
ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি:
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় বাঙালির আদি ঐতিহ্যবাহী 'তেরাবেরা পার্বণ' উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতি বছর বৈশাখ মাসের ১৩ তারিখে এই অনুষ্ঠান স্থানীয়দের মধ্যে বংশপরম্পরায় পালন হয়ে আসছে। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এবার 'তেরো শাকের তেরাবেরা পার্বণ' নানা আয়োজনে ভিন্নমাত্রা পেয়েছে।
গত মঙ্গলবার, ১৩ বৈশাখ সকালে কুন্দুরিয়া গ্রামে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। ঘিওর উপজেলার নালী ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত এই উৎসবের আয়োজন করে মানিকগঞ্জ কৃষি প্রতিবেশবিদ্যা শিখন কেন্দ্র ও স্থানীয় বাসিন্দারা। সহযোগিতায় ছিল বেসরকারি কৃষি উন্নয়ন সংস্থা বারসিক।
উৎসবের প্রথম পর্বে আশপাশের কয়েক গ্রামের শতাধিক নারী তেরো পদের শাক (বেশিরভাগ অ-চাষকৃত) তোলার উৎসবে অংশ নেন। এরপর, কৃষকদের মধ্যে প্রায় শত প্রকার বিভিন্ন জাতের ফসলের বীজ প্রদর্শনী ও বিনিময়ের আয়োজন করা হয়। এছাড়া, কৃষি প্রতিবেশবিদ্যা, জলবায়ু ন্যায্যতা ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব বিষয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
শিশুদের জন্য চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বারসিকের সমন্বয়কারী বিমল চন্দ্র রায়। এতে বক্তব্য রাখেন আলি আহাদ, মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান, শিমুল চন্দ্র বিশ্বাস, সৈয়দ আল আজাদ, কৃষক ইউসুফ আলী, গোসাই দাস, সুবল চন্দ্র সরকার, রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
এ সময়, স্থানীয়রা তাদের উৎপাদিত ফসল যেমন ধান-চাল, মুড়ি, কাসুন্দি, শাকসবজি ও আম দিয়ে অতিথিদের আপ্যায়ন করেন। পরে, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়। সেরা শাক সংগ্রাহক এবং সেরা ফসলের বীজ প্রদর্শনকারী গৃহিণীদেরও পুরস্কৃত করা হয়। অতিথিরা প্রবীণ কিষাণ ও কিষাণীদের সম্মানার্থে তাদের গায়ে উত্তরীয় পরিয়ে দেন।
আয়োজকরা বলেন, "আমাদের খাদ্যাভ্যাস সংস্কৃতির শেকড় থেকে এসেছে। তেরাবেরা পার্বণটি প্রধানত হাজার বছর ধরে পুরাণ, ধর্ম, মিথ ও লোকাচারের ভিত্তিতে উঠে এসেছে। এই ধরনের আয়োজন নতুন প্রজন্মকে কৃষিভিত্তিক আদি সংস্কৃতির সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটাতে সাহায্য করবে। ভবিষ্যতে এই ধরনের আয়োজনের ব্যাপ্তি আরও বৃদ্ধি করা হবে এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে এতে যুক্ত করা হবে।"