Date: April 29, 2024

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / এক্সক্লুসিভ / সোনাইমুড়ীতে পর্দা উঠল চাষীরহাট উন্নয়ন মেলার, স্মার্ট গ্রামের উন্নয়নযাত্রায় হাজারো মানুষের ঢল - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার...

সোনাইমুড়ীতে পর্দা উঠল চাষীরহাট উন্নয়ন মেলার, স্মার্ট গ্রামের উন্নয়নযাত্রায় হাজারো মানুষের ঢল

January 26, 2024 09:31:43 PM   স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
সোনাইমুড়ীতে পর্দা উঠল চাষীরহাট উন্নয়ন মেলার, স্মার্ট গ্রামের উন্নয়নযাত্রায় হাজারো মানুষের ঢল

রাকিব আল হাসান: 
আকাশ সংস্কৃতির কালো থাবা থেকে দেশীয় সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে এবং পারস্পরিক সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব বাড়াতে বরাবরের মতো এবারো জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে পর্দা উঠল সাত দিনব্যাপী চাষীরহাট উন্নয়ন মেলার। গতকাল শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) বিকেল ৩টায় নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী চাষীরহাট নুরুল হক উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মেলার শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়। 

ফিতা কেটে মেলার উদ্বোধন করেন সোনাইমুড়ীর কৃতী সন্তান, চাষীরহাট ইউনিয়নের উন্নয়নের রূপকার চাষীরহাট উন্নয়ন প্রকল্পের প্রধান উপদেষ্টা হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, আমরা ৪২ টি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। তার মধ্যে রয়েছে খাদ্য উৎপাদন, শিল্প কারখানা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি। আমাদের উৎপাদিত পণ্যের একটি প্রদর্শনি হচ্ছে এই মেলা। এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, উন্নয়নের বিকল্প নেই। উন্নতি-প্রগতি আল্লাহ পছন্দ করেন। দারিদ্র্য, বেকারত্ব আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয়। সবার মধ্যে সমবায়ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা ও অগ্রযাত্রার মানসিকতা সৃষ্টি করতেই এই আয়োজন। তিনি আরো বলেন, গ্রামের কৃষক-শ্রমিক আপামর জনতা সারাদিন কাজ করে মেলায় এসে পিঠা-পায়েশ খাবে, প্রয়োজনীয় জিনিস কিনবে, পরস্পরের সাথে দেখা হবে, কথা হবে, একটা মেলবন্ধন, সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য গড়ে উঠবে। এই ঐক্যচেতনা সৃষ্টি করাই মেলার অন্যতম একটি উদ্দেশ্য- জানান তিনি।

ymp-4190.jpg

তিনি বলেন, আমরা বিশ্ববাসীকে বার্তা দিতে চাই যে, আমরা বাঙালিরা নোয়াখালীবাসী তথা সোনাইমুড়ীবাসী উন্নয়নকামী ও অগ্রগামী। আমরা শান্তি-সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করি। আমরা সাম্প্রদায়িকতা, উগ্রতা, অন্ধত্বে বিশ্বাসী নই। এই গ্রামকে কিছুদিন আগেও বলা হতো অজোপাড়াগাঁ। এই গ্রামকে একটি স্মার্ট গ্রাম হিসেবে দেশ ও বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।  নোয়াখালীর প্রবেশদ্বারে চাষীরহাটে আয়োজিত এই উন্নয়ন মেলা ইতোমধ্যেই চাষীরহাটের সর্বসাধারণের প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছে। প্রথম দিনই দেখা গেছে উপচে পড়া ভীড়। চাষীরহাট ইউনিয়নসহ দূর-দূরান্ত থেকেও বহু দর্শনার্থী এসে ভীড় করে মেলায়। নানা ধরনের পণ্যে সুসজ্জিত ৬০টি স্টল স্থান পেয়েছে এবারের মেলায়। মেলার প্রধান আকর্ষণ ‘চাষীরহাট উন্নয়ন প্রকল্প’ এর উৎপাদিত নিজস্ব পণ্য। এর পাশাপাশি মেলায় স্থান পেয়েছে যশোরের বিখ্যাত খেজুরের গুড়, চাঁদপুরের ইলিশ, লক্ষ্মীপুরের নারিকেল, সুপারি, টাঙ্গাইলের চমচম, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, বগুড়ার দই, পাবনার ঘি, বরিশালের মুড়ি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কালাই রুটিসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ও বিক্ষাত পণ্য সামগ্রী। 

dji-0318.JPG

বরাবরের মতো এবারও মেলায় পাওয়া যাচ্ছে চাষীরহাট উন্নয়ন প্রকল্পের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান মেকদাদ এন্ড মেহরাদ এগ্রো ফার্মের অর্গানিক উপায়ে উৎপাদিত গরুর গোশত, খাশির গোস্ত, দেশী হাঁস, মুরগি ও বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ। এছাড়াও মেকদাদ এন্ড মেহরাদ এগ্রোফার্মের উৎপাদিত দুধ, দুগ্ধজাত পণ্য, দই, রসমালাইসহ হরেক রকমের মিষ্টিও পাওয়া যাচ্ছে। আরো পাওয়া যাচ্ছে কে আর ফ্যাশনের তৈরি প্রয়োজনীয় সব ধরনের পোশাক সামগ্রী। মেলায় রয়েছে নিজস্ব কৃষি প্রকল্পে উৎপাদিত শীতকালীন সকল প্রকার শাকসবজি ও ফলফলাদির সমাহার। ক্রেতা আকর্ষণ করতে মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের বেশ কিছু পণ্যে দিচ্ছে বিশেষ মূল্য ছাড়। তবে মেলার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো শীতকালীন ঐতিহ্যবাহী পিঠা-পুলির সমাহার। চাষীরহাট উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্যোগে হারিয়ে যেতে বসা বাংলার ঐতিহ্যবাহী নানা ধরনের পিঠা পায়েস বাসায় উৎপাদন করে এখানে প্রদর্শন ও বিক্রয় করা হচ্ছে। নকশী পিঠা থেকে শুরু করে শীতকালীন নানান রকমারী স্বাদের দেশীয় বিভিন্ন পিঠার রসগ্রহণ করা যাবে। এজন্য রয়েছে আলাদা পিঠা কর্নার।  
IMG_4569

 


উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর শরু হয় ধুম বেচা-কেনা। সুস্থ সংস্কৃতি বিকাশে সন্ধ্যার পর থেকে মেলার একাংশে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যেখানে হামদ, নাত, দেশাত্মবোধক গান, কবিতা ও শিশুশিল্পীদের নৃত্যসহ বেশ কিছু সাংস্কৃতিক আয়োজন দেখা যায়। 

IMG_4875
 

মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য এনামুল হক বাপ্পা জানান, ‘মেলায় প্রতিদিন থাকবে দেশের সনামধন্য শিল্পীদের অংশগ্রহণে হামদ্, নাত, দেশাত্মবোধক, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, জারি, সারি গান, সচেনতামূলক নাটিকা, কবিতা আবৃত্তি ইত্যাদির সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।’ 

IMG_4830
 

IMG_4625
 

মেলায় অংশগ্রহণকারী স্টলমালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে আশা করছেন ভালো বিক্রির। গতবারের তুলনায় অধিক বেচা-কেনা হবে বলে আশাবাদী তারা। 
সর্বপ্রকারের তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান কে আর ফ্যাশনের স্টল পরিচালক মুনিরুজ্জামান বলেন, ‘আজ প্রথম দিনই ভালো ক্রেতা ও দর্শনার্থীর ভীড় হয়েছে, বেচা-বিক্রিও ভালোই হয়েছে। আশা করছি বিক্রি আরও বাড়বে। গতবারও বেশ ভালো বেচাকেনা হয়েছে।’ 

থ্রি-স্টার গার্মেন্টসের মালিক মশিউর রহমান বলেন, ‘মূলত আমাদের প্রতিষ্ঠানের পরিচিতির জন্য এই মেলাতে আমরা স্টল দিই। এজন্য আমরা অত্যন্ত সুলভ মূল্যে এখানে পণ্য বিক্রয় করি। গতবছরও আমরা বেশ ভালো সাড়া পেয়েছিলাম, এবারও ভালো হবে বলেই আশাবাদী। এখন পর্যন্ত যথেষ্ট ক্রেতা আসছে।’ 

মেলার উদ্যোক্তা চাষীরহাট উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মো. মহি উদ্দীন বলেন, এটা মূলত চাষীরহাট উন্নয়ন প্রকল্পের প্রদর্শনী মেলা। গতবছর আমরা তিনদিনব্যাপী মেলা করেছিলাম। কিন্তু জনসাধারণের ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা ও চাহিদার কথা বিবেচনা করে এবারের মেলাটি আমরা সপ্তাহব্যাপী করার সিদ্ধান্ত নিই। আমাদের একটা অঙ্গীকার রয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে খাঁটি পণ্য সরবরাহ করার। কাজেই আমাদের পণ্য তো বটেই যারা সারাদেশ থেকে বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী পণ্য বিক্রয় করবে তাদের পণ্যের মানও আমরা নিয়ন্ত্রণ করব। মানুষের এখন বিশ্বাস উঠে গেছে ভেজাল খেতে খেতে, আমরা মানুষের সেই বিশ্বাস ফিরিয়ে আনব ইনশাল্লাহ। 

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপারে তিনি বলেন, মেলার শৃঙ্খলা নিয়ে আমরা শঙ্কিত নই, এলাকাবাসীও এটা জানেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আমাদের পর্যাপ্ত ভলেন্টিয়ার বাহিনী রয়েছে। 
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সোনাইমুড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী, কররানি ফুড লিমিটেডের সিইও কাজী জাহিদুল হক, সোনাইমুড়ী প্রেসক্লাবের সভাপতি খোরশেদ আলম, ৩নং চাষীরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাসেল চৌধুরী, ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার আবুল কাশেম ভূইঞা, ৩নং চাষীরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আলি ভুট্টো, ৩নং চাষীরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ফখরুল ইসলাম, ২নং ওয়ার্ডের মেম্বর আলমগীর হোসেন, ৩নং চাষীরহাট ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ফয়সাল মিয়াজী মিলন, ৩নং চাষীরহাট ইউনিয়ন যুব লীগের সাধারণ সম্পাদক আহম্মদ উল্যাহ নান্টু, বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম, চাষীরহাট বন্ধুমহলের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন সজল, ৩নং চাষীরহাট ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ওসমান গনি, ৩নং চাষীরহাট ইউনিয়ন বিএনপির (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) সভাপতি নুর নবী, স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম, ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ভূইঞা, ৩নং চাষীরহাট ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন প্রমুখ।

IMG_4943
 

উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ ও বাংলার ঐতিহ্য পিঠাপুলি পরিবেশন সর্বোপরি সপরিবরে উপভোগ করার মতো পরিচ্ছন্ন প্রদর্শনীর আয়োজন করে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছে এই মেলা। চাষীরহাট উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে মেলার আয়োজন করেছে চাষীরহাট উন্নয়ন পরিষদ। যারা সোনাইমুড়ী উপজেলার চাষীরহাট ইউনিয়নকে উন্নত, আধুনিক ও প্রযুক্তি সুবিধাসম্পন্ন একটি ডিজিটাল মডেল ইউনিয়ন হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস চালাচ্ছে। এই প্রকল্পের অধীনে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন, আবাসন, গার্মেন্টস, মৎস্য, কৃষি, ক্ষুদ্রশিল্পসহ ৪২টি উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে।