Date: May 01, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / বিশেষ নিবন্ধ / একটি ঘটনা ও ইসলামের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমার উপলব্ধি - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

একটি ঘটনা ও ইসলামের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমার উপলব্ধি

January 30, 2023 06:37:19 PM   বিশেষ প্রতিবেদক
একটি ঘটনা ও ইসলামের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমার উপলব্ধি

হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম
অষ্টম হিজরীর মক্কা বিজয়ের দিন। আজ আল্লাহর রসুল মক্কার সর্বেসর্বা, এমন কেউ নেই তাঁর দিকে চোখ তুলে তাকায়। তিনি যেন অন্য মোহাম্মদ (সা.)। যেই মোহাম্মদকে (সা.) মক্কার মোশরেকরা এতদিন অবজ্ঞা, অপমান আর বিদ্রূপ করে এসেছে, যার পদে পদে প্রতিবন্ধকতার প্রাচীর খাড়া করেছে, যাকে হত্যার জন্য একের পর এক ষড়যন্ত্র পাকিয়েছে, যার রক্তে তায়েফের মাটি রক্তিমবর্ণ ধারণ করেছে, সেই মোহাম্মদ (সা.) আজ দশ হাজার সৈন্যের দুর্ধর্ষ এক বাহিনীর সেনাপতি। তিনি আজ আরবের অধিপতি। নব শক্তিতে বলিয়ান। তাঁর সামনে মাথা নিচু করে ভয়ভীত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মক্কার মোশরেকরা। পেছনে পড়ে আছে হাজারো নির্যাতন, নিপীড়ন, কটুক্তি, অপমান, অপবাদ আর অত্যাচারের টুকরো টুকরো স্মৃতি।
এই মক্কার মাটি থেকেই সত্যনিষ্ঠ মানুষদেরকে বিতাড়িত করা হয়েছিল, সেই মক্কা আজ রসুলাল্লাহর অধিকারে। অত্যাচারী জালেম কোরাইশরা, যাদের উদ্ধত আচরণে মক্কার মাটি থরথর করে কাঁপত, তারা আজ পরাজিত, তাদের মস্তক আজ অবনত। তাদের অধিকার নেই কোনো কথা বলার। যাকে হত্যা করার জন্য তারা বারবার ছুটে গেছে রণাঙ্গণে, সেই আল্লাহর রসুলের অঙ্গুলি নির্দেশের সাথে সাথে শতশত কাফের মোশরেকের মস্তক ধুলোয় গড়াগড়ি খেতে পারে। চতুর্দিকে মুসলিম সেনা কাফেরদের ঘেরাও করে আছে। আল্লাহর রসুলের কৃপার উপরে আজ মক্কাবাসীর জীবন। তিনি যাদেরকে জীবন ভি¶া দেবেন তারা বাঁচবে, যাদেরকে ঘরে থাকতে দেবেন তারা ঘরে থাকবে, যাদেরকে বাহিরে থাকতে দেবেন তারা বাহিরে থাকবে। রসুলাল্লাহ যাদেরকে আজ লোহিত সাগরে নি¶েপ করবেন তারা লোহিত সাগরে নি¶িপ্ত হবে। আজকের দিনে মক্কা নগরীতে কারো সাধ্য নেই রসুলাল্লাহর কথাকে অমান্য করে। মক্কায় আজ আল্লাহর সার্বভৌমত্বের নিরংকুশ বিজয়। আজকের এই দিন অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে নির্যাতিত, নিপীড়িত, নিগৃহীত জনতার বিজয়ের দিন, অধর্মের বিরুদ্ধে ধর্মের, অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের বিজয়ের দিন।
এই পরিস্থিতিতে আল্লাহর রসুল কী করলেন? প্রথমে তিনি কাবাকে পবিত্র করলেন। কাবাঘরে অবৈধভাবে যে মূর্তিগুলো মোশরেকরা স্থাপন করেছিল সেগুলো তিনি ধুয়ে মুছে সাফ করলেন। কাবার সেই পবিত্রতা ফিরিয়ে দিলেন যেমনটা ইবরাহীম (আ.) ও ইসমাইল (আ.) রেখে গিয়েছিলেন। এছাড়াও বক্তব্য রাখলেন, লোকজনের বায়াত নিলেন, সালাহ কায়েম করলেন ইত্যাদি বহুকিছু করেছেন, কিন্তু এদিনের সবচাইতে বিস্ময়কর যে ঘটনাটা ইসলাম সম্পর্কে আমার আকীদায় নাড়া ফেলে দিল, সেটা হচ্ছে আল্লাহর রসুল হযরত বেলালকে (রা.) কাবার ছাদে উঠিয়ে আজান দেওয়ালেন। হ্যাঁ, ঘটনাটি আমরা প্রায় সকলেই জানি। কিন্তু জানি অন্য আর দশটা ঘটনার মতই সাধারণ একটি ঘটনা হিসেবে। সাধারণ একটি বর্ণনা হিসেবে শত শত বছর ধরেই এটি হাদিসের গ্রন্থে, সিরাতের গ্রন্থে ও ইতিহাসের গ্রন্থে পড়ে এসেছেন সকলেই। পড়েছেন সাধারণ জনগণ, পড়েছেন ঐতিহাসিকগণ এবং পড়েছেন মুহাদ্দিসগণও। আমি জানি না ঘটনাটি কয়জনের মনে দাগ কেটেছে। আমি যেদিন পড়লাম, বুঝলাম, সেদিন ইসলাম আগমনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে, রসুলাল্লাহ সম্পর্কে আমার ধারণার জগতে নতুন মাত্রা যোগ হলো। 
ঘটনাটি সংক্ষেপে এই যে, আল্লাহর রসুল পবিত্র কাবাঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার পর বেলালকে (রা.) ডাকলেন। তাকে বললেন কাবার ছাদে উঠে আজান দিতে। ইতিহাস বলে- সেদিন বেলালের (রা.) নাভির উপর থেকে কোনো কাপড় ছিল না, মাথায় পাগড়ির তো প্রশ্নই ওঠে না। শুধু লজ্জাস্থান ঢাকার মতো এক টুকরো কাপড় কোমরে প্যাঁচানো ছিলে। সেই অর্ধ-উলঙ্গ বেলালকে (রা.) আল্লাহর রসুল কাবার ছাদে উঠিয়ে দিলেন (আসহাবে রসুলের জীবনকথা-১ম খণ্ড)। তারপর বেলাল (রা.) উচ্চৈঃস্বরে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের আযান দিলেন। আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠল। হাজার হাজার সাহাবীর চোখ তখন অশ্রুতে ছলছল। সেদিন মহাপবিত্র বায়তুল্লাহ কাবা’র উপরে দণ্ডায়মান কৃতদাস বেলাল (রা.)।
এখানে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়। 
প্রথমত, তিনি পারতেন আজান দেওয়ার জন্য বেলালকে (রা.) কাবার উপর না উঠিয়ে কোনো পাহাড়ে বা পাথরের উপর উঠিয়ে আজান দেওয়াতে। কিন্তু তা করলেন না, পবিত্র কাবার ছাদেই উঠালেন।
দ্বিতীয়ত, পবিত্র কাবাকে মোশরেকরা কত ভক্তি-শ্রদ্ধা করত আল্লাহর রসুল কি তা জানতেন না? কথিত আছে, রসুলাল্লাহর পিতামহ আব্দুল মোত্তালেব যিনি ছিলেন পবিত্র কাবার সেবায়েত, তিনি তার দীর্ঘ দাড়ি দিয়ে কাবার ধূলা পরিষ্কার করতেন, ঝাড়ু লাগাতেন না। সেই ধর্মীয় সেন্টিমেন্টের কোনো পরোয়াই আল্লাহর রসুল করলেন না।
তৃতীয়ত, আল্লাহর রসুলের সঙ্গে তো আরো দশ হাজার সাহাবী ছিলেন, তাদের মধ্যে কোরায়েশ সাহাবীরও অভাব ছিলো না। তাদের কাউকে ওঠালেও তো পারতেন, যেমন খালেদ বিন ওয়ালিদ (রা.) ছিলেন, রসুলাল্লাহর নিজের জামাতা উসমান (রা.) ছিলেন। কোরাইশদের মধ্যে তাদের অনেক প্রভাব-প্রতিপত্তি ছিল। কোরাইশরা তাদেরকে সমীহ করত। কিন্তু আল্লাহর রসুল তাদের কাউকে এর উপযুক্ত মনে করলেন না, তিনি হাজার হাজার সাহাবী থেকে বেছে নিলেন এক সময়ের হাবশী ক্রীতদাস বেলালকে (রা.), যেই বেলালকে ওই মক্কার কোরাইশরা পশুরও অধম মনে করত। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন? 
কারণ আর কিছু নয়, আল্লাহর রসুল এই ঘটনার দ্বারা মানবজাতির জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চেয়েছেন, এই প্রশ্নটির উত্তর দিতে চেয়েছেন যে, তাঁর নবুয়তী জীবনের সমস্ত সংগ্রামের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কী ছিল। সেটি আর কিছু নয়, মানবতার মুক্তি নিশ্চিত করা, নির্যাতিত নিপীড়িত শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা, একজন সত্যনিষ্ঠ মানুষ যদি ক্রীতদাসও হয় তথাপি তার মর্যাদা আল্লাহর কাছে তাঁর কাবারও ঊর্ধ্বে এই মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করা। সত্যনিষ্ঠ মানুষদের সম্মান সম্পর্কে আল্লাহর রসুলের মূল্যায়ন আমরা আরও বহু হাদিস ও ইতিহাস থেকে জানতে পারি। যেমন, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, “একদিন আল্লাহর রসুল কাবার দিকে দৃষ্টিপাত করে বললেন, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। তুমি অত্যন্ত পবিত্র এবং তোমার ঘ্রাণ অতি মিষ্ট। তুমি অতি সম্মানিত। তবে একজন মো’মেনের পদমর্যাদা ও সম্মান তোমার চেয়েও অধিক। আল্লাহ একজন মো’মেন সম্পর্কে এমনকি কু-ধারণা পোষণ করাকেও হারাম করেছেন।” (তাবারানি) অপর বর্ণনায় আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, “আমি রসুলাল্লাহকে একদিন কাবা তাওয়াফ করার সময় বলতে শুনেছি, ‘হে কাবা! কী বিরাট তোমার মহিমা আর কী মিষ্টি তোমার সুবাস। তুমি কত মহান আর তোমার পবিত্রতাও কত মহান! কিন্তু তাঁর শপথ যাঁর হাতে মোহাম্মদের প্রাণ, আল্লাহর দৃষ্টিতে একজন মো’মেনের পবিত্রতা তোমার পবিত্রতার চাইতেও অধিক (ইবনে মাজাহ)। আরও বর্ণিত আছে, আল্লাহর রসুল একদিন পবিত্র পাথর হাজরে আসওয়াদের দিকে দৃষ্টিপাত করে বলেছিলেন, “হে কালো পাথর। কসম সেই আল্লাহর যাঁর নিয়ন্ত্রণের অধীন আমার সকল অনুভূতি! একজন মো’মেনের সম্মান ও পদমর্যাদা আল্লাহর কাছে তোমার সম্মান ও মর্যাদার চাইতেও অধিক মহিমান্বিত।” (ইবনে মাজাহ, আস-সুয়ূতি, আদ-দার আল মানসুর)। 
মো’মেনের সম্মান কাবারও ঊর্ধ্বে, যদিও সেই মো’মেন সমাজের সবচাইতে দুর্বল মানুষটি হয়, সবচাইতে অবহেলিত নির্যাতিত অবজ্ঞাত উপেক্ষিত মানুষটি হয়, এমনকি কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাস হয়। প্রকৃতপ¶ে জাত্যাভিমানে অন্ধ কোরায়েশদের গালে এই ঘটনা ছিলো এক চপেটাঘাত। এ ঘটনার দ্বারা আল্লাহর রসুল কোরায়েশদের অহংকার, আরব জাতীয়তাবাদীদের অহংকার মরুভূমির বালুতে মিশিয়ে দিলেন। তিনি প্রমাণ করে দিলেন, মানুষে মানুষে যেই কৌলীন্যের দেয়াল খাড়া করে রাখা হয়েছে, ইসলাম তা অস্বীকার করে। ইসলামে মানুষের মর্যাদা তার বংশগৌরব ও প্রভাব-প্রতিপত্তির মাপকাঠিতে নির্ধারিত হবে না, নির্ধারিত হবে তার চরিত্র দিয়ে, তার কর্ম দিয়ে। 
সত্যনিষ্ঠ মানুষের প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত এই বিরাট সম্মান ও মর্যাদাকে যুগে যুগে যখনই হরণ করা হয়েছে, আল্লাহর অতি প্রিয় সৃষ্টি মানুষকে অন্যায়ভাবে দমন-পীড়ন করা হয়েছে, তখন অত্যাচারীর খড়গ থেকে নিপীড়িত মানুষকে মুক্ত করতে আল্লাহ নবী-রসুল পাঠিয়েছেন, ইসলাম পাঠিয়েছেন। আখেরী নবী যখন আবির্ভূত হলেন, মক্কায় তখন মানবতার চরম অবক্ষয় চলছিল। দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার। গরু ছাগলের মত মানুষের গলায় ও কোমরে শিকল বেঁধে হাটে-বাজারে কেনাবেচা করা হত। তাদেরকে মানুষই মনে করা হত না। তাদের ইজ্জতের কোনো মূল্য ছিল না, কথা বলার কোনো অধিকার ছিল না। আল্লাহর রসুল সেই নির্যাতিত মানুষদের মুক্তির লক্ষ্যে সংগ্রাম আরম্ভ করলেন। 
তিনি যখন তওহীদের বালাগ দিতে লাগলেন, ধর্মব্যবসায়ী কোরাইশ নেতারা প্রচার করে দিল তিনি আরবদের ধর্মকে নষ্ট করতে এসেছেন, তিনি পাগল, তিনি গণক, তিনি যাদুকর, তিনি ধর্মত্যাগী ইত্যাদি (নাউজুবিল্লাহ)। আল্লাহর রসুলের উদ্দেশ্যটি তারা নিজেরাও বুঝল না, সাধারণ জনগণকেও বুঝতে দিল না। সবাই মিলে সত্যনিষ্ঠ গুটিকয় মানুষের উপর একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ল। কাউকে মারতে মারতে জখম করল, কাউকে হত্যা করল, কাউকে বন্দী করে রাখলো, কাউকে বিতাড়িত করল। আল্লাহর রসুলকেও হত্যার ষড়যন্ত্র করল। ওই ষড়যন্ত্রকারীরা মক্কা বিজয়ের দিন ধরেই নিয়েছিল যে, আজ তাদের অন্তিম দিন। তারা ভাবল, ‘যেই আচরণ আমরা মুহাম্মদের (সা.) সাথে করেছি, তারপর বেঁচে থাকার আশা করাটাই আহাম্মকী!’
কিন্তু আল্লাহর রসুল চাইলেন, আজ সেই হত্যার ষড়যন্ত্রকারীরা ও নির্যাতনকারীরা দেখুক তাঁর সংগ্রামের উদ্দেশ্য কী ছিল। আল্লাহর রসুল পারতেন কোরাইশদেরকে হত্যা করে প্রতিশোধ নিতে, কিন্তু তিনি একদিকে তাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন, অন্যদিকে তারা যেই ক্রীতদাস বেলালকে (রা.) মানুষ মনে করত না, সেই বেলালকে উঠালেন কাবার ছাদে। প্রমাণ করে দিলেন, কোনো সম্পদের জন্য নয়, কোনো ক্ষমতার জন্য নয়, কোনো ভোগের জন্য নয়, এমনকি কোনো প্রতিশোধস্পৃহার জন্যও নয়, তাঁর সংগ্রাম ছিল নিপীড়িত শোষিত বেলালদেরকে প্রাপ্য মর্যাদা ও অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য, ওই কথাটিকে বাস্তবায়ন করার জন্য যে, মো’মেনদের সম্মান কাবারও ঊর্ধ্বে। ক্রীতদাস বেলাল (রা.) সেদিন কাবার উপরে উঠে ঘোষণা দিলেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহ ছাড়া কারো হুকুম মানি না।
এই ঘটনার মাধ্যমে আল্লাহর রসুল কেবল তৎকালীন মক্কাবাসীদের জন্যই নয়, চিরদিনের জন্য সমস্ত উম্মাহকে দেখিয়ে দিলেন, তাঁর অবর্তমানেও এটাই যেন হয় উম্মতে মোহাম্মদীর সংগ্রামের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য। এভাবেই যেন উম্মতে মোহাম্মদী সংগ্রাম করে সমস্ত পৃথিবীর নির্যাতিত নিপীড়িত শোষিত বঞ্চিত মানুষের মুক্তি নিশ্চিত করে। যাদেরকে অত্যাচারী অপশক্তিগুলো অন্যায়ভাবে পদানত করে রাখতে চায়, তাদেরকে যেন উম্মতে মোহাম্মদী দাসত্বের নিগড় থেকে মুক্ত করে কাবার চাইতেও বেশি সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করে।
আল্লাহর রসুল কর্তৃক হযরত বেলালকে (রা.) কাবার ছাদে ওঠানোর এই ঘটনাটি যখন উপলব্ধি করলাম, ওই উপলব্ধি আমাকে স্বস্তির বদলে দিতে লাগলো প্রচণ্ড পীড়া। আমার আফসোস হতে লাগলো, এত মহান ও উদার একটি আদর্শ আমরা পেলাম, কিন্তু সামান্যও কাজে লাগাতে পারলাম না। ওই আদর্শের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে এক ইঞ্চি জমিনেও নির্যাতিত মানুষকে মুক্তি দিতে পারলাম না। উল্টো পৃথিবীময় আমরা ১৬০ কোটি মুসলমান আজ নিজেরাই অধিকার হারা, শোষিত, বঞ্চিত, গোলাম জাতির গ্লানি বয়ে বেড়াচ্ছি। যার ইচ্ছা হচ্ছে আমাদেরকে গণহত্যা করছে, দেশ থেকে উচ্ছেদ করছে, দখল করছে, হায়েনার মত ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাদের মা-বোনদেরকে ধর্ষণ করছে, আমরা নিজেদেরকেই রক্ষা করতে পারছি না, অন্যদেরকে কীভাবে দাসত্বমুক্ত করব? 
আমাদের সমাজে আজ ধর্মান্ধতা, কূপমণ্ডূকতা ও ধর্মব্যবসা এমনভাবে পেয়ে বসেছে যে, সংকীর্ণতার গণ্ডিতে আবদ্ধ হয়ে গেছে আমাদের ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মীয় চিন্তাধারা। এর বাইরে বড় কিছু নিয়ে কিংবা মহৎ কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবতেও পারি না আমরা। পরিণতি কী হয়েছে? সেই ১৪০০ বছর আগের আইয়ামে জাহেলিয়াতের মতই আমাদের সমাজ ছেয়ে গেছে সর্বপ্রকার অন্যায়, অবিচার, হানাহানি, রক্তপাত, খুন, ধর্ষণে। আল্লাহর রসুলের ইসলাম ছিল দাসত্বের শিকল ভাঙার বিপ্লবী এক মন্ত্র, অন্যদিকে বর্তমানে ইসলামের নামে এমন বিকৃত শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে যার দরুন মানুষ মুক্তি তো পাচ্ছেই না, বরং নিক্ষিপ্ত হচ্ছে অন্ধত্বের কারাগারে। এই কারাগার ভেঙে মুক্তিকামী মানুষকে বের করে আনার শপথ নিয়েছি আমরা হেযবুত তওহীদ। আল্লাহ-রসুলের মহান ও উদার ইসলামটি নিয়ে আমরা ঘুরে বেড়াচ্ছি মানুষের দ্বারে দ্বারে। জানি না কবে মানুষের এই অন্ধত্ব ঘুঁচবে, দৃষ্টি খুলবে, কালঘুম ভাঙবে। আল্লাহ যেন অচীরেই জাতির কালঘুম ভাঙান। এই ঘুমই যেন তাদের শেষ ঘুম না হয়। (আমিন)
 

[লেখক: এমাম, হেযবুত তওহীদ। যোগাযোগ: ০১৬৭০১৭৪৬৪৩, ০১৭১১০০৫০২৫, ০১৯৩৩-৭৬৭৭২৫, ০১৭৮২-১৮৮২৩৭]