
গাইবান্ধা সদর সংবাদদাতা:
গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলায় স্ত্রীকে ফেরত পেতে শ্বশুরবাড়ির পরিবারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন স্বামী। জানা যায়, স্ত্রীকে ফেরত পেতে গাইবান্ধা বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট-২ আদালতে পাঁচজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন সাঘাটার দিঘলকান্দি গ্রামের মো. মাসুদ করিম। পরবর্তীতে স্ত্রী মিনারা আক্তার মিমের যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলায় স্বামী মাসুদ করিমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে মিমের অভিযোগকে মিথ্যা দাবি করেছে মাসুদ করিম।
মাসুদের পরিবারের দাবি, স্ত্রীর পরিবারের চাপে নাটক সাজিয়ে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মিথ্যা মামলা করা হয়। সেই মামলায় মিনারা আক্তার মিম স্বামীসহ মোট পাঁচজনকে আসামি করে ১৬ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে সাঘাটা থানায় মামলা করেন, যার মামলা নম্বর-১৩। ওই মামলায় পুলিশ মাসুদ করিমকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করে। আদালতে পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হলে চারজনের জামিন মঞ্জুর হয়, তবে মাসুদ করিমের জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত।
জানা যায়, সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের দিঘলকান্দি গ্রামের মো. আবু হাসেম ব্যাপারীর ছেলে মাসুদ করিম এবং ঢাকা জেলার বাড্ডা থানার পূর্বপাড়া এলাকার মো. আব্দুল মান্নানের মেয়ে মিনারা আক্তার (মিম) দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্কের জেরে পারিবারিক সম্মতিতে ২১ মার্চ ২০২২ তারিখে ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন। বিয়ের পর সংসার ভালোই চলছিল। এরই ধারাবাহিকতায় আত্মীয়তার সুবাদে চলতি বছরের ৬ মার্চ মিনারার ভাই আলী হোসেন ব্যবসার কথা বলে মাসুদ করিমের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা ঋণ নেয় বলে অভিযোগ করেন মাসুদ করিম। এজন্য তিনি একটি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন। দীর্ঘ দুই বছর সংসার করার পর মিনারার ভাই ও বাবা-মায়ের পরামর্শে তিনি বাবার বাড়িতে গিয়ে আর স্বামীর কাছে ফিরে আসতে চাননি। মাসুদ করিম তাকে ফিরিয়ে আনতে চাইলে স্ত্রী তাকে বলেন, “টাকা নিয়ে অশান্তি করো কেন, আমি আর আসবো না।”
মাসুদের পরিবারের অভিযোগ, শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কুপরামর্শে মিনারা আক্তার বাবার বাড়িতে চলে গেলে আর তাকে আসতে দেয়নি। কারণ, তারা মাসুদের কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়েছেন। ছেলে দুশ্চিন্তায় ভুগলেও তারা পুত্রবধূকে নিয়ে আসেন। তবে কিছুদিন পর হঠাৎ মিনারার ভাই আলী হোসেন সাঘাটায় এসে মিনারাকে ঝগড়া করে বাড়ি নিয়ে যান। দুই-তিন দিন পর মাসুদ করিম স্ত্রীকে ফেরত আনতে চাইলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে আটকে রাখে।
স্ত্রী বাবার বাড়ি থেকে ফেরত না আসায় মাসুদ করিম স্ত্রীকে আনতে গেলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তাড়িয়ে দেয়। মাসুদ করিম বলেন, “আমি আমার স্ত্রীর ফোনে যোগাযোগ করলে সে ফোন রিসিভ না করে তার বাবা আব্দুল মান্নান ও ভাই আলী হোসেন রিসিভ করে আমাকে হুমকি দেয়। তারা বলে- আমার মেয়ে বা বোনকে নেওয়ার চেষ্টা করলে বা যোগাযোগ করলে তোকে দেখে নিবো।”
এরপর নিরুপায় হয়ে গত ১৪ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে মাসুদ করিম স্ত্রীকে ফেরত আনার জন্য এবং তাকে উদ্ধারের লক্ষ্যে গাইবান্ধার বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট-২ আদালতে পাঁচজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। তারা হলেন—আব্দুল মান্নান (৬০), আলী হোসেন (২৭), বিপ্লব মিয়া (৩২), তপন শরীফ (৪১) এবং বেলা রানী (৫৫)।
এ বিষয়ে বিবাদী মিনারা আক্তার মিমের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।