Date: April 30, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / বিশেষ নিবন্ধ / ইসলামের সোনালী যুগে কেমন নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল? - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

ইসলামের সোনালী যুগে কেমন নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

January 30, 2023 05:58:23 PM   সম্পাদকীয়
ইসলামের সোনালী যুগে কেমন নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

মোহাম্মদ আসাদ আলী

ইতিহাস মোতাবেক ইসলামের প্রথম চার খলিফার তিনজনই হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ায় অনেকে তদানীন্তন ইসলামী যুগের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে থাকেন। অনলাইনে আমি নিজেই বেশ কয়েকবার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি। যারা এসব প্রশ্ন করেন তারা এর মাধ্যমে ইসলামকে কাঠগড়ায় দাঁড়া করাতে যতটা আগ্রহী, ইতিহাসের নিরিখে ওই হত্যাকাণ্ডগুলোর প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করতে তার একাংশও আগ্রহী নন। 
চার খলিফার মধ্যে তিনজনই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন ঠিক, তবে তাতেই প্রমাণিত হয়ে যায় না যে, ইসলাম তদানীন্তন সমাজকে যথাযথ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছিল। যারা শাহাদাৎবরণ করেছিলেন অর্ধপৃথিবীর শাসক হওয়া সত্ত্বেও ওই খলিফারাই কিন্তু বছরের পর বছর খোলা আকাশের নিচে বডিগার্ড ছাড়া শুয়ে-বসে কাটিয়েছেন, বাজারে বাজারে পায়চারী করে বেড়িয়েছেন, রাত-বেরাতে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভালো-মন্দ খোঁজখবর নিয়েছেন। এমন দৃশ্য আজকের দুনিয়ায় কল্পনা করা যায়? হালের একজন রাষ্ট্রপ্রধানকেও পাওয়া যাবে না যে কিনা এক ঘণ্টার জন্য রাস্তায় বের হবে প্রচলিত নিরাপত্তাবলয় অর্থাৎ পাইক-পেয়াদা-পুলিশ-বডিগার্ড ছাড়া।
আজ আত্মাহীন-বস্তুবাদী জীবনব্যবস্থাগুলো মানুষের আত্মিক শক্তিকে নষ্ট করে দেহসর্বস্ব ভোগবাদী প্রাণীতে পরিণত করছে। মানুষ তার সামান্য খায়েশ মেটাতে হেন কাজ নেই যা করছে না। মানবতা হারিয়ে সমাজ হয়ে পড়ছে নিরাপত্তাহীন। কঠিন শাস্তির ভয় দেখিয়েও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ন্যায়-অন্যায়ের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িযেছে পেশীশক্তি। যার পেশীশক্তি আছে সে তুলনামূলক নিরাপদে থাকছে, যার পেশীশক্তি নেই তার নিরাপত্তাও নেই। এই পেশীশক্তিভিত্তিক হাস্যকর নিরাপত্তাব্যবস্থার অধীনে বসবাস করে ১৪০০ বছর পূর্বের ইসলামী সোনালী যুগের দিকে আঙ্গুল তোলা নির্বুদ্ধিতা ছাড়া কিছু নয়।
এটা ঠিক যে, বংশপরম্পরায় ভেজাল খেয়ে যাদের অভ্যাস, তাদেরকে নির্ভেজাল ভালো খাবারের স্বাদ বোঝানো সহজ নয়। ইসলামের অধীনে কেমন নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা বোঝার মত অবস্থা এখন অনেকেরই নাই। ওই সমাজ আজ কল্পনাও করা যায় না। আজকের এই হিংসা-বিদ্বেষ, ক্রোধ-প্রতারণার সাগরে আকণ্ঠ ডুবে থাকা মানুষের সংকীর্ণ চিন্তাভাবনায় আকাশের মত বিশাল ইসলামও ধরা দেয় সংকীর্ণ হয়ে। এর জন্য ইসলাম দায়ী নয়, দায়ী আমরাই।
আজকে আমাদের সমাজের নিরাপত্তা আবর্তিত হয় বুলেট-ব্যাটনকে ঘিরে। কিন্তু প্রকৃত ইসলামের যুগে মানুষ যে অভিনব নিরাপত্তা লাভ করেছিল তাতে বুলেট-ব্যাটনের স্থান ছিল না, ছিল না পুলিশের অস্তিত্বও। ইসলামে পুলিশের জায়গা নেই। জনগণই ছিল পুলিশ। নিজের ও প্রতিবেশির নিরাপত্তা র¶ার দায়িত্ব প্রত্যেকের উপর ন্যস্ত থাকে। বেতনের আশা করে কেউ এই দায়িত্ব পালন করে না। এই দায়িত্ব পালনের প্রেরণা আসে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার বাসনা থেকে। ইসলাম বিশ্বাস করে ভালোবাসায়, ভ্রাতৃত্বে, আত্মত্যাগে। যে দিতে পারে সে ধন্য হয়, যে গ্রহণ করে সে লজ্জিত হয়। অপরের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার মাঝে মু’মিনরা আত্মতৃপ্তি খুঁজে পায়। অপরের বিপদে-আপদে এগিয়ে আসাকে তারা ঈমানের অঙ্গ মনে করে।
সমাজের প্রত্যেকের অন্তরে ইসলাম এই ভালোবাসা, পরোপকারিতা ও আত্মত্যাগের প্রদীপ জ্বালাতে পেরেছিল বলেই এমন নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে, একা একজন সুন্দরী যুবতী মেয়ে রাতের অন্ধকারে শত শত মাইল পথ অতিক্রম করতে পারত, তার মনে বনের জন্তু-জানোয়ার ছাড়া আর কারও ভয় জাগ্রত হত না। অন্যদিকে মানুষের আত্মার সেই শক্তিকে নিষ্ক্রীয় করে ফেলে মানুষকে দেহসর্বস্ব ভোগবাদী জীবে পরিণত করার পরিণতি এই দাঁড়িয়েছে যে, আজ পিতার কাছেও কন্যা নিরাপদ নয়। মায়ের কোলে নিরাপদ নয় শিশু।