Date: June 07, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / জাতীয় / ঈদ-উল-আজহার বাণী: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ হোক মুসলিম উম্মাহর ঐক্যসূত্র - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

ঈদ-উল-আজহার বাণী: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ হোক মুসলিম উম্মাহর ঐক্যসূত্র

June 06, 2025 07:04:05 PM   অনলাইন ডেস্ক
ঈদ-উল-আজহার বাণী: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ হোক মুসলিম উম্মাহর ঐক্যসূত্র

প্রিয় দেশবাসী, 
সবাইকে জানাই ঈদ-উল-আজহার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। সময়ের পরিক্রমায় জিলহজ মাসের দিনগুলো আজ এমন একটি সময়ে আমাদের সামনে এসে পড়েছে যখন সমগ্র পৃথিবীজুড়ে চলছে অন্যায়, অবিচার, যুদ্ধ, রক্তপাত ও হানাহানি। বিশেষ করে মুসলমান জাতির দুঃখজনক ও হতভাগ্য অবস্থার দিকে তাকালে দেখা যায়, সারা বিশ্বে মুসলমানরা জাতিগতভাবেই অপমানিত ও লাঞ্ছিত হচ্ছে। ঠিক যে সময়ে আমরা বাংলাদেশে ঈদের আনন্দ করছি, গরু কিনছি, সন্তানাদি নিয়ে গোশত খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি তখন ফিলিস্তিনের লক্ষ লক্ষ মুসলমান উদ্বাস্তু শিবিরে এক ফোঁটা পানি কিংবা এক লোকমা খাবারের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে। এমনকি ত্রাণশিবিরে খাবারের লাইনে দাঁড়ানো মানুষদের উপর মেশিনগান চালিয়ে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। কী নির্মম! সেখানে বহু পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। তাদের বাড়িঘর নেই, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই, এক কথায় কিছুই নেই। পৃথিবীর ইতিহাসের বর্বরতম ন্যাক্কারজনক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে চলেছে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের উপরে। অথচ বিশ্ব নীরব, মুসলমানরাও নীরব। কারো যেন কিছু করার নেই। এদিকে মিয়ানমার থেকেও প্রায় বাইশ লাখ মুসলমানকে তাড়িয়ে দিয়ে উদ্বাস্তুতে পরিণত করা হয়েছে। কোটি কোটি মুসলমান আজ নিপীড়িত ও উদ্বাস্তু। প্রশ্ন হচ্ছে, এর কি কোনো শেষ নেই? এই লাঞ্ছনাই কি আমাদের নিয়তি? এই অভিশাপই কি আমাদের ভাগ্য? অন্য জাতির হাতে মার খাওয়া, সন্তানদের নিহত হওয়া, নারীদের অসম্মানিত হওয়াই কি আমাদের ভবিতব্য? কিন্তু পবিত্র কোরআন তো তা বলে না।

কোরআন বলছে, আমরা সেরা জাতি, আমাদের উত্থান হয়েছে মানবজাতির কল্যাণের জন্য, সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য (সুরা আল ইমরান ১১০)। তাহলে আমাদের এই করুণ পরিণতি কেন? কোরআন তো বলে, মোমেনদের দুনিয়াতে খেলাফত ও শাসনক্ষমতা দেওয়া হবে। দুনিয়াতে শাসন কর্তৃত্ব মোমেনদের হাতে থাকবে, বিজয় মোমেনদের হবে (সুরা নুর ৫৫)। কারণ মোমেনদের সাথে আল্লাহ থাকবেন। কিন্তু সেটা কোথায়? তাহলে প্রশ্ন আসে আমরা কি তবে আল্লাহর রহমত ও বরকত থেকে বঞ্চিত হয়েছি? হ্যা, এই প্রশ্নের উত্তরই আজ ঈদ-উল-আজহার এই পত্রিকার মাধ্যমে আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করছি। একটি জাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হলো জাতীয় ঐক্য। এই জাতীয় ঐক্য যখন ধ্বংস হয়ে যায় তখন জাতির আর অন্য কিছুর অস্তিত্ব থাকে না। জাতির সদস্যরা যখন নিজেরা নিজেরা হানাহানিতে লিপ্ত হয় তখন সবকিছু শেষ হয়ে যায়। যেটা আজকে  আমাদের হয়েছে। আজকে যদি আমরা বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে তাকাই তাহলে দেখি, যে দেশে আমরা বসবাস করছি, যে দেশে আমরা বড় হয়েছি, আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ সেখানে আজকে সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা হুমকি তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের ইন্টেরিম সরকার প্রধানও বলেছেন, একটা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হবে। সেনাপ্রধানও সবাইকে সতর্ক করেছেন। কথা হচ্ছে এই নিরাপত্তা সংকটটা কেন? আমরা দেখেছি আমাদের পার্শ্ববর্তী একটি রাষ্ট্রের প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের উপর আধিপত্য বিস্তারের পরিকল্পনা, সাম্রাজ্যবাদী অস্ত্রব্যবসায়ী পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলির আধিপত্য বিস্তার, প্রভুত্ব কায়েমের অশুভ প্রতিযোগিতা এখানে চলছে।

এটার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাখাইন রাজ্যের নতুন সংকট, রাখাইন আর্মির হুমকি ও ষড়যন্ত্র। আর দেশের অভ্যন্তরেও তৈরি হয়েছে অরাজকতা। নতুন নতুন রাজনৈতিক দল, প্রতিনিয়ত মব, সন্ত্রাস, মারামারি, হানাহানি, রাস্তা অবরোধ করে রাখা, মিছিল, হামলা, পাল্টা হামলা, একদলকে পিটিয়ে মেরে-কেটে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। আরেক দল আবার রাজনীতির ময়দানে অবতীর্ণ হচ্ছে, তারা আবার পূর্বসূরীদের মতই চলছে। এর মধ্যে দিয়ে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। বাংলাদেশ আজ ঋণের এক বিশাল জালে আবদ্ধ। তো এই যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি। এখানেই তো শেষ নয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম প্রতিদিন হু হু করে বাড়ছে। মানুষের জীবন নাভিশ্বাস। এ বছর কোনো কোনো জায়গায় এক কেজি গরুর গোশতের দাম এক হাজার টাকার উপরে উঠেছে। এক কেজি গোশত এক হাজার টাকা! কল্পনা করা যায়! এক কেজি গোশতে মাত্র ৮-১০ টুকরো হয়, যা আটজন মানুষও খেতে পারে না। সেই গরুর গোশত এক হাজার টাকা হয়েছে। সেটা যে আগামী দিনে দশ হাজার টাকা হবে না, তা কেউ বলতে পারে না। তাই এমন একটি শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় একদিকে নিরাপত্তা নেই, অন্যদিকে মানুষের জীবনধারণ খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে নিত্যনতুন ট্যাক্সের বোঝা এবং বাইরের শক্তির হাতে আমাদের নিরাপত্তা সংকট ও হুমকি। সবকিছু মিলিয়ে মানুষ আজ এক ভয়াবহ মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছে। এই চাপ থেকে মুক্তির জন্য আমরা বলতে চাই, আল্লাহ তালার পক্ষ থেকে একটি মহান আদর্শ, গাইডলাইন, সঠিক পথ আল্লাহ আমাদেরকে দিয়েছেন। হেযবুত তওহীদ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী তিনি এই রূপরেখা আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন যে, মুসলমানদেরকে যদি আবার আল্লাহর তওহীদের উপরে ঐক্যবদ্ধ করা যায় অর্থাৎ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ আল্লাহর বিধান ছাড়া আমরা কারো বিধান মানি না এই কথার উপর ঐক্যবদ্ধ করা যায় তবেই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব। এই একটা কথা হলো ঐক্যের সূত্র। এটাই হলো ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্ল্যাটফর্ম। ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পতাকা। এই কথার উপরে যদি আমরা ইস্পাতের মতো ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, সকল ধর্মীয় ভেদাভেদ, রাজনৈতিক মতো পার্থক্য ভুলে একজন সত্যনিষ্ঠ নেতার নেতৃত্বে একটা মহাজাতি গড়ে তুলতে পারি, তাহলে আমাদের মুক্তি সম্ভব। আর আমাদের কোন ক্ষতি হবে না।

তাছাড়া এখন হজ চলছে। এই হজের প্রকৃত তাৎপর্য কী?  হজ উপলক্ষে আমরা যে ঈদের দিনে কোরবানি করছি। এই কোরবানির তাৎপর্য কি? তা আমরা জানি না। হজ মুসলিম উম্মাহর আধ্যাত্মিক এবং জাগতিক একটি শিক্ষাকেন্দ্র। আধ্যাত্মিকভাবে আল্লাহর কাছে বান্দার হাজির হওয়ার অর্থাৎ তার জীবন ও কর্মফলের জবাবদিহি করার একটি অনুপ্রেরণা, একটা মহড়া, একটা প্র্যাকটিস হচ্ছে হজের ময়দান। আর আরাফাতের ময়দানে একত্রিত হওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলিম উম্মাহ একজন নেতার নেতৃত্বে তাদের সমস্যার সমাধান করবে। সংকটের সমাধান করবে। যেন জাতিসংঘে যাওয়ার প্রয়োজন না হয়। জাতিসংঘ আমাদের নয় জাতিসংঘ ওদের। আমাদের জন্য আরাফাতের ময়দান। কিন্তু আজকে আমরা আরাফাতের ময়দানে সমস্যা সমাধানের জন্য যাই না। এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক। হজের শিক্ষা ছিল জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা। একজন নেতার নেতৃত্বে মহাজাতি তৈরি করা। মুসলমানদেরকে ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে যাবতীয় সংকট থেকে মুক্ত করে আল্লাহর খেলাফতের দিকে ধাবিত করা। এটা ছিল হজের উদ্দেশ্য। অন্যদিকে কোরবানির যে শিক্ষাটা ইব্রাহিম (আ.) পুত্র ইসমাইলের (আ.) স্মৃতির সাথে জড়িত তার শিক্ষাটা হচ্ছে মূলত আল্লাহর রাস্তায় জান এবং মাল কোরবানি দিয়ে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা। অর্থাৎ ইবলিশের চ্যালেঞ্জে আল্লাহকে বিজয়ী করার প্রশিক্ষণ। আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, রক্ত, গোস্ত তো আমার কাছে পৌঁছায় না। আমার কাছে পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। তাকওয়ার অর্জনই এখানে মুখ্য। পশু কোরবানি হচ্ছে কেবলই আল্লাহর রাস্তায় জান-মাল কোরবানি করার একটি প্রশিক্ষণ।  

সুতরাং, আজ আমাদের প্রয়োজন কোরবানির প্রকৃত তাৎপর্য ও হজের মূল উদ্দেশ্য গভীরভাবে অনুধাবন করা। আজকে আমরা ইমানের এই দায়বদ্ধতা থেকে ঘরে বসে থাকতে পারিনি। এটা আমাদের ঈমানী কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে যে সাধারণ মানুষের কাছে এই সচেতনতা, বার্তা পৌঁছে দেওয়া। আল্লাহর এই বাণী যে, আল্লাহর দেওয়া জীবনবিধান প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া আমাদের জীবনে শান্তি আসবে না। আমরা পাশ্চাত্য জীবন দর্শনের অনুসরণ তো অনেক করেছি। অনেক তন্ত্র মন্ত্র চর্চা করেছি। এখন আর না। এখন আমাদেরকে ফিরতে হবে। প্রত্যাবর্তন করতে হবে। এটার নাম তওবা। এই প্রত্যাবর্তনের জায়গাটাই হলো আল্লাহর দেওয়া দীন প্রতিষ্ঠা করা। সেই মহান লক্ষ্যকে সামনে রেখেই আমরা ‘হেযবুত তওহীদ’ আন্দোলন গড়ে তুলেছি, সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ও নিঃস্বার্থভাবে আমরা কাজ করে চলেছি। আমাদের এই পত্রিকাটি কেবল একটি সংবাদপত্র নয়। এটি একটি আদর্শিক পত্রিকা, যেখানে এক মহান আদর্শের বার্তা প্রচার করা হয়, সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে। এই পত্রিকার বিক্রয়কর্মীরাও নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেন। তাই আমরা সকলের সহযোগিতা কামনা করি। আমি অভিনন্দন জানাই সেইসব বিক্রয়কর্মী, সংবাদপত্র অফিসের কর্মী এবং প্রেসকর্মীদের, যারা ঈদের ছুটিতেও কষ্ট করে এই কাজ করে যাচ্ছেন। আল্লাহ যেন আপনাদের সবাইকে কোরবানির সওয়াব দান করেন। আমাদের পাঠকদেরও জানাই অভিনন্দন, যারা নিয়মিত আমাদের পত্রিকা পড়েন। কিছু কিছু জায়গায় মতবিরোধ বা মতভেদ থাকতে পারে, আমাদের সম্পর্কে ভুল প্রচার, অপপ্রচার বা বিভ্রান্তিমূলক বার্তার কারণে। এসবের ফলে অনেক সময় আমাদের কর্মীদেরও হেনস্তার শিকার হতে হয়। এক্ষেত্রে দেশের জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, গণমাধ্যমকর্মী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আমি বিনীত অনুরোধ করব আপনারা দয়া করে তাদের নিরাপত্তার দিকে দৃষ্টিপাত করুন।

সর্বোপরি আমার কামনা হলো, আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে কোরবানির প্রকৃত শিক্ষা ধারণ করার তৌফিক দান করেন। আল্লাহর বান্দা হিসেবে আমরা যেন আল্লাহর খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাঁর হুকুমের আনুগত্য করতে পারি। আমরা চাই, আখেরি নবী (সা.)-এর ওপর অবতীর্ণ আদর্শ মোতাবেক রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালিত হোক। সবাইকে আল্লাহ সুস্থ রাখুন, সমস্ত বিপদ-আপদ বিশেষ করে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসী ও তৎপরতা থেকে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলার মাটিকে হেফাজত করুন। আমরা জেগে আছি, আমরা রাস্তায় আছি। আমরা ঘুমিয়ে যাইনি, আমরা জাগ্রত আছি, জাগানোর চেষ্টা করছি। আমরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছি, ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছি। আমরা নিজেরা কোরবানি হওয়ার জন্য চেষ্টা করছি এবং নিজেদের সমস্ত সম্পদ কোরবানি করার জন্য আমরা নেমেছি। শুধু আপনাদের দোয়া চাই, আশীর্বাদ চাই। আর আল্লাহর সাহায্য এবং করুণা আমাদের পাথেয়। আল্লাহ সবাইকে হেফাজত রাখুক। আবারও সবাইকে ঈদ মোবারক জানাচ্ছি। ঈদ মোবারক, আল্লাহ হাফেজ, সালামুআলাইকুম ওয়া রহমাতাল্লাহি ওয়া বারকাতুহু।    

-হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম, এমাম হেযবুত তওহীদ