Date: April 30, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / বিশেষ নিবন্ধ / গাজার ভবিষ্যৎ কি ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল? - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

গাজার ভবিষ্যৎ কি ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল?

February 15, 2025 01:00:03 PM   অনলাইন ডেস্ক
গাজার ভবিষ্যৎ কি ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল?

হাসান মাহাদী:
১৯৪৭ সালের পর থেকেই ফিলিস্তিনি মুসলমানদের উপর নির্মম অত্যাচার শুরু হয়। বর্তমান ফিলিস্তিনিদের পূর্বপুরুষের এই ভিটে-মাটি, ফসল, খেত-খামার, কৃষি জমি, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি পরিকল্পিতভাবে দখল করে নেওয়া হয় এবং ইহুদিদের বসতি নির্মাণের জন্য ব্রিটিশ সরকার তাদেরকে এই উচ্ছেদে সহায়তা করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেও এই ভূমি মূলত তুর্কি সাম্রাজ্যের অধীন ছিল। জার্মান-তুর্কি জোট পরাজিত হওয়ার পর এই অঞ্চল ব্রিটিশরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়ে যায়। এরপর, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদিদের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তাদেরকে এই অঞ্চলে পুনর্বাসিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ফিলিস্তিনের মুসলিমদের উচ্ছেদের মধ্যে দিয়েই ১৯৪৮ সালে ইরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়।

দীর্ঘকাল ধরে ইউরোপের মধ্যে ইহুদিরা সমাজের একটি বিষফোঁড়ার মতো অবস্থান করছিল। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপে তাদেরকে কখনোই সেই সমাজে গ্রহণ করে নিতে চায়নি। এর ফলস্বরূপ, সেখানে ইহুদিদের উপর বারবার হামলা ও নির্যাতন হয়েছে, বাড়িঘর লুন্ঠন করা হয়েছে। ১৫শ-১৭শ শতাব্দীতে স্পেন, পর্তুগাল, এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ থেকে ইহুদিদের বহিষ্কার করা হয়। ১৮শ-১৯শ শতাব্দীতে রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে “পগরোম” নামে ইহুদিদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়। সর্বশেষ ২০শ শতাব্দীতে নাৎসি জার্মানির অধীনে হলোকাস্টের মাধ্যমে ইহুদিকে হত্যা করা হয়। এভাবে পুরো ইউরোপ থেকে ইহুদিদের বিতারিত করা হয়।

সর্বশেষ তাদেরকে চাপিয়ে দেয়া হয় ফিলিস্তিনি মুসলমানদের উপরে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ তখন শেষে হয়নি ব্রিটেনের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার বেলফোর ব্রিটিশ ইহুদি সম্প্রদায়ের নেতা লিওনেল ওয়াল্টার রথচাইল্ডকে চিঠি দিয়ে জানান ফিলিস্তিনের ইহুদি জনগোষ্ঠীর জন্য একটি জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে ব্রিটিশ সরকার। অথচ ফিলিস্তিনের ৯০ শতাংশ ভূমিপুত্রই ছিল আরব। ব্রিটিশরা ফিলিস্তিনিদের জমি-জমা, ঘরবাড়ি জব্দ করে সেগুলো ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের দিতে থাকে। ফিলিস্তিনে ক্রমেই উত্তেজনা বাড়তে থাকে। ইহুদি অভিবাসনের প্রতিবাদে ইহুদি পণ্য বর্জন এবং কর দেওয়া বন্ধ রাখার আহ্বান জানানো হয়। অনেকটা ভারতীয় উপমহাদেশের স্বদেশী আন্দোলনের মতো। ভারতীয় উপমহাদেশের মতো সেখানেও এই বিদ্রোহ দমনে কৌশল ও বর্বরতার আশ্রয় নেয় ব্রিটিশরা। অসংখ্য ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার এবং তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করে দেওয়া হয়। বর্তমানে ইসরায়েল যা করছে, সেই বীজ রোপণ করেছিল ব্রিটিশরাই। ১৯৩৯ সালের দিকে ফিলিস্তিনে ৩০ হাজার সেনা জড়ো করে। বিভিন্ন গ্রামে আকাশ থেকে নির্বিচারে বোমা ফেলা হয়। জারি করা হয় সান্ধ্য আইন। ফের ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়। প্রতিবাদকারীদের ধরে নিয়ে গিয়ে বিচারের নামে প্রাণদণ্ড দেওয়া। সে সময় অন্তত ৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত, ১৫২০ হাজার আহত এবং ৫ হাজার ৬০০ কারারুদ্ধ হয়। বসতি স্থাপনকারীরা গোপনে ‘ইসউভ’ নামের একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগেই অবশ্য তারা অস্ত্র পাচার করে আনতে শুরু করে। অস্ত্র তৈরির কারখানাও তৈরি হয়। ইহুদি সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘হাগানাহ’ গঠিত হয়, যা পরে ইহুদি সেনাবাহিনীর কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।

এভাবে নির্যাতন আর বর্বরতায় ফিলিস্তিনিদের অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে দিতে শুরু করে। আর ইহুদিদের সংখ্যা বাড়তেই থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অনেক ইহুদি দলে দলে এই ভূখণ্ডে আসতে শুরু করে। স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে থাকা শুরু করে। অবস্থা এমন হয় যে, ১৯৪৭ সালের দিকে এসে দেখা যায় ফিলিস্তিনে ইহুদিদের সংখ্যা বেলুনের মতো ফুলে ফেঁপে উঠেছে। তারা তখন মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ। অথচ ওই সময় ইহুদিরা দেশটির মাত্র ৬ শতাংশ ভূখণ্ডের মালিক ছিল। ১৯২০ থেকে ১৯৪৬ সালে মধ্যে প্রায় ৪ লাখ ইহুদি ফিলিস্তিনে আসে। এদের বেশিভাগ আসে ইউরোপ থেকে। বর্তমানে ফিলিস্তিনের বড় অংশ ইসরায়েলের দখলে। ফিলিস্তিনিরা এখন মাত্র প্রায় ১৫% বা তার চেয়েও কম জমির ওপর বসবাস করছে। যেখানে ১৯৪৮ সালের আগে তারা পুরো ভূখণ্ডের অধিকাংশ অংশে ছিল ফিলিস্তিন মুসলমানদের।

সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর গাজায় শুরু হয় এক ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ। এই হামলার ফলস্বরূপ, বিগত ১৫ মাসে গাজার জনসংখ্যা ৬ শতাংশ কমে গেছে, এবং প্রায় ৮০ হাজার ফিলিস্তিন মুসলিম নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। পুরো গাজা অঞ্চল তছনছ হয়ে গেছে। যুদ্ধ শুরুর আগে গাজায় ৩৬৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ২৪ লাখ মানুষ বাস করতেন, তবে বর্তমানে ১ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি গাজা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার মোট ভবনের দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৫২,৫৬৪টি ভবন সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস, ১৮,৯১৩টি গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং ৩৫,৫৯১টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসরায়েলের হামলায় হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও গীর্জাও ধ্বংস হয়েছে।

গত বছরের মে মাসে জাতিসংঘ অনুমান করেছিলো, গাজার পুনর্গঠনে ৪০ বিলিয়ন বা চার হাজার কোটি ডলার খরচ হতে পারে। জাতিসংঘের ধারণা, গাজার ৯১ শতাংশ মানুষ তীব্র খাদ্য সংকটে ভুগছে। সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গাজার ৬৭.৬ শতাংশ কৃষিজমি গোলাবর্ষণ, যানবাহন চলাচল এবং অন্যান্য সংঘর্ষের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাতিসংঘের মতে, প্রায় ১৯ লাখ মানুষের জরুরি আশ্রয় এবং গৃহস্থালি সামগ্রী প্রয়োজন।

এরপর গত ১৯ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যস্থতায় একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার আওতায় বন্দী বিনিময়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি ২ জন ইহুদি বন্দীর বিনিময়ে ৪০ জন ফিলিস্তিনি মুসলমান মুক্তি পান। এই বিনিময় হার স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে, কত হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে নির্বিচারে আটক রাখা হয়েছে। চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর, গাজাবাসীরা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া তাদের বাড়িঘরে ফিরে আসতে শুরু করে। তবে তাদের অধিকাংশই ফিরে পেয়েছেন শুধুমাত্র ধ্বংসাবশেষ। এই ফিলিস্তিনি মুসলমানদের অনেকেই হারিয়েছেন বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন বা প্রিয়জনদের। পাড়া-প্রতিবেশীর অনেকেই আর নেই। ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় তারা এখন খোলা আকাশের নিচে তাবু টানিয়ে দিনযাপন করছেন। তাদের জন্য নেই পর্যাপ্ত খাবার, নেই বিশুদ্ধ পানি, এমনকি অসুস্থ হলে চিকিৎসার সুযোগও অনিশ্চিত। এত কষ্টের মাঝেও তারা বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন এবং প্রতিদিন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। ঠিক এমন এক সংকটময় মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিতর্কিত বার্তা দেন, যেখানে তিনি বলেন যে, ফিলিস্তিনিরা যেন গাজা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যায়। তার এই বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তিনি এই ভূখণ্ডে বিলাসবহুল আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন। তার কথায় বোঝা যায় যে, গাজাকে যেন ইসরায়েল তাদের ইচ্ছামতো ব্যবহার করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে প্রতিবেশী দেশ মিসর ও জর্ডানে পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। গত ২৫ জানুয়ারি, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গাজা উপত্যকাকে খালি করতে হবে। তিনি মনে করেন গাজাবাসীদের মুসলিম অধ্যুষিত প্রতিবেশী দেশগুলোতে স্থানান্তর করা উচিত। ট্রাম্পের এই পরিকল্পনায় সমর্থন জানিয়েছিলেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এই ধরনের প্রস্তাব কতটা আইনি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, কেননা এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং জাতিসংঘ সনদের পরিপন্থী। মানবিকতার দৃষ্টিকোণ থেকেও এটি চরম অগ্রহণযোগ্য। ফিলিস্তিনিদের নিজভূমি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করার এই পরিকল্পনা জাতিগত নির্মূলের শামিল। ট্রাম্প এই ইস্যুতে জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহর সঙ্গে আলোচনা করেন। এসবের পরেও মুসলিম বিশ্ব প্রায় নিশ্চুপ। অন্যদিকে, উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপাটে নেতা কিম জং উন এই প্রস্তাবের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন এবং ট্রাম্পের এই অবস্থানের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। প্রশ্ন থেকে যায়, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ কী? গাজার মুসলিমদের ভবিষৎ কী? মুসলিম বিশ্বের নেতারা যখন রাজনৈতিক বিভাজন ও ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যস্ত, তখন ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে।

আধুনিক এই বিশ্বে মানবাধিকার রক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে আমরা এমন এক যুগে বসবাস করছি, যেখানে জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদ রয়েছে, আন্তর্জাতিক আইন বলবৎ রয়েছে, এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধে আন্তর্জাতিক আদালত কাজ করছে। তা সত্ত্বেও, আমাদের চোখের সামনে এমন ঘটনা ঘটছে যা মধ্যযুগীয় বর্বরতার চেয়েও ভয়াবহ। একটি জাতিকে তার নিজভূমি থেকে সম্পূর্ণভাবে উচ্ছেদ করে দেওয়া হচ্ছে, তাদের অস্তিত্ব মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র চলছে- যেন ইতিহাসের আরেকটি ‘এথনিক ক্লিনজিং’। অথচ মুসলিম বিশ্বের নেতারা এসব দেখে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। বিস্ময়ের কিছু নেই, কারণ আধুনিক সভ্যতা মানবাধিকারের বুলি আওড়ালেও বাস্তবে ক্ষমতার রাজনীতি ও স্বার্থপরতা ছাড়া আর কিছুই নেই। মানবাধিকার, ন্যায়বিচার- সবই নির্দিষ্ট ক্ষমতাধরদের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। যখন কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী অন্যায়ভাবে নির্যাতিত হয়, বিশ্ব তখন নিরব থাকে যদি তা ক্ষমতাশালীদের স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়।

বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম দেশে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রয়েছে বিশাল খনিজ ও তেল সম্পদ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই দেশগুলোর শাসকরা ভোগ-বিলাসে এতটাই মত্ত যে তারা নিজেদের জাতির সমস্যাগুলোও বারবার এড়িয়ে গেছেন। তারা ইউরোপ-আমেরিকায় বিলাসবহুল জীবনযাপনে ব্যস্ত, উচ্চমূল্যের হোটেল, ক্যাসিনো, ইয়ট পার্টি এবং রাজকীয় প্রাসাদে নিজেদের বিলাসী জীবন কাটান। তাদের শাসন টিকিয়ে রাখার জন্য বিশাল সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দেন। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশগুলোর অনেকেই পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে আমেরিকা ও পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। তারা তেলের রাজস্ব দিয়ে বিলাসী জীবনযাপন করে। অথচ ফিলিস্তিন সংকটের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয় না। ইরান মাঝেমধ্যে শুধু কিছু কড়া বিবৃতি দেয়, কিছু সামরিক প্রস্তুতির ইঙ্গিত দেয়, কিন্তু এর বাস্তব প্রভাব খুবই সামান্য।

একদিকে পশ্চিমা বিশ্ব মানবাধিকারের প্রবক্তা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরে, কিন্তু অন্যদিকে তারা নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে নিরব থাকে, যদি তা তাদের স্বার্থের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয়। যখনই কোনো রাষ্ট্র বা সংগঠন তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়, তখনই সেখানে মানবাধিকারের লঙ্ঘন দেখিয়ে তারা সামরিক হস্তক্ষেপ করে বা নিষেধাজ্ঞা দেয়। কিন্তু ফিলিস্তিনের ব্যাপারে তাদের নীতিতে স্পষ্ট দ্বিমুখিতা লক্ষ্য করা যায়। কেউ কেউ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি দেখান তবে বাস্তবিক পদক্ষেপ নেওয়ার মতো নেতৃত্ব মুসলিম বিশ্বে অনুপস্থিত। একসময় মুসলিম বিশ্ব বিজ্ঞান, জ্ঞান ও সামরিক শক্তিতে শক্তিশালী ছিল। কিন্তু আজ তারা রাজনৈতিক বিভক্তি, দুর্নীতি এবং স্বার্থপরতার কারণে দুর্বল। তাদের নিজেদের মধ্যেই বিভাজন এত বেশি যে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে কোনো বড় সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম। আজকের বিশ্বে ক্ষমতার রাজনীতিই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। ফিলিস্তিনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে, আর মুসলিম বিশ্ব যদি এভাবেই নীরব থাকে, তাহলে হয়তো একসময় এই জাতিকে ইতিহাসের পাতায় স্থানান্তরিত হতে হবে। এখন প্রশ্ন একটাই- এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্ব কি কার্যকর কোন ভূমিকা রাখবে, নাকি শুধু ইতিহাসের আরেকটি করুণ অধ্যায় হয়ে থাকবে?