
ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’-এর প্রভাবে দেশের ১৯টি জেলা ঝুঁকিতে আছে। উপকূলীয় এসব জেলায় একযোগে আঘাত হানবে সিত্রাং এবং এতে তিন থেকে পাঁচ ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সচিবালয়ে দুপুরে ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং ইস্যুতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। আগামীকাল সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে। তাতে ১৯টি জেলা ঝুঁকিতে আছে। এতে তিন থেকে পাঁচ ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি আকারে বড় হলেও দুর্বল হবে। তবে, সিত্রাং সুপার সাইক্লোনে রূপ নেবে না বলেও জানান তিনি। গত তিন বছরে যে ঘূর্ণিঝড়গুলো হয়েছে তার চেয়ে সিত্রাং-এর আঘাত হানার এলাকা অনেক বেশি।
প্রতিমন্ত্রী জানান, গভীর নিম্নচাপটির বর্ধিতাংশ, অমাবস্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যে আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলায় বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলাগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। কক্সবাজার থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত ৭৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়েই এটি আঘাত আনতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার।
ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, ‘সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী এর অবস্থান হলো ৮৮.৫ দ্রাঘিমাংশ এবং ১৬ অক্ষাংশ। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এটি ৮৭ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশ এবং ১৭ ডিগ্রি অক্ষাংশের সংযোগস্থলে পৌঁছার পর সরাসরি উত্তর-পূর্ব দিকে মোড় নিতে পারে। যদি উত্তর-পূর্ব দিকে মোড় নেয় করে তাহলে যে গতিপথ দেখানো হয়েছে এটি একেবারে কক্সবাজার থেকে সাতক্ষীরা উপকূলের সব (১৯টি) জেলায় আঘাত হানতে পারে। আর যদি এখন যে ডিরেকশন আছে, উত্তর-পশ্চিম দিকে যাচ্ছে, তাহলে এটি ভারতের ভুবনেশ্বর ও পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানবে। এখন পর্যন্ত এটাই আমাদের শেষ আপডেট।’
এদিকে নিম্নচাপের কারণে সাগর উত্তাল থাকায় সমুদ্রবন্দরগুলোতে তিন নম্বর সতর্কসংকেত এবং নদীবন্দরগুলোতে দুই নম্বর সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। এ সময় বঙ্গোপসাগর এবং গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার ট্রলারকে গভীর সাগরে বিচরণ না করে দ্রুত সময়ে তীরে ফিরতে অনুরোধ করা হয়েছে। আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (পঞ্চম) আরও বলা হয়, নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় উত্তাল রয়েছে সাগর।
সাতক্ষীরায় ঝুঁকিপূর্ণ ২০০ কিমি বেড়িবাঁধ:
বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাবে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং প্রভাব ফেলতে পারে সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলে। সাতক্ষীরা উপকূলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় মোট বেড়িবাঁধ আছে ৭০০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৩৫ পয়েন্টে ২০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় জনপদের মৎস্য ঘেরগুলো বেশ ঝুঁকিতে রয়েছে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, সাতক্ষীরা উপকূলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ৭০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে যার মধ্যে ২০০ কিলোমিটারের ৩৫টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ। ইতোমধ্যে আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো সংস্কার করা হয়েছে। তাছাড়া বাকি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় দুর্যোগ মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে সিত্রাং আঘাত আনতে পারে সাতক্ষীরা উপকূলে। শ্যামনগর উপজেলায় সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ১০৩টি। এছাড়া স্কুল, কলেজ, মাদরাসাসহ অন্য পাকা ভবনে আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ১৮০টি। এসব কেন্দ্রে প্রায় এক লাখ মানুষকে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব। তবে এ উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় ৩ লাখ। তাই পুরাপুরি সামাল দিতে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক হুমায়ুন করিব বলেন, উপকূলীয় উপজেলা প্রশাসনকে দুর্যোগ মোকাবিলায় অগ্রিম প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় জেলায় সাইক্লোন শেল্টারের সংখ্যা অনেক কম। আগামীতে নতুন করে আরও কিছু সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি গাবুরা ইউনিয়নের চারপাশে নতুন করে টেকসই বাঁধ নির্মাণে এক হাজার কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে টেন্ডার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি চলতি বছর নতুন বাঁধের কাজ শুরু হবে।