
মৃত ব্যক্তির বৈধ উত্তরাধিকার নির্ণিত হয় সাকসেশন সার্টিফিকেট দ্বারা। সাকসেশন সার্টিফিকেট পাবার জন্য আদালতে আবেদন করতে হয়, যেটাকে আবার সাকসেশন মামলা বলা হয়। সাধারণত নিজেকে মৃত ব্যক্তির ব্যাংকে জমানো টাকা, কোম্পানির শেয়ার ডিবেঞ্চার, রয়্যালিটি, অস্থাবর সম্পত্তি ইত্যাদির বৈধ উত্তরাধিকার প্রমাণ করার জন্য প্রয়োজন হয় সাকসেশন সার্টিফিকেট। উত্তরাধিকারীদের মধ্যে নাবালক থাকলে জেলা জজের নিকট আবেদন করে তার আইনানুগ অভিভাবক নির্ধারণ করা হয়।
সাকসেশন সার্টিফিকেটের জন্য লাগবে:
ক. মৃত ব্যক্তির মৃত্যু সনদপত্র (Death Certificate)
খ. ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বা ওয়ার্ড কমিশনার প্রদত্ত ওয়ারিশান সনদ
গ. শেয়ার সার্টিফিকেট/ রয়্যালিটি প্রমাণপত্র/ ব্যাংক ব্যালেন্স বা জমার স্লিপ ইত্যাদি। বা কোন ঋণপত্র থাকলে (তিনি ঋণ দিয়েছেন/বা কারো কাছ থেকে টাকা পাওয়ার ডকুমেন্ট যা দেনাদার স্বীকার করে) তা জমা দিলেও হবে।
ঘ. আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট
ঙ. টাকার জন্য সাকসেশন সার্টিফিকেট চাওয়া হলে নির্ধারিত হারে কোর্ট ফি দিতে হবে।
চ. সাকসেশন সার্টিফিকেট গ্রহণের আবেদনের কোন সময়সীমা নির্দিষ্ট নেই।
আদালত মৃত ব্যক্তির নিকট আত্মীয়দের নোটিশ প্রদান করে কারো কোন দাবি/আপত্তি আছে কিনা তা জেনে নিয়ে থাকেন। কারো কোন আপত্তি থাকলে এই সময় আপত্তি দাখিল করা যায়। কারো কোন আপত্তি না থাকলে আদালত আবেদনকারীর অনুকূলে সাকসেশন সার্টিফিকেট প্রদান করে থাকে।
উত্তরাধিকারী/ সুবিধাভোগীর আবেদনের প্রেক্ষিতে উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী সনদটি ইস্যু করা হয়। ওয়ারিশ সনদের নিয়ম-কানুন উত্তরাধিকার আইন, ১৯২৫ (The Succession Act, 1925) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
এ আবেদন করার পর আদালত থেকে উত্তরাধিকার সনদের আবেদন মঞ্জুর করলে কোর্ট ফি দাখিল করতে হবে।
নিয়ম অনুযায়ী দাবিকৃত অর্থের পরিমাণ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হলে কোনো কোর্ট ফি দিতে হয় না।
কিন্তু ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত এক শতাংশ কোর্ট ফি দিতে হয়।
আবার এক লাখ এক টাকা থেকে যেকোনো পরিমাণ অর্থের ওপর দুই শতাংশ কোর্ট ফি জমা দিতে হয়। এভাবে আইনি প্রক্রিয়ায় এগোলে উত্তরাধিকার সনদ পাওয়ার মাধ্যমে ব্যাংকে রক্ষিত টাকা সহজেই তোলা যাবে।
মনে রাখা ভালো, ওয়ারিশ সনদ এবং সাকসেশন সার্টিফিকেট দুইটা দুই জিনিস। ওয়ারিশের সনদ অর্থাৎ ওয়ারিশ কারা কারা হবেন, সেটা আসলে নির্ধারণ করেন ওই কাউন্সিলর, এলাকার চেয়ারম্যান। আর সাকসেশন সার্টিফিকেট নিতে চাইলে ডেথ সার্টিফিকেট, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ওয়ারিশ সার্টিফিকেট নিয়ে আইনজীবীর কাছে যেতে হবে। এরপর আইনজীবী মামলা করে সার্টিফিকেট পেতে পারেন, এতে হয়রানির কিছু নেই।
লেখক:
এডভোকেট
শরীফ সালাহউদ্দীন আহমেদ
এলএল.বি (অনার্স) এলএলএম
জজ কোর্ট, ময়মনসিংহ।