
আশুলিয়ায় দিনেদুপুরে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ যৌন উত্তেজক ঔষধ। বিক্রির সুবিধার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে ঔষধের বিভিন্ন সাংকেতিক নাম। অতিলাভের আশায় বিক্রেতারা একেকটি ট্যাবলেট ৫ থেকে ১০ টাকায় কিনে বিক্রি করছেন ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়। অবৈধ ও মানহীন এসব ঔষধে ক্রেতারা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। অবৈধ এসব ঔষধ ব্যবহারে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি সামাজিক অবক্ষয় সৃষ্টির অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আশুলিয়া এলাকার ছোটবড় প্রায় সব জায়গাতেই পাওয়া যাচ্ছে যৌন উত্তেজক ও নিষিদ্ধ এসব ওষুধ। তবে নিষিদ্ধ ঘোষণার পর থেকে ওষুধগুলো বিক্রি হচ্ছে কিছুটা গোপনে। আর যৌন উত্তেজক ওষুধ বিক্রি হচ্ছে অনেকটা প্রকাশ্যেই। যার বেশির ভাগই অনুমোদনহীন ও নিম্নমানের।
ইমপালস হাসপাতালের হরমোন বিশেষজ্ঞ ডা. এ হাসনাত শাহীন বলেন, “হরমোন ওষুধগুলো আমরা রোগীকে বয়স অনুপাতে পরিমাণ অনুযায়ী সাজেস্ট করে থাকি। কিন্তু দেখতে পাচ্ছি, ফুটপাতে বসে এই যৌন উত্তেজক হরমোন বৃদ্ধির ওষুধ নামে-বেনামে বিক্রি করছে। এখানে যারা এসব ওষুধ খাচ্ছে, তারা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। তারা বুঝতেই পারছেন না যে, তারা তাদের শরীরের যে মূল অর্গানগুলো রয়েছে, তার ক্ষতি করছে। আমাদের দেশে যেসব ওষুধ বাজারে পাওয়া যায় সেগুলো ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদনক্রমে বাজারে আসে। কিন্তু হাটে-বাজারে এবং ফুটপাতে যেসব ওষুধ বিক্রি হয় সেগুলো অনুমোদনহীন। সেগুলো খাওয়ার ফলে মারাত্মক রকমের স্বাস্থ্যঝূঁকিতে পড়তে পারেন ক্রেতারা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঠিক মনিটরিংয়ের অভাবে অসাধু ব্যবসায়ীরা এসব কারসাজি করছে। দেশের বাজারে প্রায় দুইশ’ ধরনের যৌন উত্তেজক ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে। যার কয়েকটি ছাড়া সবগুলোই অনুমোদনহীন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তৈরি হয়ে এগুলো সরাসরি চলে আসছে বিভিন্ন বড় পাইকারদের কাছে আর এখান থেকেই ছড়িয়ে পড়ছে খুচরা বাজারে।
তিনি এসব ঔষধ সেবন করার পূর্বে নির্দিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার তাগিদ দেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশের বাজারে প্রায় দুইশ’ ধরনের যৌন উত্তেজক ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে। যার কয়েকটি ছাড়া সবগুলোই অনুমোদনহীন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তৈরি হয়ে এগুলো সরাসরি চলে আসছে বিভিন্ন বড় পাইকারদের কাছে আর এখান থেকেই ছড়িয়ে পড়ছে খুচরা বাজারে।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করে ছোট বড় কয়েকজন ফার্মেসির বিক্রেতারা জানান, সারাদিন তেমন ওষুধ বিক্রি হয় না। যা হয় তা দিয়ে সংসার চলে না। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই নিষিদ্ধ ও যৌন উত্তেজক ওষুধ বিক্রি করতে বাধ্য হই আমরা। ফুটপাতের এক ওষুধ বিক্রেতা বলেন, প্রতিদিন অনেক কাস্টমার এসে কিনে নিয়ে যায় এটাই জানি। তবে অনেক ক্রেতাকে জিজ্ঞেস করে জানা গেছে, এটি যৌন উত্তেজনা বাড়ায়।
তবে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর বলছে, অনুমোদনহীন সব ধরনের ওষুধের কেনাবেচা বন্ধে তদারকি ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে তারা। মাঝেমাঝে অভিযান পরিচালনা করে বলেও জানায় অধিদফতর। শতকরা ৯০ ভাগ লোক এগুলো প্রয়োজন ছাড়াই ব্যবহার করছে। এটি স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকারক এবং মানসিক বিকৃতির জন্যও দায়ী। যারা এসব ওষুধ ব্যবহার করে এরা স্বাভাবিক থাকতে পারে না।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, অতিরিক্ত যৌন উত্তেজক ওষুধ সেবনের ফলে ব্যক্তির মানসিক সমস্যা ছাড়াও অপরাধ করার প্রবণতা বাড়াতে সহায়তা করে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ধরনের ওষুধ সেবন স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আশুলিয়া ফার্মেসী ডেভেলপমেন্ট এর সভাপতি জহিরুল ইসলাম খান লিটন বলেন, ঔষধ দোকানের জন্য সরকারের একটি নীতিমালা রয়েছে। একজন ফার্মাসিস্টের ফ্রিজ, এসি, থাকতে হবে যেন ঔষধের মান ঠিক থাকে। ফুটপাতে ঔষধ বিক্রি করা সম্পূর্ণ অবৈধ।
এদিকে যৌন উত্তেজক বা শক্তিবর্ধকের নামে যেসব ঔষধ বিক্রি করা হচ্ছে তা কিশোররাও সেবন করছে। ফলে ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে তারা দূরে সরে যাচ্ছে, সামাজিক অবক্ষয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমাজের সচেতন মহলের দাবি সঠিক মনিটরিং করলে জনগণ উপকৃত হবে। তাই আশুলিয়ায় এসব অবৈধ ঔষুধ বিক্রি বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরো নজরদাড়ি বাড়ানোর দাবি স্থানীয়দের।