
রংপুর তথা উত্তরাঞ্চলে উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ, ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠীর আস্তানা গড়তে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন হেযবুত তওহীদের রংপুর ও রাজশাহী বিভাগীয় আমির মো. মশিউর রহমান। গতকাল নীলফামারীর সৈয়দপুরে জি. আর. পি পুলিশ ক্লাবে ধর্মান্ধতা, উগ্রবাদ, ধর্মব্যবসা, সাম্প্রদায়িকতা, গুজব-সন্ত্রাস ও রাজনৈতিক সংকট মোকাবেলায় করণীয় শীর্ষক কর্মী সম্মেলনে এই হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
তিনি বলেন, প্রাচীনকাল থেকেই রংপুরের মানুষ অত্যন্ত শান্তিপ্রিয়। তারা শান্তিকামী জনগণ। তারা উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ, সাম্প্রদায়িকতা পছন্দ করে না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এই রংপুর বিভাগেরই বিভিন্ন জায়গায় চরমোনাইসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠীর অনুসারীরা হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে মনগড়া তথ্য দিয়ে, মিথ্যা হ্যান্ডবিল রচনা করে মানুষের মাঝে উগ্রতা ছড়ানোর চেষ্টা করে আসছে। সম্প্রতি তারা পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন স্থানে মিথ্যা হ্যান্ডবিল রচনা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল। কিন্তু অত্র এলাকার শান্তিপ্রিয় সাধারণ জনতা তাদের মিথ্যা অপপ্রচারে প্রভাবিত হয় নি।
তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষকে সাে নিয়ে রংপুর তথা উত্তরাঞ্চলে উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর কোনো আস্তানা গাড়তে দেওয়া হবে না। এদের মুলোৎপাটন করতে হেযবুত তওহীদের সদস্যরা সবসময় সজাগ াকবে।
উগ্রবাদীদের মিথ্যা প্রচারের কারণে ২০১৪ সালে রংপুর শহরে অবস্থিত হেযবুত তওহীদের কার্যালয় ও মসজিদে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “২০১৪ সালের আজকের দিনে (২০ ফেব্রুয়ারি) রংপুর শহরের শালবনে স্থানীয় চরমোনাই পীরের অনুসারী মসজিদের ইমাম মোসলেম উদ্দীন জিহাদী তার অনুসারীদের উত্তেজিত করে হেযবুত তওহীদের কার্যালয় ও মসজিদে হামলা চালায়। এ ঘটনা ঘটানোর আগে মোসলেম উদ্দীন জিহাদীসহ আরও অনেক উগ্রবাদীরা মুসল্লিদের কাছে প্রচার করতে থাকে যে, হেযবুত তওহীদের সদস্যরা হচ্ছে আওয়ামী লীগের দালাল, তারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে না-দুই ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, জানাজা পড়ে না, এদেরকে জীবিত রাখা উচিত নয়, এদের মারতে পারলে হজ্বের সমান সওয়াব অর্জন করা যাবে ইত্যাদি। এর এক পর্যায়ে মোসলেম উদ্দিন জিহাদী তার অনুসারীদের নিয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার সময় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। তাদের হামলায় কার্যালয়ে অবস্থান করা বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। হামলাকারীরা অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর করার পর স্থানীয় সদস্য মামুনুর রশিদ মুকুলের পৈত্রিক ৬টি দোকান ও বাড়িতে হামলা চালায়, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে।”
তিনি আরও বলেন, আজকের এই কর্মী সম্মেলনে আমরা দাঁড়িয়ে জাতির সাে অঙ্গীকার করতে চাই, মাননীয় এমামের সামনে ওয়াদা দিতে চাই, ইনশাল্লাহ আমাদের জীবন াকতে রংপুরের মাটিতে আমরা এ ধরণের ধর্মীয় তাণ্ডব ও উগ্রবাদীদের আস্তানা হতে দেব না। শান্তিপ্রিয় জনগণের মাঝে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মান্ধগোষ্ঠীর জায়গা হবে না। শত শত বছর ধরে এই রংপুরের মাটি বিভিন্ন মনীষিদের পদচারণে গৌরবান্বিত হয়েছে। বঙ্গভূমিতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠাকারী ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজির রাজ্য পূর্বে তিস্তা নদী ও করতোয়া নদী, দক্ষিণে পদ্মা নদী, উত্তরে দিনাজপুর জেলার দেবকোট হয়ে রংপুর শহর পর্যন্ত এবং পশ্চিমে পূর্বে অধিকৃত বিহার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তাছাড়া মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আলমগীরের (১৭৫৪-১৭৫৯ খ্রি.) জামাতা শাহজাদা নুরুদ্দিন মুহাম্মদ বাকের জং- এই বাংলায় সুবেদার নিয়োগ পাওয়ার পর তিনি অত্র অঞ্চলের রাজধানী মুর্শিদাবাদ থেকে রংপুরের ফুলচৌকিতে স্থানান্তর করেন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় তিনিই রংপুর অঞ্চলের জনগণকে ব্রিটিশ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য কৃষক আন্দোলন গড়ে তুলেন। সুতরাং এই রংপুরের মাটিতে মিশে আছে বহু ইতিহাস, ঐতিহ্য, মনীষীদের সংগ্রাম ও আদর্শ। তাই রংপুরের মাটিতে কোন উগ্রবাদী চোখ রাঙানী বরদাস্ত করা হবে না। তিনি হেযবুত তওহীদের রংপুর বিভাগীয় নেতাকর্মীদেরকে ধর্মান্ধতা, উগ্রবাদ, ধর্মব্যবসা, সাম্প্রদায়িকতা, গুজব ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
উক্ত কর্মী সম্মেলনে মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের মাননীয় এমাম জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। সম্মেলনে হেযবুত তওহীদের রংপুর বিভাগের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।