Date: May 01, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / অর্থনীতি / ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা আরও বেড়েছে, জরিপে ব্যবসায়ীদের অভিমত - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা আরও বেড়েছে, জরিপে ব্যবসায়ীদের অভিমত

January 30, 2023 07:07:04 AM   জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা আরও বেড়েছে, জরিপে ব্যবসায়ীদের অভিমত


২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ব্যবসায়িক পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়নি বরং এটি আগের তুলনায় আরও খারাপ হয়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এর জন্য তারা দায়ী করছে দুর্নীতিকে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ও ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডাব্লিউইএফ) এক যৌথ জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গত বছর এই দুর্নীতিই ছিল ব্যবসায় উন্নতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। শুধু তাই নয়, অদক্ষ আমলাতন্ত্র ও পুঁজির জোগানের সীমিত সুযোগ ছিল ব্যবসার জন্য বড় বাধা। এবার তার সাথে যুক্ত হয়েছে ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে চ্যালেঞ্জ, মূল্যস্ফীতি, অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও বৈদেশিক মুদ্রার উত্থান-পতনের মত সমস্যা।

গতকাল সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ ২০২২’ শীর্ষক এ জরিপের ফল আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

জরিপের অংশ নেওয়া দুই-তৃতীয়াংশ বা ৪৭ দশমিক ৮ শতাংশ ব্যবসায়ী দুর্নীতিকে ব্যবসার বড় বাধা হিসেবে উল্লেখ করেন। কোন কোন জায়গায় দুর্নীতি হচ্ছে, সেটিও জরিপে উঠে এসেছে। ৬৪ শতাংশ ব্যবসায়ী কর প্রদানে, ৫৪ শতাংশ ব্যবসায়িক লাইসেন্স নিতে, ৪৯ শতাংশ গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ নিতে এবং ৭৫ শতাংশ ব্যবসায়ী আমদানি-রপ্তানিতে দুর্নীতির কথা বলেছেন।
এছাড়া ৪৪ দশমিক ৬ শতাংশ দুর্নীতির পাশাপাশি ব্যবসার জন্য দুর্বল অবকাঠামো, ৪৩ দশমিক ১ শতাংশ ব্যাংকঋণের অপর্যাপ্ততা ও অদক্ষ প্রশাসন, ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিরতা, ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ নীতি ধারাবাহিকতার অভাব, ২৬ দশমিক ২ শতাংশ জটিল করব্যবস্থা ও উচ্চ করহার, ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ দুর্বল নীতি-নৈতিকতা ও সরকারে স্থিতিশীলতার অভাব, ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ অপরাধ ও উদ্ভাবনে অপর্যাপ্ত সক্ষমতা এবং ১০ দশমিক ৮ শতাংশ ব্যবসায়ী শ্রমসংক্রান্ত নিয়মনীতির সীমাবদ্ধতাকে সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেন।

সিপিডি জানিয়েছে, ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে বিভিন্ন সেক্টর ও কোম্পানির ৭৪ জন সিনিয়র ব্যবসায়ীদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রেহ মাধ্যমে ওই জরিপকাজ পরিচালনা করা হয়েছে। যার মধ্যে বড়, মাঝারি ও ক্ষুদ্র উদোক্তাদেরও তথ্য-উপাত্ত নেওয়া হয়েছে। সেই হিসাবে এটি জাতীয় প্রতিনিধিত্বশীল জরিপ নয়।

অনুষ্ঠানে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, সারাবিশ্ব এখন একটি অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একদিকে মূল্যস্ফীতির চাপ। যার মধ্যে খাদ্য ও জ্বালানি সমস্যা, মূদ্রাস্ফীতি, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ এবং তার পাশাপাশি বিভিন্ন ভূ-রাজনৈতিক সমস্যা তৈরি হয়েছে। যার ফলে বিশ্বের বড় বড় দেশগুলো অর্থনৈতিক মন্দার দিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ পূর্বাভাস দিয়েছে যে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মন্দাভাব থাকবে। এটা থেকে উত্তরণ হচ্ছে না। এসব কারণে বাংলাদেশের মতো দেশ হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ ওই সব মূল্যস্ফীতির কারণে হাবুডুবু খাচ্ছে। এর মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ে ও ব্যবসায়ীরা এক ধরনের চাপে রয়েছে। ২০২২ এর এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত যে জরিপকাজ হয়েছে। ওই সময়ের পরে আগস্ট, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে বেশকিছু নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই সময়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এর ফলে উৎপাদন খরচ বাড়বে। যার চাপ ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাবে, মূদ্রাস্ফীতির চাপ কমানের যে চেষ্টা রয়েছে, তা কমে আরও বাড়বে। এর পাশাপাশি রপ্তানিকারক শিল্পগুলো উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে নতুন করে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে রপ্তানি সক্ষমতা কমে এলে বড় একটি প্রভাব পড়বে রপ্তানিখাতে। আমাদের বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ এমনিতেই কমার দিকে, সেখানে এমন সিদ্ধান্ত নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। জরিপে যে সব সূচকের কথা বলা হয়েছে। তার মধ্যে প্রথম সূচক রয়েছে দুর্নীতি। দুর্নীতির কারণে শুধু উৎপাদন খরচ নয়, সেবার মূল্যও অনেকখানি বেড়ে যায়।

ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে বেশ কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে জরিপে। এর মধ্যে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ করে বিভিন্ন নীতি, কৌশল ও পরিকল্পনা নেওয়া। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে একটি বড় সংস্কার নিশ্চিত করা। আরও স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দক্ষতার মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগ নিশ্চিত করা। নাগরিক এবং ব্যবসায়িক সেবা নিশ্চিত করা। ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আর্থিকখাতে সংস্কার, নির্বাচনী ইশতেহারে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ করার অঙ্গীকার করা।

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আর্থিক খাতে সুশাসনের অভাব রয়েছে। এসএমই উদ্যোক্তারা ঋণ পায় না। এক্ষেত্রে সুদের হার কমিয়ে দেওয়া দরকার। পুঁজিবাজার আগের মতোই দুর্বলতা রয়েছে। আর্থিক খাতে সুশাসন আনার ক্ষেত্রে সরকার যে আশ্বাস দিয়েছে, বিশেষ করে ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আইএমএফের সঙ্গে সরকার সুশাসনের যে কথা দিয়েছে সেখান থেকে কাজ শুরু হতে পারে। সেখানে আর্থিক খাত সংস্কারের অংশ হিসেবে ঋণ খেলাপিদের কমিয়ে আনা প্রয়োজন।  তিনি বলেন, এফডিআই অর্থ্যাৎ বিদেশি বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রে আমরা সেরকম সম্ভাবনা দেখছি না। বিদেশি বিনিয়োগ সমানভাবে আকৃষ্ট করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে কর কাঠামো সংক্রান্ত জটিলতা, অবকাঠামোগত ঘাটতি, আমলাতান্ত্রিক দুর্বলতা ও দক্ষ জনবলের অভাবের কারণে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারছি না। আমাদের দেশের নীতি কাঠামো যখন করা হয় তখন সবার জন্য করা হয়। কিন্তু ছোট, মাঝারি ও বড়দের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নীতি দরকার। খাত ও আকারভিত্তিক উদ্যোগ দরকার।

অনুষ্ঠানের শেষ দিকে এই অর্থনীতিবিদ জানান, নির্বাচনের বছর সামাজিক ও রাজনৈতিক অশান্তি আরও বাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।