
সদ্য ঘোষিত শরীয়তপুরে জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো শরীয়তপুর-ঢাকা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে সংগঠনটির একাংশ। এতে ঈদযাত্রায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। দীর্ঘ সময় ধরে সড়ক অবরোধের ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে, আটকা পড়েছে শত শত যানবাহন। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, "আমাদের দেয়ালের পিঠ ঠেকে গেছে, তাই বাধ্য হয়ে সড়ক অবরোধ করছি।" কমিটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত ঈদের পরেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ ৩ বছর পর শরীয়তপুরে ছাত্রদলের ৩৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে এইচ.এম. জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক ও সোহেল তালুকদারকে সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কমিটি ঘোষণার পরই একাংশ এর বিরোধিতা শুরু করে। গত মঙ্গলবার কমিটি ঘোষণার পর এক পক্ষ আনন্দ মিছিল বের করলে অপর পক্ষ কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। পালং থানার সামনে দুই পক্ষের মিছিলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হামলার ঘটনা ঘটে, এতে অন্তত পাঁচজন আহত হন। এরপর থেকেই বুধবার ও বৃহস্পতিবার টানা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে এই বিক্ষুব্ধ অংশটি।
জেলা ছাত্রদল সূত্রে জানা গেছে, কমিটিতে আহ্বায়ক, সদস্যসচিব ছাড়াও ১৬ জন যুগ্ম আহ্বায়ক ও ১৭ জনকে সদস্য করা হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেলা ছাত্রদল কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। কমিটির এক অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন আহ্বায়ক এইচ.এম. জাকির ও সদস্যসচিব সোহেল তালুকদার। অন্যদিকে, বিক্ষুব্ধ অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন যুগ্ম আহ্বায়ক পান্থ তালুকদার, বাবু মাদবর, আফজাল খান, ও ইসহাক সরদার। এই পরিস্থিতি জেলা বিএনপিতেও বিভাজনের আশঙ্কা তৈরি করেছে এবং দ্রুত সমাধান না হলে বড় ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা করছেন অনেকে।
বিক্ষুব্ধ অংশের নেতা পান্থ তালুকদার ও তার অনুসারীদের অভিযোগ, সদ্য ঘোষিত কমিটিতে অছাত্র এবং বিবাহিতদের স্থান দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি, কমিটির আহ্বায়ক এইচ.এম. জাকির হোসেন একজন "শ্রমিক নেতা" ও দুই সন্তানের জনক, যা ছাত্রদলের গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী। তারা দ্রুত কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি ঘোষণার দাবি জানান, অন্যথায় লাগাতার কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন।
টানা সড়ক অবরোধে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। বৃহস্পতিবার চৌরঙ্গী মোড়ে যানজটে আটকে থাকা বাসযাত্রী সফিকুল ইসলাম বলেন, "এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বিক্ষোভে আটকে আছি। জরুরি কাজে বের হয়েও যেতে পারছি না। বাসে শিশুরাও রয়েছে। আমরা এই হয়রানি থেকে মুক্তি চাই।" আরেক যাত্রী ইকবাল হোসেন বলেন, "ঈদে বাড়ি ফিরছি, কিন্তু অবরোধের কারণে যেতে পারছি না। তীব্র গরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করা খুবই কষ্টকর।" ট্রাকচালক মোহাম্মদ রনি জানান, "গত দুইদিন ধরেই তাদের বিক্ষোভের কারণে আমাদের সময় নষ্ট হচ্ছে। ঈদের সময় সবাই দ্রুত বাড়ি ফিরতে চায়।"
বৃহস্পতিবার বিক্ষোভে অংশ নিয়ে ছাত্রদলের একাংশের নেতা বাবু মাদবর বলেন, "এটি বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনকের কমিটি, আমরা মানি না। কমিটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে, এমনকি ঈদের নামাজের পরেও বিক্ষোভ করব।" জনগণের ভোগান্তির বিষয়ে তিনি বলেন, "আমরা জনসাধারণের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমাদের দেয়ালের পিঠ ঠেকে গেছে, তাই বাধ্য হয়ে সড়ক অবরোধ করছি। আশা করি, এই কমিটি বাতিল হবে।"
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের সদ্য ঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক এইচ.এম. জাকির হোসেন বলেন, "একটি কমিটি হলে সবাই সন্তুষ্ট হয় না। কেন্দ্রীয় ছাত্রদল আমাকে এই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার দায়িত্ব দিয়েছে। কাউন্সিলের মাধ্যমে একটি সুশৃঙ্খল পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।"
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন জানান, "ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। খবর পেয়ে আমরা তাদের বুঝিয়েছি যে সামনে ঈদ, এতে জনদুর্ভোগ বাড়বে। তারা আমাদের কথা শুনে সড়ক ছেড়ে দিয়েছে।" তবে, বিক্ষোভকারীরা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।