
আশিকুর রহমান:
প্রচারিত সংবাদের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে গাজীপুর কাঁচামাল আড়ৎদাড় মালিক গ্রুপ। শনিবার গাজীপুরের চৌরাস্তা সংলগ্ন ব্যবসায়ী এই সংগঠনটির কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সভাপতি আব্দুস সোবহান। এ সময় বাজারের গ্রুপের নেতৃবৃন্দ ও ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য গাজীপুর কাঁচামালা আড়ৎদার মালিক গ্রুপ সংগঠনটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনপ্রাপ্ত যার লাইসেন্স নং-৩৭ এবং নিবন্ধন নং ৬৩৪।
এরআগে গত ২৬ মে এটিএন নিউজের ‘অনুসন্ধান ও সমাধান’ নামক একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে হক মার্কেট, মার্কেটের জমির মালিক নুরুল হক ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী শাহানাজের বিষয় প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেই প্রতিবেদনে গাজীপুর কাঁচামাল আড়ৎদাড় মালিক গ্রুপের সভাপতি আব্দুস সোবহানসহ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ‘একপেশে’ সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আব্দুস সোবহান বলেন, ২০০৫ সালে জমির মালিক নুরুল হক হজে যাওয়ার আগে (তৎকালীন জয়দেবপুর থানাধীন) বর্তমানে জিএমপি বাসন থানাধীন আউটপাড়া মৌজাস্থ চান্দনা চৌরাস্তা সংলগ্ন (সিএস ও এসএ ১৩৭, ১৩৮ এবং আরএস ১৫৫ ও ১৫৬ নং দাগের খাতে ৭২.৫০ শতাংশ) পরিত্যক্ত জমিটির বিপরীতে স্ট্যাম্পে লিখিতভাবে ভাড়া দিয়ে আমাদের থেকে ৬ লাখ টাকা নেন। পরে কাঁচামাল আড়ৎদাড় মালিক গ্রুপ স্থানটি ভরাট ও মার্কেট হিসেবে সংস্কার করে ব্যবসা বাণিজ্য করে আসছিলেন।
ব্যবসায়ী নেতা আব্দুস সোবহান দাবি করেন, ২০০৫ সালে হজে যাওয়ার পূর্বে স্ট্যাম্পে লিখিতভাবে টাকা নিয়ে জমিটি ভাড়ায় দেন তাদের। তবে ওই সময় লিখিত স্ট্যাম্পটি ‘চতুর’ সাবেক জামায়াত নেতা নুরুল হক নিজের কাছে রেখে দেন। হজ থেকে আসার পর জমি ভরাট ও সংস্কার বাবদ খরচকে জামানত হিসেবে উল্লেখ করে নতুন করে স্ট্যাম্প করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান তিনি।
আব্দুস সোবহান আরও বলেন, ভরাট ও সংস্কার করার পর আমরা ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলাম। ওই সময় আমরা ইনভেস্ট করে ভরাট ও স্থাপনা তৈরি করার পর আমরা ভাড়া পেতাম দেড় লক্ষ টাকা। কিন্তু নুরুল হক সাহেব হজ থেকে এসে বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নেতাদের সাথে মিলে আমি ও বাবুল চেয়ারম্যানসহ ব্যবসায়ীদেরকে এখান থেকে মারধর ও নির্যাতন করে বের করে দেয়। পরবর্তীতে আইনগতভাবে মোকাবেলা করে আমরা মার্কেটে পুনঃরায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলাম।
এটিএন নিউজে প্রচারিত সংবাদটি একপেশে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অনুসন্ধান ও সমাধান’ অনুষ্ঠানের প্রতিবেদক আবুল কালাম আজাদ আমার থেকে যে সাক্ষাতকার নিয়ে তা পুরোটা প্রকাশ করেন নি। তিনি বক্তব্য থেকে কাটিং করে বক্তব্য প্রকাশ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে এ ধরণের একপেশে প্রতিবেদনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদও জানিয়ে গাজীপুর কাঁচামাল আড়ৎদাড় মালিক গ্রুপের সভাপতি আরও বলেন, জমির মালিক নুরুল হক সাহেব। কিন্তু আমরা জমিটি ভাড়ায় নিয়ে ভড়াট করেছি, স্থাপনা নির্মাণ করেছি, এই মার্কেটের উপর নির্ভর করে এখানকার ৫-৬ শতাধিক ব্যবসায়ী তাদের সংসার পরিচালনা করেন। তাদের উচ্ছেদের বিষয়টি নিয়ে গাজীপুর জজ কোর্টে মামলা মামলা আছে। আদালত এই মার্কেটের উপর একটি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যে, মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ব্যবসায়ীদেরকে এখান থেকে কেউ উচ্ছেদ করতে পারবে না বা কেউ দখল নিতে পারবে না এবং কেউ আইনশৃংখলার বিঘ্ন ঘটাতে পারবে না।
এটিএন নিউজে দেওয়া সাক্ষাতকারে নুরুল হক মাথায় পিস্তল ঠেকানোর যে অভিযোগ করেছেন তা মিথ্যা উল্লেখ করে আব্দুস সোবহান বলেন, “ইতোমধ্যে আমরা এই মার্কেটে কোটি-কোটি কোটি টাকা ইনভেস্ট করেছি। কিন্তু তারা আমাদেরকে অন্যায়ভাবে মার্কেট থেকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করে আসছে। আমি আব্দুস সোবহান নুরুল হকের মাথায় কখনোও পিস্তল ঠেকাইনি। বরং ২০২২ সালে তিনি তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে আমাকে রাস্তার মধ্যে কুপিয়ে রাস্তায় ফেলে রেখেছিলেন, হত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। যা ওই সময়ে মিডিয়াগুলিতে প্রকাশ হয়েছিল।”
“এটিএন নিউজে প্রচারিত প্রতিবেদনে মিছিলের একটি ভিডিও যোগ করা হয়েছে। যেখানে আমরা শহীদ আহসানুল্লাহ মাস্টারের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আওয়ামী মৎসজীবি লীগের পক্ষ থেকে মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু এটিকে তারা আংশিক প্রকাশ করে মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করেছে।” যোগ করেন তিনি।
নুরুল হক দীর্ঘদিন ধরে এখানকার ব্যবসায়ীদের উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছে উল্লেখ করে আব্দুস সোবহান অভিযোগ করেন, সাবেক জামায়াত নেতা নুরুল হক তার বাহিনী নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অন্যায়ভাবে এই মার্কেট থেকে উচ্ছেদ করার জন্য ষড়যন্ত্র করে আসছে। এছাড়াও মার্কেট ছেড়ে না দিলে মামলা, প্রাণনাশ-অগ্নিসংযোগসহ নানা হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে নুরুল হকের সহযোগীরা। গাজীপুর কাঁচামাল আড়ৎদাড় গ্রুপের সদস্যদের উচ্ছেদ করার জন্য ২০২২ সালে নুরুল হক গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি সিআর মামলা দায়ের করেন। যার নং-৬২৭/২০২২ইং। ইতোমধ্যে এই মামলা ও অভিযোগটি বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে পিবিআই এর তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এর আগেও নুরুল হক কর্তৃক দায়েরকৃত অভিযোগ বাসন থানা পুলিশের তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। যার প্রতিবেদন গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানা পুলিশ গত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ইং তারিখে ৫৭৮৯ নং স্মারকে পুলিশ কমিশনার বরাবর দাখিল করেন। একাধিক মামলা ও অভিযোগ তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার পরও নুরুল হক বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তর ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নিকট অনবরত অভিযোগ করে আসছেন; হয়রানিমূলক মামলা ও অভিযোগ দিয়ে আসছেন। ফলে গাজীপুর কাঁচামাল আড়ৎদাড় মালিক গ্রুপের সদস্যরা হয়রানি ও অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
আব্দুস সোবহান বলেন, “এটিএন নিউজে প্রচারিত প্রতিবেদনে একজন জজের বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। সেখানে আইনগতভাবে মোকাবেলা করার বিষয়টি তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু নুরুল হক দীর্ঘদিন ধরে মিথ্যা মামলা, সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হুমকি-ধামকি, মামলা, বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়ে আমাদের উচ্ছেদের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। আমরা এই গাজীপুর কাঁচামাল আড়ৎদাড় মালিক গ্রুপের ব্যবসায়ীরা চাই বিষয়টি আদালতের মাধ্যমে ফয়সালা আসুক। আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবে আমরা গ্রুপের সকল সদস্যরা তা মেনে নেব। এর বাইরে ‘গাজীপুর কাঁচামাল আড়ৎদাড় মালিক গ্রুপ’ পরিত্যক্ত এই জমিতে যা ইনভেস্ট করেছে তা আমাদেরকে ফেরত দেওয়া হলে আমরা তা মেনে নেব এবং অন্য কোথাও গিয়ে নতুন করে ব্যবসা শুরু করবো।”
সংবাদ সম্মেলনে আব্দুস সোবহান ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে পুরো বিষয়টি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সঠিক বিচার দাবি করেন। এসময় গাজীপুর কাঁচামাল আড়ৎদাড় মালিক গ্রুপের নেতৃবৃন্দ ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।