
লিওনেল মেসির ক্যারিয়ারে পূর্ণতা এসেছে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর। সেদিন লুসাইলে বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে তুলেছেন মেসি, ঘুচিয়েছেন আর্জেন্টিনার ৩৬ বছরের অপেক্ষা। এর মধ্য দিয়ে মেসি নিজেও নিশ্চিত করেছেন ‘অমরত্ব’। সর্বকালের সেরাদের কাতারে দাঁড়িয়ে সবার সেরা হওয়ার দাবিটা আরও শক্ত করেছেন মেসি বিশ্বকাপ জয়ের মধ্য দিয়ে। আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির বিশ্বকাপ জয়ের পর কেমন লেগেছে, কাতারে পা রাখার আগে বিশ্বকাপ জয়ের আত্মবিশ্বাস কতটুকু ছিল—এসব সবাই জানতে চায়।
বিশ্বকাপ জয়ের পর প্রথম সাক্ষাৎকারে সেসব বিষয় নিয়েই কথা বলেছেন মেসি। আর্জেন্টাইন রেডিও ‘উরবানা প্লেই’–এর সংবাদকর্মী অ্যান্ডি কুজনেতসফকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডিয়েগো ম্যারাডোনা ও নিজের ক্যারিয়ারের পূর্ণতা নিয়েও কথা বলেছেন পিএসজি ফরোয়ার্ড। নিচে তা প্রসঙ্গ আকারে তুলে ধরা হলো:
সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ
আগেও এটা নিয়ে কথা বলেছি। সেটি সম্ভবত ২০১৪ সালের আগে। বলেছিলাম, সৃষ্টিকর্তা আমাকে বিশ্বকাপ উপহার দেবেন। এরপর ব্রাজিলে কোপা আমেরিকা জিতলাম। তারপর ওই (বিশ্বকাপ জয়) মুহূর্তটার দেখা পেলাম। আমি জানতাম তিনি আমাকে এটা উপহার দেওয়ার অপেক্ষায় আছেন। এটা কীভাবে টের পেয়েছি, বুঝিয়ে বলতে পারব না। জীবনে যা যা অর্জন করেছি, সে জন্য প্রতিদিনই তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। এর চেয়ে বেশি কিছু চাইতে পারতাম না। যা কিছু অর্জন করেছি, সে জন্য তাঁকে ধন্যবাদ।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হিসেবে বলা প্রথম কথা, সেদিনের (১৮ ডিসেম্বর) পর থেকে সবকিছু পাল্টে গেছে। ক্যারিয়ারজুড়ে যা জেতার স্বপ্ন দেখেছি, যে প্রার্থনা করেছি, একদম শেষ দিকে এসে তা সত্যি হয়েছে।
কাতার বিশ্বকাপে সবচেয়ে কঠিন সময়, সৌদি আরবের সঙ্গে হারটাই সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত। মেক্সিকোর সঙ্গে ম্যাচটা ছিল সবচেয়ে কঠিন। আমার মনে হয়, এই ম্যাচে আমরা সবচেয়ে বাজে খেলেছি। তবে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। তবে এই দলটা না পেলে ম্যাচটা বের করা খুব কঠিন হতো।
ডিয়েগো ম্যারাডোনা...
ডিয়েগো ম্যারাডোনার হাত থেকে বিশ্বকাপ ট্রফিটা পেলে খুশি হতাম। কিন্তু তিনি অন্তত আর্জেন্টিনার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া দেখেছেন, জাতীয় দল নিয়ে তাঁর প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। ট্রফিটা তাঁর হাত থেকে নিতে পারলে দারুণ একটা ছবি হতো! ডিয়েগো ছাড়াও ওপর থেকে আরও যারা আমাদের ভালোবাসে, তাদের ভালোবাসায় জোর ছিল বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। ট্রফিটা (মঞ্চে) রাখা ছিল। যা করতে ইচ্ছা হচ্ছিল, তা পারছিলাম না। ট্রফিটা যেন আমাকে ডাকছিল ‘এসো, আমাকে নিয়ে যাও। এখন তুমি আমাকে ছুঁতে পারো।’ যাওয়ার সময় ট্রফিটায় চুমু খাই কারণ ইচ্ছা করছিল।
টাইব্রেকারে মন্তিয়েলের শেষ শট, তখন কেমন লেগেছে, তা বোঝানো খুব কঠিন। অনেক কিছুই মাথায় আসছিল। জয়টা বিশ্বাস হচ্ছিল না। সবাই বলছিল, সবকিছু শেষ হয়েছে। আর আমি ভাবছিলাম, শেষ পর্যন্ত একদম শেষ দিকে এসে জাতীয় দলের হয়ে সবকিছু জিততে পারলাম! কখনো কল্পনা করিনি সবকিছু এভাবে হবে। ওই মুহূর্তটা আমার জন্য অনন্য।
বিশ্বকাপ ফাইনালের আগের রাতটি, বিশ্বকাপজুড়ে যা করেছি, সেটাই। আন্তোনেল্লার সঙ্গে গল্প করেছি। তবে খেলা নিয়ে তেমন কথা বলিনি। প্রতিটি ম্যাচের আগে যা যা করেছি, সেটাই মেনেছি। নতুন কিছু নয়, একই কাজ করেছি। ঘুমটা ভালো হয়েছিল এবং বিশ্বকাপজুড়েই খুব ফুরফুরে মেজাজে ছিলাম।
বিশ্বকাপ জিতে সেখানে ফিরতে পারার অনুভূতিটা খুব সুন্দর ছিল। আমি মাত্র এক–দুই ঘণ্টা ঘুমাতে পেরেছি। ভোর ৫টা থেকে ৬টার মধ্যেই লোকজন বুয়েনস এইরেসের অবিলিস্কে ভিড় জমাতে শুরু করে। বুঝতে পেরেছিলাম উদ্যাপনটা পাগলাটে হবে। তবে সবচেয়ে ভালো লেগেছে সবার আচরণ। প্রায় ৫০ লাখ মানুষ জমায়েত হয়েছিল, কিন্তু তেমন বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।