Date: May 01, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / জাতীয় / পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়লো প্রায় ২০ শতাংশ - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়লো প্রায় ২০ শতাংশ

November 22, 2022 09:24:12 AM   বিশেষ প্রতিবেদক
পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়লো প্রায় ২০ শতাংশ

বিদ্যুতের পাইকারি দাম ১৯.৯২ শতাংশ বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি। বিদ্যুতের প্রতি ইউনিট ৫.১৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬.২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ ইউনিটপ্রতি দাম বেড়েছে এক টাকা ৩ পয়সা। আগামী পহেলা ডিসেম্বর থেকে নতুন এই দাম কার্যকর হবে। আজ কাওরানবাজারের কার্যালয় থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন বিইআরসির চেয়ারম্যান আবদুল জলিল। 

নতুন মূল্য কার্যকর হওয়ার ফলে পিডিবির আয় বছরে আট হাজার কোটি টাকা বাড়বে। ইউনিট প্রতি দাম বাড়িয়ে ৮ টাকা ২৮ পয়সা করলে পিডিবি পুরো ১৭ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি থেকে মুক্ত হতে পারতো।  বিইআরসি চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘১৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির কথা’ বিবেচনা করে বিদুতের বাল্ক মূল্য হার পুনঃনির্ধারণের এই সিদ্ধান্ত তারা দিচ্ছেন। ডিসেম্বর মাসের বিল থেকে এই নতুন মূল্যহার কার্যকর হবে। 

নতুন পাইকারি মূল্যহার অনুযায়ী শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণে নিয়োজিত ডেসকোর ৩৩ কেভি লাইনে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে সর্বোচ্চ ৭ টাকা ৭৪ পয়সা। আর ডিপিডিসির ৩৩ কেভি লাইনের বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ৭ টাকা ৭২ পয়সা। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সমিতিগুলোর ৩৩ কেভি লাইনের জন্য প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে ৫ টাকা ৩৯ পয়সা যা, পাইকারি বিদ্যুতের সর্বনিম্ন দর। এছাড়া মোট ছয় কোম্পানির ২৩০ কেভি, ১৩২ কেভি ও ৩৩ কেভি লাইনের জন্য পৃথক ট্যারিফ ঠিক করা হয়েছে।

এদিকে গ্রাহক পর্যায়ে এখনই বিদ্যুতের দাম বাড়ছে না বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেছেন, গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়বে কি না তা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) যাচাই-বাছাই করে দেখবে। আজ দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে বিইআরসি গ্রাহক নয়, জেনারেশন পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয়ের ঘোষণা দিয়েছে। গ্রাহক পর্যায়ে যাচাই-বাছাই চলছে। আমাদের এখানে জেনারেশন করতে গিয়ে মূল্য বেড়ে গেছে, তেল ও গ্যাসের দাম বেড়েছে। সেজন্য মূল্যটা সমন্বয় করার জন্য বিইআরসি দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা মনে হয় না এটা (পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ানো) নিয়ে শঙ্কা আছে। কারণ গ্রাহক পর্যায়ে এটার কোনো প্রভাব পড়বে না। গ্রাহক পর্যায়ে আদৌ দাম বাড়ানোর প্রয়োজন আছে কি না তা বিইআরসির ওপর নির্ভর করছে। আপাতত গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ছে না। গ্রাহক পর্যায়ে যাতে স্বস্তি দেওয়া যায় সেই বিষয়টিও আমরা বিবেচনা করবো।’

সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুতের পাইকারি দর ইউনিট প্রতি (প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা) ৫ টাকা ১৭ পয়সা নির্ধারণ করে দিয়েছিল বিইআরসি। চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি নিজেদের ৩০ হাজার কোটি টাকার বিশাল ঘাটতির তথ্য তুলে ধরে বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৬৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ টাকা ৫৮ পয়সা করার প্রস্তাব নিয়ে আসে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবি। তবে সেই আবেদনে বেশ কিছু অসঙ্গতি ও তথ্যের ঘাটতি তুলে ধরে তা ফেরত পাঠায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি।

দ্বিতীয় দফায় আবারও আবেদন করে পিডিবি। সেই আবেদনের ওপর গত ১৮ মে গণশুনানি হয়। আরও কিছু তথ্য ও লিখিত মতামতের জন্য ৩১ মে পর্যন্ত পিডিবিকে সময় দেয় বিইআরসি। কারিগরি কমিটি পিডিবির ১৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির হিসাব দাঁড় করিয়ে তা পোষাতে বিদ্যুতের দাম ৫৮ শতাংশ বাড়ানোর পরামর্শ দেয়। তবে ১৩ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে শুনানির আদেশ ঘোষণার দিন সবাইকে অবাক করে দিয়ে পাইকারি বিদ্যুতের দাম অপরিবর্তিত রাখার কথা জানিয়েছিলেন বিইআরসির চেয়ারম্যান।

এর ৪০ দিনের মাথায় আবার কেন দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হল? এর ব্যাখ্যায় বিইআরসির চেয়ারম্যান গতকাল বলেন, শুনানি ও পরবর্তী মতামত বিশ্লেষণ করে দাম বাড়ানো হলে এর অনিবার্য প্রভাব নিরসনের বিষয়ে পিডিবির ভূমিকা কী হবে সেই বক্তব্য আগে পাওয়া যায়নি। বিদ্যুতের ক্রয়- সংক্রান্ত কিছু তথ্যেরও ঘাটতি ছিল তখন। এছাড়া বৃহৎ ক্রেতা হিসাবে পিডিবি ছাড়াও অন্যান্য সংস্থা বিভিন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ কিনছে জানতে পেরে সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছিল। এসব সমস্যার সমাধান করে ১৩ নভেম্বর পিডিবি আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন দাখিল করে। সেই আবেদন বিবেচনায় নিয়ে, বিস্তারিত পর্যালোচনা ও পরীক্ষা শেষে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।

নতুন আদেশের ফলে বিদ্যুতের খুচরা গ্রাহকদের দামে কোনো পরিবর্তন আসবে না জানিয়ে বিইআরসির সদস্য মোহাম্মদ বজলুর রহমান বলেন, “খুচরা বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হলে কমিশনে আবেদন করতে হবে। সেই আবেদনের ওপর গণশুনানি হবে। এর আগে ভুতাপেক্ষ বিবেচনায় কোনো দাম বাড়ানো যাবে নাু আদেশে সেটা বলে দেওয়া হয়েছে।” মূল্য বৃদ্ধির বাড়তি চাপ কোম্পানিগুলো কীভাবে পূরণ করবে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “কতটা বাড়তি চাপ হবে সেটা আমরা এখনও জানি না। এর ফলে তাদের লোকসান হবে নাকি লাভের অংক কমে যাবে সেটা হিসাব করলে বলা যাবে।”