
গাজীপুর সংবাদদাতা:
আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশ। সরেজমিনে গাজীপুরের টঙ্গী, চৌরাস্তা, চান্দন, রাজেন্দ্রপুরসহ বিভিন্নস্থানে পুলিশের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। সড়কে বিভিন্ন প্রকল্পসহ নানা প্রতিবন্ধকতার মাঝেও যানজট থেকে মুক্তির জন্য কাজ করে যাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। ঈদ উপলক্ষে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ট্রাফিক বিভাগ নিয়মিতভাবে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে এবং অসংখ্য শাখা সড়কে সুশৃঙ্খলভাবে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে নিরলস দায়িত্ব পালন করছে।
জানা যায়, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের গুরুত্পূর্ণ মহাসড়ক টঙ্গী ব্রিজ হতে রাজেন্দ্রপুর অংশে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে প্রতি দিন গড়ে প্রায় ৫০-৬০ হাজার বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে। এছাড়াও অন্যান্য মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে চব্বিশ ঘন্টায় নিরবচ্ছিনভাবে বিপুল সংখ্যক গণপরিবহন ও পণ্য পরিবহন চলাচল করে।
জিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মোঃ ইব্রাহিম খান জানান, যানবাহনের শৃঙ্খলা আনয়নে জিএমপি ট্রাফিক বিভাগের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সড়কের উন্নয়ন প্রকল্পের চলমান নির্মাণ কাজ বিশেষ করে-বিআরটি, এক্সপ্রেসওয়ে, আব্দল্লাহপুর থেকে রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত ২৭ কিঃ মিঃ এবং উলুখোলা থেকে মিরের বাজার, ভোগড়া বাইপাস হয়ে জিরানী বাজার পর্যন্ত ২৯ কিঃ মিঃ। উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ভবিষ্যতের জন্য সহায়ক হলেও বর্তমানে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছে। চলমান নির্মাণ কাজের জন্য স্টেশন কেন্দ্রিক রাস্তার প্রশস্ততা হ্রাস, খানা-খন্দের সৃষ্টি, রোড ডিভাইডার না থাকা, বর্ষাকালে ড্রেনেজ সিস্টেম যথাযথভাবে কার্যকরী না হওয়ায় নীচু অংশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ধীরগতি ও যানজট দুঃসহনীয় পর্যায়ে নিয়ে যায়। তদুপরি সড়ক যানজট মুক্ত করতে এবং শৃংখলা আনয়নে নিরলস প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ । মহাসড়কে ব্যাটারি চালিত, ইঞ্জিন বিহীন স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল যানজট থেকে মুক্তি পাওয়ার পথে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গাজীপুর মহানগর বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম উৎপাদন কেন্দ্র। বাংলাদেশের অধিকাংশ গার্মেন্টস, ওষধ কারখানা ও অন্যান্য উল্লেখ্যযোগ্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের অবস্থান গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মধ্যে হওয়ায় প্রায় ৬৫ লক্ষ লোকের কাত্খিত নাগরিক ও পুলিশি সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ৩২৯.৯০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনে ৮ (আট) টি থানা নিয়ে গাজীপুর গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) এর কার্যক্রম শুরু হয়।
জিএমপি সূত্র আরও জানায়, গত ১৪ জুলাই ২০২২ সাল থেকে চলমান এই অভিযানে ৮,৮৩৭ টি গাড়ির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন দেওয়া হয় এবং ৯,৬৪৯ টির অধিক ইঞ্জিন চালিত/ইঞ্জিন বিহীন যানবাহন আটক করে ডাম্পিং ইয়ার্ডে প্রেরণ করা হয়। এতে করে গাজীপুর মহাসড়কের শৃংখলার নাটকীয় উন্নতি সাধিত হয়। গত ১১/০৪/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ হতে পুলিশ হেডকোয়াটার্স এর নির্দেশনা মোতাবেক ফিটনেসবিহীন গাড়ি, ওভারলোড গাড়ি এবং স্টীকারযুক্ত ১,০৭৭ টি গাড়ি চেকিং করতঃ ২০৬ টি গাড়ির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বর্তমানে ঢাকার আব্দুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ২০-৩০ মিনিটের মধ্যে যাতায়াত করা যায়, যা পূর্বে আড়াই থেকে তিন ঘন্টা সময় লাগতো ।
জিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মোঃ ইব্রাহিম খান আরও বলেন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন এরিয়ায় বিদ্যমান সড়ক ও মহাসড়ক ময়মনসিংহ বিভাগের প্রবেশদ্বারের পাশাপাশি সিলেট, চট্টগ্রাম, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অধিকাংশ জেলার গণপরিবহন ও পণ্য পরিবহনের চলাচলের মাধ্যম এবং বিপুল সংখ্যক অন্যান্য জেলার কর্মজীবী লোকের আবাসন্থল হওয়ায় ঈদের সময় জিএমপি ট্রাফিক এরিয়া বাংলাদেশের অন্যতম ব্যস্ত ইউনিটে পরিণত হয়। ফলশ্রুতিতে, আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরে জিএমপি এরিয়ায় যানজট সহনীয় পর্যায় ও সড়ক/মহাসড়কের শৃঙ্খলা বজায় রাখাই ট্রাফিক বিভাগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।