
ঢাকায় গত ৫ আগস্ট থেকে ২৯ জানুয়ারি, বুধবার পর্যন্ত ১৭৭ দিনে মোট ১৩৬টি আন্দোলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠন ও গোষ্ঠীর ব্যানারে এসব আন্দোলন সংঘটিত হলেও বেশিরভাগই ছিল অচেনা।
আন্দোলনকারীরা নিজেদের বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার হিসেবে রাস্তা অবরোধ এবং সচিবালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে ঘেরাও করে নানা দাবি তোলেন। এক দিনে ১৭টি স্পটে অবরোধের ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে সাধারণ জনগণকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে, বিশেষত যানজটের কারণে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, একদিকে যাদের সুবিধা ছিল, তারা এ মুহূর্তে তৃপ্ত, অন্যদিকে যারা সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত, তারা আন্দোলনের মাধ্যমে নিজেদের দাবির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এ ছাড়া, সরকারের নাজুক অবস্থার সুযোগ নিয়ে অনেকেই দ্রুত দাবি আদায়ের চেষ্টা করছে।
১৯ আগস্টের আন্দোলনটি ছিল ছাত্রজনতার গণ-অভ্যুত্থানের এক গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়ে স্থগিত হওয়া উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার পরিবর্তে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে ফল প্রকাশের দাবি ওঠে। এর বিপরীতে পরীক্ষার মাধ্যমে ফল প্রকাশের দাবি জানিয়ে আন্দোলন হয়। শেষে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমেই ফল প্রকাশ হয়, তবে যারা পাশ করতে পারেননি, তারা আবার আন্দোলনে নামে এবং শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করে।
এ দিন ১৯ আগস্টে রাজধানীজুড়ে ১৭টি স্পটে বিভিন্ন দাবিতে একযোগে অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়। আন্দোলনকারীদের মধ্যে কেউ চাকরি স্থায়ীকরণ, কেউ বদলি এবং নিয়োগ দাবি করেন।
২৫ আগস্টের শুরুতে আন্দোলনে নামে আনসারের সদস্যরা, তারা সচিবালয়কে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবরোধ করে রাখেন।
শুধুমাত্র রাজপথেই নয়, আন্দোলনকারীরা সচিবালয়সহ সরকারি অফিসে অবস্থান ধর্মঘট ও অনশনও পালন করেছেন। এসব আন্দোলনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের বঞ্চনা নিয়ে প্রতিবাদ এবং আদিবাসী শব্দ ব্যবহার নিয়ে পাঠ্যপুস্তকে আন্দোলন।
নতুন বছরের ২৮ দিনে মোট ৪০টি আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে। এই আন্দোলনের মধ্যে ছিল ৪৩তম বিসিএসে বাদ পড়াদের প্রতিবাদ, ৪০তম এসআই ব্যাচের অব্যাহতিপ্রাপ্তদের দাবি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন এবং পাঠ্যপুস্তকে আদিবাসী শব্দ ব্যবহারের প্রতিবাদ। এছাড়া বিডিআর সদস্যদের পরিবারের সদস্যরা এবং ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করেছেন।
মঙ্গলবার সারা দেশের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় রানিং স্টাফরা, যা আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রতিবাদ আন্দোলন ছিল।
বিশ্লেষকদের মতে, এসব আন্দোলন সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের হতাশা এবং বঞ্চনার প্রকাশ। একদিকে কিছু বিশেষ গোষ্ঠী সুবিধা পাচ্ছে, অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত জনগণ দাবি আদায়ে একত্রিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতি সরকারের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।