
ক্রীড়া প্রতিবেদক:
দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে দুয়ারে দাঁড়িয়ে ২২তম ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ-২০২২। বিশ্বকাপ এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ফুটবলপ্রিয় মানুষের হৃৎপিন্ডের স্পন্দনও। ধীরে ধীরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে আবিষ্ট হয়েছে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের চোখ। শেষ হতে যাচ্ছে অপেড়্গার পালা। স্বাগতিক কাতার আর ইকুয়েডরের ম্যাচ দিয়ে আজ রাতেই পর্দা উঠবে বিশ্বকাপ ফুটবলের। দীর্ঘ একমাস মানুষ বুঁদ হয়ে থাকবে ফুটবলের মাতাল হাওয়ায়। হাসি-কান্না আর আনন্দ-বেদনার ফুটবল কাতারে উপহার দেবে এবারের চ্যাম্পিয়ন দল। সফল আয়োজনে পুরোপুরি প্রস্তুত এশিয়ার অন্যতম ধনী দেশ কাতার। মরম্নর দেশের মাঠে ফুটবলের ফুল ফোটাতে প্রস্তুত হচ্ছে দলগুলো।
‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ হিসেবে পরিচিত ফিফা বিশ্বকাপের পর্দা উঠছে আজ রাত আটটায়। বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় শুরম্ন হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান চলবে টানা ৪৫ মিনিট। পরে রাত ১০টায় উদ্বোধনী ম্যাচে ইকুয়েডরের বিপড়্গে মাঠে নামবে স্বাগতিক কাতার। প্রথমবারের মতো এই আসরের আয়োজনে থাকছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার। দেশটির পাঁচ শহরের ৮ স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের সর্বমোট ৬৪টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। আজ ২০ নভেম্বর থেকে শুরম্ন হয়ে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে বিশ্বকাপের এই উন্মাদনা।
স্বাভাবিকভাবেই বিশ্ব ফুটবলের মহাযুদ্ধের এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই ফুটবল ভক্তদের মধ্যে। দেশটির খোর শহরের আল বায়াত স্টেডিয়ামে হবে এ সকল আয়োজন। স্টেডিয়ামটিতে এক সঙ্গে ৬০ হাজার দর্শক বসতে পারবেন। এটি কাতারের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্টেডিয়াম। ৮০ হাজার ধারণড়্গমতার লুসাইল স্টেডিয়ামটি সবচেয়ে বড়।
দোহার ৬০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন আল বায়েত স্টেডিয়ামে বিশ্বখ্যাত ও স্থানীয় শিল্পীদের পারফরম্যান্স দিয়ে শুরু হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে বলিউড তারকা নোরা ফাতেহি ও আমেরিকান গায়ক লিল বেবিও পারফর্ম করবেন। বেবি গাইবেন বিশ্বকাপের থিম সং ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইজ ইওরস টু টেক’। সেই গানে মানাল ও রেহমার সঙ্গে নাচবেন নোরা ফাতেহি। বিশ্বকাপের এবারের আসরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশনার জন্য আনা হচ্ছে কোরিয়ান ব্যান্ড বিটিএসকে। এ ছাড়া স্থানীয় নৃত্যশিল্পীরাও আল বায়েত স্টেডিয়ামে পারফর্ম করার সুযোগ পাবেন। ধারণা করা হচ্ছে, এবারের বিশ্বকাপের দিকে চোখ থাকবে প্রায় ৫০০ কোটি মানুষের, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হবে কাতার বিশ্বকাপের অফিসিয়াল মাসকট— লা’ইব; যার অর্থ ‘অতি দড়্গ খেলোয়াড়’। সাদা রঙের কাতারি পোশাক পরা এক কিশোরের আদলে তৈরি করা হয়েছে লা’ইব-কে।
এই আয়োজনকে স্বার্থক করে তুলতে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে প্রস্তুত হয়েছে কাতার। বিশ্বকাপ আয়োজনে দেশটি সেজেছে নতুন সাজে, নতুন রূপে। আধুনিক স্টেডিয়াম, যোগাযোগ ব্যবস্থা, হোটেল-রেস্তোরা- সব কিছুতেই নতুত্বের ছোঁয়া পাবেন দর্শকরা। মাঠে বসিয়ে আনন্দে ভাসার জন্য বিশ্বকাপে প্রায় ১২ লাখ বিদেশি দর্শককে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত কাতার।
ইতিহাসে প্রথম মুসলিম কোন দেশে হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবল। ফুটবল ইতিহাসে আয়তনে সবচেয়ে ছোট ও কম জনসংখ্যার দেশে এই প্রথম বিশ্বকাপ। এর আগে ছোট দেশ এবং কম জনসংখ্যা হিসেবে ১৯৫৪ সালে সুইরাজল্যান্ডে হয়েছিলো বিশ্বকাপ ফুটবল। দ্য গ্রেটেস্ট শোকে স্বার্থক করতে ২০০ বিলিয়ন ডলারের উন্নয়ণ কাজ করেছে কাতার। বিশ্বকাপে এটিই সবচয়ে ব্যয়বহুল আসর। নতুন করে বানানো হয়েছে সাতটি স্টেডিয়াম।
বিশ্বকাপ দেখতে আসা দর্শকদের সুবিধার জন্য তৈরী হয়েছে নতুন বিমানবন্দর, রাস্তা ও হোটেল। এমনকি দর্শকদের জাহাজের কেবিনেও থাকার ব্যবস্থা থাকছে। ঢেলে সাজানো হয়েছে গণপরিবহন ব্যবস্থা। এমনকি বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচ আয়োজনে নতুন একটি শহরই গড়ে তুলছে কাতার।
কাতার বিশ্বকাপের অফিসিয়াল ম্যাচ বল এর নাম ‘আল রিলা’। বাংলায় যার অর্থ ‘সফর’। বিশ্বখ্যাত স্পোর্টস কোম্পানি অ্যাডিডাস এই বল তৈরি করেছে। ইবন বতুতার ভ্রমণবৃত্তান্ত থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই এই বলের নাম রাখা হয়েছে আল রিলা। বলের ডিজাইন থেকে রং এ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কাতারের সংস্কৃতি।
বিশ্বকাপের আইকনিক ট্রফির আদলে গড়া এবারের লোগোর নকশায় রয়েছে আরব ঐতিহ্যের ছোঁয়া। মধ্যপ্রাচ্যের জনপ্রিয় শীতকালীন পোশাক পশমি শালের ভাজের ছোয়াও আছে লোগোতে। যা একই সঙ্গে আরবের ঢেউ-খেলানো মরম্নভূমির টিলার রূপ আর অখন্ড লুপকে ফুটিয়ে তুলেছে। ‘বিশ্বকাপ ফুটবল এমন একটা উৎসব, যা বিশ্বব্যাপী সবাইকে একত্রিত করবে, আর এর মাধ্যমেই কাতার স্মরণীয় করে রাখতে চায় মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম বিশ্বকাপকে।
শুধু মাঠ বা আয়োজক নয়, বিশ্বকাপে মাতোয়ারা হতে মহাব্যস্ত ভক্তরাও। পতাকা কেনা, পতাকা টানানো, জার্সি কেনা, পোস্টার সংগ্রহ করা, ফেসবুকে বাহারি পোস্ট দেওয়া, বল কেনা, প্রিয় তারকার ছবি সংগ্রহ এমনকি টুর্নামেন্টের ফিকশ্চার, অনলাইনে খেলা দেখার প্রক্রিয়া ইত্যাদি আয়োজন নিয়ে চরম ব্যস্ততায় দিন কেটেছে ভক্তদের। আজ থেকে সেই অপেক্ষা বাস্তবতায় রূপ নিচ্ছে। এই বিশ্বকাপের রঙ শুধু কাতারেই লাগেনি। লেগেছে ভক্তদের মনেও। প্রতি চার বছর পরপর এই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। মাঠের লড়াই চলে আসে চায়ের কাপে। কথার যুদ্ধে মাতোয়ারা থাকে ভক্তরা। অফলাইন অনলাইনে চলে তুমুল বিতর্ক। আর এভাবেই সেই দূরদেশের ফুটবল বিশ্বকাপ হয়ে ওঠে বাংলাদেশেরও। কয়েক হাজার মাইল দূরত্ব পেরিয়ে বিশ্বকাপের উষ্ণ হাওয়ায় দোলে বিশ্বের কোটি ফুটবল ভক্তদের মন।