
মাঠে নামার আগে জয়ের সম্ভাবনা তো দূরে থাক, বরং কত গোলে হারবে সেটিরই হিসেব কষতে ব্যস্ত ছিলো সৌদি সমর্থকরা। তবে মাঠের খেলায় সব হিসাব-নিকাশ উলটে বিশ্বকাপের হট ফেভারিট আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে হারিয়ে আরব্য রজনীর ইতিহাসের পাতায় নতুন এক অধ্যায় যোগ করলো সৌদি আরব।
মরুর বুকে কাতারের মাটিতে প্রথম বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা এসেছিলো শিরোপার সবচেয়ে বড় দাবিদার হয়ে। আজ গ্রুপ-সি'তে নিজদেরে প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষেও পরিষ্কার ফেভারিট হিসেবেই মাঠে নেমেছিলো আলবিসেলেস্তারা। তবে লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে ফেভারিট আর্জেন্টিনাকে যেভাবে চমকে দিলো সৌদি আরব সেটি হয়তো ভাবেনি কেউ। প্রথমার্ধ শেষে সৌদি আরবের বিপক্ষে ১-০ গোলে এগিয়ে থাকে আর্জেন্টিনা। তবে বিরতি থেকেই ফিরেই জোড়া গোল করে ম্যাচে লিড নেয় সৌদি আরব। শেষ পর্যন্ত আর গোল না হলে ২-১ গোলে ম্যাচ জিতে ইতিহাস রচনা করে সৌদি আরব।
তবে, ম্যাচের শুরুতেই পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচে ৮ মিনিটে আর্জেন্টিনার ফরোয়ার্ডকে ফাউল করার কারণে পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। পেনাল্টি থেকে গোল করে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন মেসি। প্লেসিং শটে সৌদি আরবের গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন মেসি। এক গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচে লিড নিয়ে সৌদি আরবের ওপর আক্রমণ অব্যাহত রাখে আর্জেন্টিনা। সৌদি আরবও বেশ কয়েকটি পাল্টা আক্রমণ চালায়। তবে গোল করতে ব্যর্থ হয় তারা।
ম্যাচের ২১ মিনিটে ফের গোল করেন মেসি। তবে অফ সাইডের কারণে সেই গোল বাতিল হয়। ম্যাচের ২৭ মিনিটের ডিফেন্স চেরা পাসে বল পেয়ে গোল করেন মার্টিনেজ। তবে আবারও তা বাতিল হয় অফ সাইডের কারনণে। ফলে ব্যবধান বাড়ানো হয় না আর্জেন্টিনার। ম্যাচের ৩৫ মিনিটে আবারও গোল করেন মার্টিনেজ। কিন্তু আবারও অফ সাইডে বাতিল হয় গোল। এই নিয়ে অফ সাইডের কারণে ৩ টি গোল বাতিল হয় আর্জেন্টিনার। এরপর আরও কিছু আক্রমণ চালায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ৪২ মিনিটে ডি পলের নেওয়া শট চলে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে। শেষ পর্যন্ত আর কোন গোল না হলে ১ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা।
বিরতি থেকে ফিরেই গোল করে ম্যাচে সমতা আনে সৌদি আরব। ম্যাচের ৪৭ মিনিটে অসাধারণ গোল করেন আল সেহরি। ম্যাচে এখন ১-১ গোলে সমতা এনেছে সৌদি আরব। তবে ম্যাচেরে ৫৩ মিনিটে একক প্রচেষ্টায় অসাধারণ এক গোলে সৌদি আরবকে ম্যাচে লিড এনে দেন আল দাউসারি। ম্যাচে পিছিয়ে পড়ে গোল শোধে মরিয়া হয়ে খেলতে থাকে আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ৬২ মিনিটে গোলরক্ষকের দারুণ সেভে গোল বঞ্চিত হয় আর্জেন্টিনা। ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে খেলতে থাকে ম্যাচের ৭১ মিনিটে সুযোগ তৈরী করেও গোল করতে ব্যর্থ হয় আর্জেন্টিনা। শ্রোতের বিপরীতে কয়েকটি পাল্টা আক্রমণ চালায় সৌদি আরব। তবে গোলের দেখা পায়নি তারাও। ম্যাচের ৭৮ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে ফ্রি কিক পায় আর্জেন্টিনা। সেই ফ্রি কিক থেকে গোল করতে ব্যর্থ হয় লিওনেল মেসি। ম্যাচের ৮৩ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে বাড়ানো বলে মাথা ছোঁয়ান মেসি। তবে তা আটকে যায় সৌদি গোলরক্ষকের হাতে।
ম্যাচের ৮৯ মিনিটে সৌদি আরবের ডি বক্সের বাইরে আবারও ফ্রি কিক পায় আর্জেন্টিনা। তবে গোল করতে ব্যর্থ হয় তারা। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে গোলের খুব কাছে গিয়েও গোল করতে ব্যর্থ হয় আর্জেন্টিনা। শেষ পর্যন্ত আর কোন গোল না হলে ২-১ গোলে হেরে মাঠ ছাড়ে মেসিরা।
৮০ হাজার ধারণ ক্ষমতার লুসাইল স্টেডিয়ামের আর্জেন্টাইন গ্যালারিতে নেমে এল শ্মশানের নীরবতা। প্রায় হাজার পঞ্চাশ দর্শক স্টেডিয়াম ছেড়েছেন নিশ্চুপ হয়েই। অন্য দিকে সৌদি আরবের সমর্থকরা উল্লাস ছিল বিশ্বকাপ জয়ের মতোই। দুই বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারানো তাদের কাছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের শামিলই।
সৌদি আরবের কাছেই থেমেছে আর্জেন্টিনার ৩৬ ম্যাচে অপরাজিত থাকার যাত্রা। আর্জেন্টিনা ২০১৯ সালের জুনে চিলির বিপক্ষে কোপা আমেরিকায় ম্যাচ হেরেছিল। এরপর হারের স্বাদ পায়নি দলটি। লিওনেল স্কালোনির দল এই সময়ের মধ্যে ব্রাজিল, ইতালিকে হারিয়েছে। জার্মানিকে রুখে দিয়েছে। তাদের সেই যাত্রা কিনা থামল এভাবে! সৌদির কাছে হেরে।