
হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম
আবহমান কাল ধরে আমাদের দেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। তাদের অস্থি-মজ্জায় বংশ পরম্পরায় ধর্মের প্রতি আবেগ-অনুভূতি মিশে আছে। ফলে ধর্মের প্রচারে এদেশে পীর ও ধর্মীয় বক্তাদের ব্যাপক চাহিদা বা জনপ্রিয়তা রয়েছে। গ্রাম-গঞ্জে, পাড়া-মহল্লায় তাদের অগণিত ভক্ত-মুরিদান, নিয়মিত শ্রোতা ও অনুসারী রয়েছে; যারা প্রায় সময়ই এসব ধর্মীয় বক্তাদের নিয়ে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করে থাকেন। বলা যায়, এই ওয়াজ মাহফিলগুলো এখন গ্রাম বাংলার একটি সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। বাৎসরিক, মাসিক বা কোনকিছু উপলক্ষে, পীরের খানকা, মাজার, হেফজখানা, মসজিদ, মাদ্রাসার জন্য অর্থ সংগ্রহ ইত্যাদি বিভিন্ন লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা এসব ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করেন। ধর্মপ্রাণ সাধারণ মুসলমানগণ সওয়াব ও পরকালে জান্নাত লাভের আশায় ওয়াজ শুনে থাকেন। ওয়াজ মাহফিলে কোর’আন-হাদিসের কথা বলা হবে, আল্লাহর জিকির করা হবে, আমল-ইবাদত বন্দেগির তালিম দেওয়া হবে, এতে গেলে পাপমোচন হবে এমন একটি বিশ্বাস পোষণ করে তারা রাত জেগে, টাকা দিয়ে ধর্মীয় বক্তাদের ভাড়া করে এনে ওয়াজের আয়োজন করেন। একটা সময় আমাদের দেশে অনেক হক্কানি-সত্যনিষ্ঠ আলেম ছিলেন, যারা সত্যিকার অর্থেই ধর্মের জ্ঞান রাখতেন। তারা জ্ঞানী-গুণী, ভদ্র-সভ্য, বিনয়ী-সুশৃঙ্খল ছিলেন। তারা ইসলাম প্রচার করে মানুষের কাছ থেকে বিনিময় নিতেন না, জনগণকে হুজুগে-গুজবে মাতিয়ে তুলতেন না। তাদের কথায়, আচরণে অন্যের সম্মানহানী কল্পনাও করা যেত না।
কিন্তু এখন সত্যনিষ্ঠ আলেমদের বদলে ওয়াজ মাহফিলগুলো দখল করে নিয়েছে একটি স্বার্থান্বেষী, উগ্রবাদী, ধর্মব্যবসায়ী কুচক্রী মহল বা সিন্ডিকেট। তারা নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধিতে, ভিন্নমতের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণকে উস্কে দিতে, মিথ্যাচার, অপপ্রচার চালাতে ওয়াজ মাহফিলের মাঠকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে, তারা ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করছে, সরকারের পক্ষে-বিপক্ষে ক্ষমতার লোভে নানা ধরনের দল করছে। তাদের দাপট ও অত্যাচারে সত্যনিষ্ঠ আলেমরা নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। অনেকটা নিভৃতচারী হয়েছেন। ফলে ইসলাম চলে গিয়েছে এসব ধর্মজীবীদের দখলে। কখনও আজগুবি কেচ্ছা-কাহিনী শুনিয়ে, অযৌক্তিক, অনর্থক, অবৈজ্ঞানিক কথাবার্তা বলে, জিকির তুলে দিয়ে, অন্য দল-মতের মানুষের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা বলে, সিনেমার খলনায়কদের মত হুমকি-ধামকি দিয়ে, সন্ত্রাসী হামলার হুশিয়ারী দিয়ে, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, আলাপ-আলোচনাসহ বিভিন্ন উপায়ে তারা ওয়াজের মাঠকে চাঙ্গা রাখেন ও বিভিন্ন উসিলায় অর্থ সংগ্রহ করেন। এভাবেই চলে তাদের ধর্মবাণিজ্য।
ওয়াজে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার:
বিগত ২৮ বছর ধরে এই ধর্মজীবী গোষ্ঠীটি হেযবুত তওহীদকে তাক (Target) করে বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা প্রচার করে বেড়াচ্ছে। সাধারণ মানুষ যাতে হেযবুত তওহীদের কথা না শুনে কিংবা তাদের সম্পর্কে ভুল জানে তাই তারা এ আন্দোলনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তা বলে, মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগবে এমন এমন মিথ্যাচার, বানোয়াট বিষয় বলে জনসাধারণকে ক্ষিপ্ত করে তুলছে। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে, তারা ওয়াজ মাহফিলে, মসজিদের মিম্বরে, ফেসবুক, ইউটিউবে প্রতিনিয়ত হেযবুত তওহীদের নাম দিয়ে এমন সব প্রোপাগাণ্ডা চালাচ্ছে যা হেযবুত তওহীদের কথা তো নয়ই, হেযবুত তওহীদের ঈমান আকিদাও নয়। এভাবেই তারা প্রতিনিয়ত মানবতার কল্যাণকামী এই আন্দোলনের পথ রুদ্ধ করতে উঠেপড়ে লেগেছে। প্রশ্ন আসতে পারে, হেযবুত তওহীদ যদি ইসলামের জন্যই কাজ করে থাকে, ইসলামের কথাই বলে তাহলে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে এই ধর্মীয় বক্তাদের এত বিদ্বেষ কেন? তারা সম্মিলিতভাবে হেযবুত তওহীদের কার্যক্রম বন্ধ করতে উঠেপড়ে লেগেছে কেন?
এর উত্তর আমি আগেও দিয়েছি - হেযবুত তওহীদের বক্তব্যকে টার্গেট করে ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণিটির এই সম্মিলিত আক্রমণ, অপপ্রচার, মিথ্যাচার, প্রোপাগান্ডার মূল কারণ তারা হেযবুত তওহীদকে ভয় পাচ্ছে। কেননা হেযবুত তওহীদ শত শত বছর ধরে চলা এই ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠীটির রমরমা ধর্মব্যবসার গোমর ফাঁস করে দিয়েছে। ধর্মকে ব্যবহার করে যে জালিয়াতি তারা এতদিন করে এসেছে, আল্লাহর কোর’আনের আয়াতকে গোপন করে, আয়াত বিক্রি করে যে হারাম অর্থ উপার্জন করে তারা পেটপূজা এবং ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধার করেছে, লেবাসের আড়ালে তাদের যে কদর্য রূপ লুকিয়ে রেখেছে হেযবুত তওহীদ সেটা প্রকাশ করে দিয়েছে। ফলে নিজেদের ধর্ম বাণিজ্যকে টিকিয়ে রাখতে, ধর্মব্যবসাকে বাঁচাতে তারা হেযবুত তওহীদের মুখ বন্ধ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
কিন্তু তারা কোনোভাবেই যখন হেযবুত তওহীদের মুখ বন্ধ করতে পারছে না, তাদের কোন হুমকি-ধামকি, চোখ রাঙানি, হামলা, মারধর, প্রাণনাশ কোনকিছুই যখন হেযবুত তওহীদের অগ্রযাত্রাকে থামাতে পারছে না, তখন তারা হেযবুত তওহীদের কণ্ঠ রোধ করার জন্য বিকল্প পথ বেছে নিল। তারা যৌক্তিকভাবে হেযবুত তওহীদের আদর্শের মোকাবেলা করতে না পেরে, আমাদের বক্তব্যের বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনার পথ বাদ দিয়ে সাধারণ মানুষকে হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে বিভ্রান্ত করতে মিথ্যাচার, প্রোপাগান্ডা ও উস্কানির পথ বেছে নিল। তারা ওয়াজ মাহফিলে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমানের সামনে বসে, ফেসবুকে-ইউটিউবে ভিডিও বানিয়ে আমাদের কথাকে বিকৃত (Twist) করে, বক্তব্যকে কাটিং-ছাটিং করে, ছবি এডিট করে হেযবুত তওহীদের নামে মিথ্যাচার চালাতে লাগল। এছাড়া প্রতিনিয়ত তাদের হুমকি-ধামকি তো আছেই। পরিকল্পিতভাবেই এই ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠীটি হেযবুত তওহীদের নামে এসব প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে যা মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করবে। এভাবে তারা আমাদের বিরুদ্ধে জনরোষ সৃষ্টি করছে।
কিছুদিন আগে গাজীপুরে একটি মাহফিলে একদম অপরিচিত একজন ধর্মীয় বক্তা তার ওয়াজে বলছিলেন, ‘আমাকে যেখানে পাবে সেখানেই যেন আমার হাড্ডিগুড্ডি গুড়া গুড়া করে দেয়।’ খুলনায় ইমরান বিন লুৎফর নামে আরেক বক্তা (২৯ জুন, ২০২১) তার মসজিদের জুমার খোতবায় বললেন, আমাকে সামনে পেলে নাকি আমার মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলতেন। চিন্তা করে দেখুন, একজন ধর্মীয় বক্তার মুখে কেমন সন্ত্রাসী কথাবার্তা! এগুলো কী ওয়াজ মাহফিল? এগুলো ইসলামের শিক্ষা? দেশে কি আইন নেই? দেশে কি আদালত নেই? ওয়াজের মাইক ব্যবহার করে প্রকাশ্যে এই ধরনের সন্ত্রাসী-উগ্রবাদী কথাবার্তা অবলীলায় তারা বলে দিচ্ছে। আমাকে পেলে যেন আমার হাড্ডিগুড্ডি গুড়া করে সেজন্য সাধারণ মুসলমানদের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। আমি কে, আমার পরিচয় কী, আমার বক্তব্য কী, আমার আকিদা কী, আমার বিশ্বাস কী, আমরা কী আদর্শ নিয়ে মাঠে নেমেছি তা কিচ্ছু জানে না এই মুসলমানেরা। তারা কখনো জানার চেষ্টাও করবে না। কারণ হুজুর বলেছে, আমার কথা শুনলে নাকি ঈমান চলে যাবে। হুজুর বলেছে, সুতরাং এটাই তারা বিশ্বাস করে নিবে। হুজুর বলেছে, ‘সেলিম নামে এক লোক বের হয়েছে তাকে মেরে ফেলতে হবে, তার হাড্ডিগুড্ডি ভেঙ্গে ফেলতে হবে।’ এই ফতোয়া তারা মনে রাখবে আর কোনো একদিন জুমার উসিলায় বা অন্য কোনো উসিলায় একত্র হয়ে হেযবুত তওহীদের উপর হামলা চালাবে। এভাবে তারা এ পর্যন্ত পাঁচজন হেযবুত তওহীদ সদস্যকে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও জবাই করে হত্যা করেছে। এই হচ্ছে বর্তমানে আমাদের দেশের অবস্থা। ধর্মের নামে জনতাকে উত্তেজিত করে বে-আইনী কাজ করিয়ে নেওয়া আমাদের দেশের একটি বিশাল সংকটে পরিণত হয়েছে। কারো সাথে কারো কথা না মিললেই তাকে কাফের ফতোয়া দিয়ে তাকে হত্যা করাকে বৈধ বলে ঘোষণা করা হচ্ছে। একে জেহাদ বলে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে ধর্মবিশ্বাসী মুসলমানদেরকে ক্ষিপ্ত করে তোলা, জনরোষ সৃষ্টি করা, তাদের বাড়িঘরে হামলা-আক্রমণ চালানো এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে ধর্মীয় আবেগ।
কিছুদিন আগে চরমোনাইয়ের তিনদিনব্যাপী একটি সম্মেলনে হাজার হাজার মুসল্লির সামনে দুই একজন বক্তা বাদে বাকি সকলেই দেখলাম হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে ডাহা মিথ্যা কথা বলল। ইতিপূর্বে শায়েখে চরমোনাই মুফতি ফয়জুল করিম তার অনুসারীদের বলেছেন, ‘হেযবুত তওহীদকে যেখানে পাবেন ধরবেন আর পিঠের চামড়া তুলে ফেলবেন।’ যখন আমি কথাগুলো শুনলাম হতবাক হয়ে গেলাম। একটা ধর্মীয় জলসায় যেখানে মানুষকে আল্লাহ-রসুলের (সা.) পথে নসিহত করার কথা, মানুষকে রাগ, ক্রোধ, হিংসা, বিদ্বেষ, অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রেখে আল্লাহভীরু, মুত্তাকি, নৈতিকভাবে উন্নত ও সৎ মানুষে রূপান্তরিত করার কথা, সেখানে তারা জনগণের সামনে বসে, ধর্মের লেবাস ধারণ করে মানুষকে হিংসাত্মক ও বিদ্বেষপরায়ণ করে তুলছে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লেলিয়ে দিচ্ছে। পুরো কাজটিই করছে ধর্মের নাম দিয়ে।
ওয়াজের আয়োজকদের প্রতি কথা:
যারা এসব ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করেন আমি তাদেরকে বলতে চাই, সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ এই সমস্ত উগ্রবাদী ধর্মজীবী গোষ্ঠীকে বিশ্বাস করে। লেবাস দেখে তাদেরকে ইসলামের কর্তৃপক্ষ মনে করে। তারা যা বলে সেটাকেই ইসলামের, আল্লাহ-রসুলের কথা মনে করে। তারা ওয়াজ মাহফিলে সওয়াব কামাই করতে আসে। আর তার সুযোগে এই ধর্মীয় বক্তারাও অন্য দলের বিরুদ্ধে যা ইচ্ছা তা-ই বলে বেড়াচ্ছে। কিন্তু এই মিথ্যা দিয়ে আপনারা বেশিদিন এই ওয়াজ মাহফিল চালিয়ে যেতে পারবেন না। আপনারা এসব মাহফিলের আয়োজন করার আগে তাদের সম্পর্কে খোঁজ খবর নিন। কিছু চিহ্নিত বক্তা আছে তারা সবসময় উস্কানি দেয়, হুমকি দেয়। এরা কোর’আন-হাদিসের কোন জ্ঞান রাখে না। যারা প্রকৃত জ্ঞানী, সত্যনিষ্ঠ আলেম তারা ভিত্তিহীন কথা বলে না, মিথ্যা কথা বলে না, মানুষের ঈমানকে হাইজ্যাক করে না, উস্কানি দেয় না। প্রকৃত জ্ঞানীদের কথা শুনলে হৃদয় জুড়িয়ে যায়, আর এদের কথা শুনলে উগ্রবাদী মানসিকতার সৃষ্টি হয়। প্রতিপ¶কে আক্রমণ করার জন্য হাত নিশপিশ করে, রক্ত টগবগ করে। এরা সত্যনিষ্ঠ আলেম নয়। আপনারা তাদের লেবাস দেখে, আরবিতে টেনে টেনে কেরাত শুনে মনে করছেন তারা জ্ঞানী। কিন্তু না। তাদের উগ্রবাদী উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণে যদি কারো উপর আক্রমণ হয় তার জন্য এসব মাহফিলের আয়োজক কমিটিও দায়ী থাকবেন। আপনারা এই মিথ্যাবাদী ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠীর ব্যাপারে সর্তক থাকুন। যে ওয়াজ শুনে মানুষ সৎ, তাকওয়াবান, দেশপ্রেমী, মানবতার কল্যাণকামী, মানুষের সহানুভূতি-ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হবে তেমন ওয়াজের আয়োজন করুন। আর যে ওয়াজ মানুষের মধ্যে হিংস্রতা, উগ্রতা, বিদ্বেষপরায়ণতা, মানুষকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে উদ্বুদ্ধ করে তেমন ওয়াজ অতিসত্ত্বর বন্ধ হোক।
অপপ্রচারকারী বক্তাদের প্রতি কথা:
আর বক্তাদেরকে বলব, জনগণকে এভাবে অন্ধ বানিয়ে বেশিদিন রাখতে পারবেন না। মানুষ যখন জানবে আপনারা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করতে মিথ্যা কথা বলেন, ভিত্তিহীন কথা বলেন তখন তারা আর ওয়াজ মাহফিলে যাবে না। আপনাদের এসব অনৈসলামিক, বে-আইনি কর্মকাণ্ডের একটি ফল নিশ্চয়ই আপনারা পাবেন।
আর যারা এসব ধর্মীয় বক্তাদের অনুসারী আছেন তাদের প্রতি আমাদের কথা হচ্ছে, আপনারা আল্লাহ-রসুলকে (সা.) বিশ্বাস করেন, পরকালে বিশ্বাস করেন, ইসলামকে ভালোবাসেন কোন সন্দেহ নেই। সওয়াবের আশায় জাহাজ ভর্তি করে হুজুরের বয়ান শুনতে চলে যান, আমার কোন আপত্তি নাই। তবে আমাদের সম্পর্কে কোন ভুল ধারণা পোষণ করার আগে আমাদের সম্পর্কে ভালো করে জানুন, আমাদের বক্তব্য শুনুন, হেযবুত তওহীদ কী বলতে চায়, কী করতে চায়- সেটা আমাদের থেকে জেনে পরিষ্কার হয়ে নিন। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমরা আল্লাহ-রসুলের (সা.) প্রকৃত ইসলাম নিয়ে দাঁড়িয়েছি। আমরা আল্লাহর দীন, দীনুল ইসলাম আবার মানবজীবনে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এর বাইরে আমাদের আর কোন চাওয়া নাই, কোন দুনিয়াবি স্বার্থ নাই। মানুষকে আল্লাহর তওহীদের দিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্যই আমাদের এই কাজ, এই সংগ্রাম। এখন আমার এই কথাগুলো উপস্থাপনের ধরন আর আপনাদের পীর সাহেব ও মুফতি-মুফাসসিরদের বলার ধরন, তাদের চেহারা আর আমার চেহারা-লেবাস মিলবে না এটাই স্বাভাবিক। এখন এই অমিল থাকার কারণে আমি কাফের হয়ে গেলাম, নাস্তিক হয়ে গেলাম, আমাকে মেরে ফেলতে হবে, হাড্ডি-গুড্ডি ভেঙে দিতে হবে, পিঠের চামড়া তুলে ফেলতে হবে- এটা কোন ধরনের সংকীর্ণতা? এটা কোন যুক্তিতে ন্যায়সঙ্গত হয় সেটা বিবেচনার ভার আমি আপনাদেরকেই দিলাম। আপনাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, এভাবে আমাদের সম্পর্কে না জেনে না শুনে অনর্থক-অহেতুক আমাদের কোনো সদস্যের উপর আক্রমণ করবেন না। করলে সেটা অন্যায় হবে। আপনাদের অন্যায় আক্রমণে আমাদের কিছু সদস্যের ¶য়-ক্ষতি হবে, প্রাণ যাবে। কিন্তু এই অন্যায়ের একটা ফল আছে। প্রাকৃতিক প্রতিশোধ বলতে একটা কথা আছে অর্থাৎ আল্লাহর শাস্তি। যারা না জেনে না বুঝে অন্যায়ভাবে আমাদের ক্ষতি করতে চাইবে তারা আল্লাহর শাস্তির সম্মুখীন হবেন।
সরকারের প্রতি কথা:
সরকারের উদ্দেশ্যে আমার কথা হচ্ছে, ওয়াজের ময়দানে ধর্মের নামে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচার, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণের হুমকি প্রদান ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ প্রচারের উদ্দেশ্যে যে মাহাফিল চলছে, এগুলো কোন ইসলামিক সম্মেলন নয়। যে সমাবেশে বে-আইনি কাজের নির্দেশ দেওয়া হয়, অপরাধ সংঘটনের জন্য বে-আইনী ফতোয়ার বান ছোঁড়া হয় সেটা ইসলামের মাহফিল হতে পারে না, সেটা বে-আইনী সমাবেশ। এমন বে-আইনি সমাবেশের বিরুদ্ধে আপনারা ব্যবস্থা নিন। এগুলো বন্ধ করুন, যদি বন্ধ করতে না পারেন তবে জেনে রাখুন দেশে দাঙ্গা সৃষ্টি হবে, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হবে। তারা পরিকল্পিতভাবে দেশে একটা অরাজক পরিস্থিতি কায়েম করে রাজনৈতিক স্বার্থোদ্ধার করতে চায়। তারা ইসলামের একমাত্র কর্তৃপক্ষ (Authority) নয়, ইসলাম তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি নয়। তাদেরকে কেউ ইসলামের কর্তৃত্ব দেয়নি যে তারা যা বলবে তাই ইসলাম হয়ে যাবে। কাজেই এসব ধর্মীয় বক্তাদের চিহ্নিত করা হোক। সেই সাথে হেযবুত তওহীদের নামে যারা মিথ্যাচার, উস্কানি, অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। নয়তো আমাদের প্রিয় জন্মভূমি উগ্রবাদী-সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আস্তানায় পরিণত হবে।
[ সম্প্রতি কুষ্টিয়ায় হেযবুত তওহীদের এমামের প্রদত্ত ভাষণ থেকে সম্পাদিত।
সম্পাদনা: আদিবা ইসলাম। যোগাযোগ: ০১৬৭০১৭১৬৪৩, ০১৭১১৫৭১৫৮১, ০১৭১১০০৫০২৫]