Date: May 01, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সারাদেশ / চট্টগ্রাম / নাব্যতা সংকটে ফেরিঘাটে দুর্ভোগ, চুপচাপ সংশ্লিষ্টরা - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

নাব্যতা সংকটে ফেরিঘাটে দুর্ভোগ, চুপচাপ সংশ্লিষ্টরা

February 06, 2023 03:08:58 AM   দেশজুড়ে ডেস্ক
নাব্যতা সংকটে ফেরিঘাটে দুর্ভোগ, চুপচাপ সংশ্লিষ্টরা

রুবেল হোসেন, লক্ষ্মীপুর:
লুৎফর রহমান (৪৭), বাড়ি ভোলার দিঘলদীতে, চাকরি করেন চট্টগ্রামে। গত শনিবার চট্টগ্রামে তার এক স্বজন মৃত্যুবরণ করেন। রবিবার সকালে এ্যাম্বুলেন্স করে মৃত ব্যক্তির লাশ নিয়ে আসেন লক্ষ্মীপুর মজুচৌধুরী হাটের ফেরিঘাটে। দুই ঘণ্টার অধিক সময় পার হয়ে যাচ্ছে ফেরির দেখা নেই।

আক্ষেপ প্রকাশ করে লুৎফর রহমান দেশেরপত্রকে জানান, ক্যামেরার সামনে কথা বলে কি হবে? আমাদের কষ্টের কথাগুলো মাঝেমধ্যে গণমাধ্যমে আসলেও কোন প্রতিকার দেখছি না। এ রুটে প্রায় আমাদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। এ ঘাটে নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে- টয়লেট নেই, যাত্রীদের বসার কোন স্থান নেই। আমরা বুঝি নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে শুকনো মৌসুমে ফেরি আটকা পড়ে।

শওয়ান নামে এক যুবক বলেন, আমার বাড়ি সাতক্ষীরা জেলায়, চাকরি করি বরিশালে। দুই দিন আগে বরিশাল থেকে ফেনীতে যাই। আজ ভোররাতে এ ফেরিঘাটে আসি। ১০টার মধ্যে বরিশাল অফিসে থাকতে হবে। এখন প্রায় ৯টা ১৫ বাজে এখনও ফেরির দেখা নেই। কোথাও বসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিব সেই সুযোগও নেই। কাউন্টারও বন্ধ। সংশ্লিষ্ট কাউকে দেখা যাচ্ছে না।

রবিবার সকাল পৌণে ৮টার দিকে মজুচৌধুরী হাট ফেরিঘাটে গিয়ে ভোলা ও বরিশাল গামী কিছু সংখ্যক যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীত মৌসুমে কুয়াশা ও নাব্যতা সংকটের কারণে লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌ-রুটের ফেরি ও লঞ্চ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ফলে শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক ভোলার ইলিশা ঘাটে যাওয়ার জন্য লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরী হাটের ফেরিঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় প্রহর গোনে। অপর পারেও একই চিত। গত ৩ মাস ধরে মানুষের এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কনকচাঁপা ফেরিটি ঘাটে আসে।

বিআইডব্লিউটিসির কর্তকর্তারা জানান, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌ-রুট দিয়ে যাতায়াত করে। ২০০৬ সালের এপ্রিলে তিনটি ফেরি নিয়ে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মজুচৌধুরীহাট ফেরিঘাটটি চালু করে সরকার। এখন কলমিলতা, কনকচাঁপা, কিষাণী ও কাবেরীসহ পাঁচটি ফেরি চলাচল করছে। এ ছাড়া প্রতিদিন এই ঘাট থেকে কয়েক হাজার যাত্রী নিয়ে ৮ থেকে ১০টি লঞ্চ ভোলার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

জানা যায়, মজুচৌধুীহাট ফেরিঘাটের এক কিলোমিটার দূরে রহমতখালী চ্যানেল। সম্প্রতি এই চ্যানেলে জেগে উঠেছে বিশাল এক ডুবোচর। এই নৌ-রুটের বিভিন্ন স্থানে আরও কয়েকটি নতুন ডুবোচর জেগে উঠেছে। এসব ডুবোচরের আশপাশের এলাকায় ভাটার সময় থাকে কোমরপানি। এতে করে প্রতিদিন চার থেকে আট ঘণ্টা পর্যন্ত পণ্য ও যাত্রীবাহী নৌযান ডুবোচরে আটকে থাকে। জোয়ারের সময় নদীতে পানি কিছুটা বাড়ে। তখন ফেরি ও লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক হয়।
ফেরি ও লঞ্চের চালকেরা জানান, চ্যানেলের মুখ সরু হয়ে পড়ায় ফেরি চলাচল বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ফগ লাইট না থাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে সামান্য কুয়াশায়ও মাঝনদীতে ফেরি নোঙর করাতে বাধ্য হন তাঁরা। ফলে দুই পারে পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে আটকে থাকতে হয় দিনের পর দিন।

ভোলাগামী পণ্যবাহী ট্রাকের চালক আজিম বলেন, গত ২-৩ মাস ধরে লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌ-রুটে নাব্যতা সংকটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয় এই নৌ-রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের। নষ্ট হয় ট্রাকের কাঁচামাল ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসামগ্রী।

ফেরিঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় থাকা রডবোঝাই ট্রাকের চালক হানিফ মিয়া বলেন, ‘গত বুধবার রাতে ঘাটে এসেছি। এখন পর্যন্ত সিরিয়াল পাইনি। ভোলা যাব, কিন্তু পানি কম থাকায় ডুবোচরের কারণে ঠিকমতো ফেরি চলাচল করতে পারছে না। টয়লেট ও খাবার হোটেলেরও সংকট এখানে। এইভাবে আমার মতো আরও অনেক চালক পাঁচ থেকে সাত দিন ধরে পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে ঘাটে বসে আছে।’

ফেরি কনকচাঁপার (চালক) মাস্টার অফিসার মো. মহসিন খাঁন দেশেরপত্রকে জানান, এই রুটে ৫টি ফেরি চলাচল করে। বর্ষাকালে নদীতে ফেরি আসা-যাওয়া করতে তেমন সমস্যা হয় না। ২ আড়াই ঘণ্টার মধ্যে আমরা লক্ষ্মীপুর থেকে ভোলা যেতে পারি। শুকনো মৌসুমে নদীতে পানি কম থাকায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পার হওয়া যায় না। প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা থেকে ৪ ঘণ্টা সময় লাগে ঘাটে ফিরতে। যার ফলে যাত্রীদের যেমন দুর্ভোগে পড়তে হয়, তেমনি আমাদের অনেক সময়ও নষ্ট হয়। আমরা দেখি বিভিন্ন পয়েন্টে নদীর খননকাজ চলে। এখান দিয়ে করলে আবার অন্যস্থানে চর জেগে উঠে।

মজুচৌধুরী হাট ফেরিঘাটের (বিআইডাব্লিউটিসি) দায়িত্বপ্রাপ্ত কামরুল রশিদ কোনো কিছুই বলতে রাজি হন নি। যাত্রীদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান।

জেলা বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ জানান, সঠিক সময়ে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল না হওয়ায় ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। প্রতিবছরই নামমাত্র ড্রেজিং করা হয়। বাস্তবে কোনো কাজ হচ্ছে না। দ্রুত জেগে ওঠা চরগুলো ড্রেজিং করে নৌরুটে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মজুচৌধুরীহাট ফেরিঘাটের (বিআইডাব্লিউটিসি) ব্যবস্থাপক মো. কাউছার বলেন, বর্তমানে পাঁচটি ফেরি চলাচল করছে। ঘন কুয়াশা ও নদীতে ডুবোচর জেগে ওঠায় ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে জোয়ার-ভাটার দিকে তাকিয়েই ফেরি ও লঞ্চ ছাড়তে হয়। এ ছাড়া প্রতিবছরই ড্রেজিং করা হয়। তবে নামমাত্র। এসব ড্রেজিং দিয়ে কোনো কাজ হচ্ছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসাইন আকন্দ দেশেরপত্রকে জানান, ইতোমধ্যে আমরা নৌ-মন্ত্রণালয়ের কাগজপত্র নিয়ে সংশ্লিষ্ট সচিব ও ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। খুব শীঘ্রই আধুনিক নৌ-বন্দর হবে। আর নদীর নাব্যতা সংকট নিয়ে যে সমস্যা রয়েছে, সংশ্লিষ্ট বিআইডাব্লিউটিসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করব।