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালের বস্তায় একই সীল, হয়রানির শিকার রেশন ব্যবসায়ীরা

পি এম রতন, বগুড়া:
সরকারি রেশন ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালের বস্তায় একই রকমের সীল থাকায় কোনটি রেশনের চাল আর কোনটি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল এ নিয়ে দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি। এ বিভ্রান্তির কারণে অহরহ হয়রানির শিকার হচ্ছেন শাজাহানপুর উপজেলার রেশন ব্যবসায়ীরা। এমনকি রেশনের চাল কেনা-বেচা করতে গিয়ে চোরা কারবারি মামলায় আসামী হয়েছেন কেউ কেউ।

জানা যায়, গত ১০ আগষ্ট শাজাহানপুরের বি-ব্লক এলাকার রেশন ব্যবসায়ী আব্দুল খালেকের কাছ থেকে ১২ হাজার কেজি রেশনের চালসহ অন্যান্য মালামাল কিনেন বগুড়ার গাবতলী উপজেলার কুটামহিন গ্রামের মৃত হবিবর রহমানের ছেলে ভূষি-মাল ব্যবসায়ী মোন্তেজার রহমান (৩৫)। পরবর্তীতে ২৩ আগষ্ট তিনি ওই চাল বেচে দেন। ট্রাক যোগে উক্ত চাল গাবতলীর বালিয়াদীঘি থেকে শাজাহানপুরের মাঝিড়া বাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলে রাত সাড়ে ১২টায় বাগবাড়ি সড়কে পুলিশের চেকপোষ্টে ওই চাল আটক হয়। চালান সাথে না থাকায় ট্রাকের চালক, হেলপার, ভূষি-মাল ব্যবসায়ী মন্তেজারসহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে গাবতলী থানায় মামলা হয়।

রেশন ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক জানিয়েছেন, বগুড়া সেনানিবাস প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিগত সাড়ে ৪ দশকে শাজাহানপুরের মাঝিড়া, বি-ব্লক, সি-ব্লক ও জাঙ্গীরাবাদ ফুলতলা এলাকায় অর্ধশতাধিক রেশন কেনা-বেচার দোকান গড়ে উঠে। এসব দোকান মালিকগণ উপজেলা খাদ্য বিভাগ থেকে খুচরা খাদ্য শস্য কেনা-বেচার লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করে আসছেন। সৈনিকদের নামে বরাদ্দকৃত রেশনের অধিকাংশ মালামাল (চাল, ডাল, আটা, চিনি, লবন, তেল ইত্যাদি) চালানমূলে কিনে থাকেন রেশন ব্যবসায়ীরা। পরবর্তীতে খুচরা ক্রেতাদের কাছে উক্ত মালামাল তারা বিক্রি করেন। কখনও কখনও অনেক দূরের ক্রেতাও রেশনের এসব চাল কিনে ট্রাকযোগে নিজ এলাকায় নিয়ে যায়। কিন্তু চালের বস্তার গায়ে “শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’ খাদ্য অধিদপ্তর” কথাটি লেখা থাকায় রাস্তা-ঘাটে যে কেউ দাবি করে বসে উক্ত চাল সরকারি এবং সেগুলো চোরাকারবারি হচ্ছে। কেননা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালের বস্তার গায়েও ওই একই কথা লেখা আছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জনসাধারণের স্পষ্ট ধারণা না থাকায় ‘অমুকের গুদামে সরকারি চাল মজুদ আছে’ এমন তথ্য চলে যায় প্রশাসনের কাছে। তথ্য পেয়ে প্রশাসন চাল উদ্ধারে তৎপর হয়। এতে রেশন ব্যবসায়ীরা পড়েন  হয়রানিতে। বছর চারেক আগে রেশন ব্যবসায়ী আব্দুল খালেকের গুদামে বেশ কিছু রেশনের চাল ছিল। সে সময় কে বা কারা প্রশাসনকে তথ্য দেয় তার গুদামে ১৫শ’ বস্তা সরকারি চাল মজুদ আছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে সেখানে র‌্যাব-পুলিশ মোতায়েন করা হয়। দিনভর অভিযানের পর রাত ৯টার দিকে বগুড়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিশ্চিত করেন যে চালগুলো রেশনের। তবেই বেঁচে যান ওই রেশন ব্যবসায়ী।

মাঝিড়া এলাকার রেশন ব্যবসায়ী হেলাল সরকার জানান, ৩ বছর আগে সৈনিকদের থেকে কেনা রেশনের চাল আসছিল তার দোকানে। কিন্তু প্রশাসনের কাছে তথ্য যায় সরকারি চালের। তার দোকানে পুলিশসহ হাজির হন শাজাহানপুরের ইউএনও। পরে সেনানিবাসের গেটপাশ ও চালান দেখার পর তিনি ফিরে যান।

সরকারি রেশন এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তি ও রেশন ব্যবসায়ীদের হয়রানি সম্পর্কে জানতে চাইলে বগুড়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী সাইফুদ্দিন জানিয়েছেন, বিভ্রান্তি এড়াতে সরকারি খাদ্য গুদামগুলোকে ইতোমধ্যে এই মর্মে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, চাল বিতরণের সময় বস্তার গায়ে ‘বিতরণকৃত’ সীল দিতে হবে। উক্ত সীলে ‘সেনা’, ‘পুলিশ’, ‘খাদ্যবান্ধব’, টি.আর ইত্যাদি উল্লেখ থাকবে।

তিনি আরও বলেন, সরকারি গুদাম থেকে বিতরণকৃত চালের প্রতিটি বস্তার গায়ে খাদ্য অধিদপ্তরের সীল দেওয়া থাকে। এসব বিতরণের পর সীল দেওয়া বস্তাগুলো আর ফেরত নেওয়া হয়না। এসব বস্তা সাধারণ মানুষের হাতে থেকে যায়। তাই সরকারি সীল দেওয়া বস্তায় চাল থাকলেই যে সেটা সরকারি হবে এমনটা ভাবার সুযোগ নাই। তবে রেশনের চাল পরিবহণের সময় চালান সাথে রাখলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।