Date: April 30, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / খেলাধুলা / অবিশ্বাস্য স্বপ্নযাত্রায় পর্তুগালকে হারিয়ে সেমিতে মরক্কো - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

অবিশ্বাস্য স্বপ্নযাত্রায় পর্তুগালকে হারিয়ে সেমিতে মরক্কো

December 11, 2022 10:36:38 PM   ক্রীড়া ডেস্ক
অবিশ্বাস্য স্বপ্নযাত্রায় পর্তুগালকে হারিয়ে সেমিতে মরক্কো

শেষ ষোলোয় হ্যাটট্রিকের সুবাস ছড়ানো গনসালো রামোস এবার যতক্ষণ খেললেন, নিজের ছায়া হয়েই রইলেন। বদলি নেমে দলকে বাঁচাতে পারলেন না ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোও। প্রথমার্ধে ইউসেফ এন-নেসিরির করা গোলটিই শেষ পর্যন্ত গড়ে দিল ব্যবধান। স্বপ্নময় পথচলায় আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে উঠল মরক্কো। দোহার আল থুমামা স্টেডিয়ামে গত শনিবার তৃতীয় কোয়ার্টার-ফাইনালে পর্তুগালকে ১-০ গোলে হারিয়েছে মরক্কো। 
প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠে আগেই ইতিহাস গড়েছিল মরক্কো। এবার তারা গড়ে ফেলল আরও বড় কীর্তি, জায়গা করে নিল শেষ চারে, যেখানে পা পড়েনি আফ্রিকার আর কোনো দেশের। অবিশ্বাস্য এই পথচলায় ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে গোলশূন্য ড্রয়ের পর বেলজিয়াম ও কাডানাকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে নকআউটে জায়গা করে নেয় উত্তর আফ্রিকার দেশটি। এরপর শেষ ষোলোয় স্পেনকে টাইব্রেকারে হারিয়ে দেয় ৩-০ গোলে। এবার এই জয়। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে তারা মুখোমুখি হবে ফ্রান্সের সাথে। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে রোনালদোকে বেঞ্চে রেখে খেলতে নামা পর্তুগাল পঞ্চম মিনিটে প্রথম সুযোগ পায়। ব্রুনো ফের্নান্দেসের ফ্রি-কিকে জোয়াও ফেলিক্সের জোরাল হেড ঝাঁপিয়ে ব্যর্থ করে দেন গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনো।
দুই মিনিট পর সুযোগ আসে মরক্কোর সামনে। হাকিম জিয়াশের কর্নারে এন-নেসিরির হেড ক্রসবারের ওপর দিয়ে যায়। যদিও অফসাইডের বাঁশি বাজান রেফারি। ২৬তম মিনিটে আরেকটি সুযোগ পান এন-নেসিরি। এবার জিয়াশের ফ্রি-কিকে তার হেড লক্ষ্যে থাকেনি। চার মিনিট পর বক্সের বাইরে থেকে ফেলিক্সের জোরাল শটে বল মরক্কোর জাওয়াদ ইয়ামিকের গায়ে লেগে ক্রসবারের সামান্য ওপর দিয়ে যায়। ৪২তম মিনিটে এগিয়ে যায় মরক্কো। পর্তুগালের গোল হজমে যথেষ্ট দায় আছে গোলরক্ষক দিয়োগো কস্তার। বাঁ দিক থেকে ইয়াহিয়া আত্তিয়াত আল্লাহর ক্রস পোস্ট ছেড়ে এগিয়ে এসে পাঞ্চ করার চেষ্টায় হাতই ছোঁয়াতে পারেননি তিনি। পর্তুগালের এক খেলোয়াড়ের ওপর লাফিয়ে হেডে ঠিকানা খুঁজে নেন এন-নেসিরি।
মরক্কোর প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে তিন গোল করলেন সেভিয়ার ২৫ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। একটু পর সমতায় ফিরতে পারত ফের্নান্দো সান্তোসের দল। ডান দিক থেকে ফের্নান্দেসের ভলি ক্রসবার কাঁপিয়ে ফেরে।
প্রথমার্ধে ৬৬ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে গোলের জন্য পর্তুগাল শট নেয় পাঁচটি, যার একটি ছিল লক্ষ্যে। আর মরক্কোর সাত শটের দুটি লক্ষ্যে, একটি সফল। দ্বিতীয়ার্ধের চতুর্থ মিনিটে আরেকটি গোলও প্রায় পেয়ে যাচ্ছিল মরক্কো। জিয়াশ ফ্রি-কিকে বল বাড়ান বক্সে। নিজের সামনে দুই খেলোয়াড় লাফিয়ে ওঠায় মনঃসংযোগ হারিয়ে ফেলেন কস্তা। কোনোমতে বল বিপদমুক্ত করেন তিনি। একটু পরই জোড়া পরিবর্তন আনেন পর্তুগাল কোচ। রুবেন নেভেসের জায়গায় রোনালদো ও রাফায়েল গেরেইরোকে তুলে জোয়াও কানসেলোকে নামান তিনি। এতে আরেকটি রেকর্ডে নাম লেখান রোনালদো। আন্তর্জাতিক ফুটবলের সর্বোচ্চ গোল স্কোরার এবার সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডে কুয়েতের ফরোয়ার্ড বাদের আল-মুতাওয়ারকে ছুঁয়ে ফেললেন, ১৯৬ ম্যাচ।
সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করা রামোস ৫৮তম মিনিটে একটি সুযোগ পান। এই ফরোয়ার্ডের হেড লক্ষ্যে থাকেনি। ছয় মিনিট পর ফের্নান্দেসের জোয়াল শট ক্রসবারের সামান্য ওপর দিয়ে উড়ে যায়। ৮৩তম মিনিটে দুর্দান্ত সেভ করে জাল অক্ষত রাখেন বোনো। ডি-বক্সে ফেলিক্সের বাঁ পায়ের জোরাল শটে বল ক্রসবারের ওপর দিয়ে পাঠান তিনি। আট মিনিট যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে রোনালদোর শটও ঠেকিয়ে দেন বোনো। খানিক পর সব অনিশ্চয়তার ইতি টেনে দিতে পারতেন জাকারিয়া আবুখলাল। গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি তিনি। একেবারে শেষ মুহূর্তে বক্সে পেপের হেড বাইরে দিয়ে গেলে পর্তুগালের ঘুরে দাঁড়ানোর শেষ সম্ভাবনাও শেষ হয়ে যায়। উল্লাসে মেতে ওঠে মরক্কো শিবির।
রোনালদোর বিশ্ব জয়ের আশাও বলা যায় শেষ হয়ে গেল। ৩৭ বছর বয়সী তারকা টানেল দিয়ে চলে যান কাঁদতে কাঁদতে। মরক্কোর এমন সাফল্যে একজনের কথা উল্লেখ্য করতেই হয়- কোচ ওয়ালিদ রেগরাগি। বিশ্বকাপ শুরুর মাত্র তিন মাস আগে দায়িত্ব পান তিনি। আগের কোচের সঙ্গে দ্বন্দ্বে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় বলে দেওয়া জিয়াশকে ফিরিয়ে সমালোচনার মুখেও পড়েন তিনি। ৪৭ বছর বয়সী কোচের হাত ধরেই একের পর এক ইতিহাসের নতুন অধ্যায় রচনা করে চলেছে মরক্কো। রেগরাগির কোচিংয়ে এখনও পর্যন্ত আট ম্যাচ খেলে হারেনি দলটি। এই আট ম্যাচে তারা গোল হজম করেছে স্রেফ একটি, সেটিও বিশ্বকাপে কানাডার বিপক্ষে আত্মঘাতী। এটিই বলে দিচ্ছে, কতটা দুর্বার গতিতে ছুটছে তারা!