Date: April 30, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / জাতীয় / হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন কী বলছে? - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন কী বলছে?

March 30, 2025 12:56:32 PM   অনলাইন ডেস্ক
হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন কী বলছে?

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বিক্ষোভকারীদের ভয় দেখাতে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়েছে। পুলিশ মহাপরিদর্শক ও র‍্যাবের মহাপরিচালক স্বীকার করেছেন যে, র‍্যাবের হেলিকপ্টার থেকে বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তবে তারা নিশ্চিত করতে পারেননি যে, র‍্যাবের হেলিকপ্টার থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল কি না।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এই প্রতিবেদন বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের জন্য অনুবাদ করেছে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম।

জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ও পার্শ্ববর্তী গাজীপুরে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়েছিল। সেই সময় হেলিকপ্টারের ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন ওঠে, যা নিয়ে জাতিসংঘের সংস্থাটি তদন্ত করেছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিক্ষোভ দমনে হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছিল। বিশেষ করে র‍্যাবের কালো হেলিকপ্টার বিক্ষোভকারীদের ভীতি প্রদর্শন ও শক্তি প্রয়োগের জন্য ব্যবহার করা হয়। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিশেষভাবে বেশি সংখ্যক হেলিকপ্টার মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিলেন, যাতে র‍্যাবের পূর্বের কৌশলের মতোই বিক্ষোভকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ওএইচসিএইচআর জানায়, ১৮ জুলাই মিরপুর ও মহাখালী, ১৮ ও ১৯ জুলাই ধানমন্ডি, ১৯ জুলাই বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, রামপুরা ও শাহবাগ, ১৯ জুলাই এবং ২ ও ৩ আগস্ট বসুন্ধরা, ২০ জুলাই গাজীপুর এবং ২০ ও ২১ জুলাই যাত্রাবাড়ীতে একাধিকবার র‍্যাব বা পুলিশের হেলিকপ্টার থেকে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়। এছাড়া, ১৮ জুলাই রামপুরায় সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার ঘটনাও ঘটে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ১৯-২১ জুলাই সময়কালে বাড্ডা, বসুন্ধরা, গাজীপুর, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, মহাখালী, মোহাম্মদপুর ও রামপুরায় হেলিকপ্টার থেকে রাইফেল বা শটগানের মাধ্যমে প্রাণঘাতী গোলাবারুদ নিক্ষেপ করা হয়েছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। ৫ আগস্ট যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকায় একজন ব্যক্তি আর্মার-পিয়ার্সিং গুলির টুকরোর আঘাতে আহত হন, যা ওএইচসিএইচআর দ্বারা পর্যালোচনা করা হয়।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীদের ওপর হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নির্বিচার শক্তি ব্যবহারের উদাহরণ। এক সাবেক সিনিয়র কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন যে, এই ধরনের অস্ত্র নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে ব্যবহার করা সম্ভব নয়, যা গুরুতর আঘাত বা মৃত্যু ঘটাতে পারে।

হেলিকপ্টার থেকে গুলির বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক ও র‍্যাবের মহাপরিচালকের বক্তব্যও প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তারা স্বীকার করেছেন যে, র‍্যাবের হেলিকপ্টার থেকে টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়েছিল, তবে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল কি না, সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত নন। র‍্যাব জানিয়েছে, ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত তাদের হেলিকপ্টার থেকে ৭৩৮টি টিয়ার গ্যাস শেল, ১৯০টি সাউন্ড গ্রেনেড এবং ৫৫৭টি স্টান গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়েছিল, তবে কোনো রাইফেল বা শটগান ব্যবহার করা হয়নি।

ওএইচসিএইচআর একাধিক ভিডিও বিশ্লেষণ করেছে, যেখানে র‍্যাব ও পুলিশের হেলিকপ্টার থেকে টিয়ার গ্যাস লঞ্চার ব্যবহারের দৃশ্য দেখা গেছে। এই লঞ্চারগুলো দূর থেকে রাইফেল বা শটগানের মতো দেখাতে পারে, তবে টিয়ার গ্যাস ছোড়ার সময় সাদা ধোঁয়ার রেখা তৈরি হয়। তবে সংস্থাটি এমন কোনো ভিডিও সংগ্রহ করতে পারেনি, যেখানে স্পষ্টভাবে হেলিকপ্টার থেকে রাইফেল বা শটগান দিয়ে গুলি চালানোর প্রমাণ রয়েছে।

তবে, প্রত্যক্ষদর্শীরা যে সময়গুলোর কথা বলেছেন, তখন সরকার মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রেখেছিল। ফলে ওই সময়কার কোনো ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।

ওএইচসিএইচআর বলছে, তাদের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য নেই যে, হেলিকপ্টার থেকে রাইফেল বা শটগান দিয়ে গুলি চালানো হয়েছিল কি না। এটি সম্ভব যে, ওপর থেকে আসা কিছু গুলি উঁচু স্থানে অবস্থান নেওয়া বন্দুকধারীদের দ্বারা ছোড়া হয়েছিল, কিংবা আকাশে নিক্ষিপ্ত গুলি নিচে পড়ে কারও গায়ে লেগেছে বা কোনো বস্তুতে লেগে প্রতিক্ষিপ্ত হয়েছে। বিষয়টি আরও তদন্তের প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।