
শামীম হোসেন:
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বরিশালে অনেকটা নিষ্ক্রিয় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেই সুযোগে মাদক বিক্রেতারা হরদম তাদের বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে প্রকাশ্যেই বরিশালে আসছে মাদকের চালান। অনেকটা খোলামেলা ভাবেই বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিল। অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেরা বারে গিয়ে পান করছে মদ। নগরীতে চোলাই মদও বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার কারণেই প্রকাশ্যে বেড়েছে মাদকের বিস্তার। আইনশৃঙ্খলায় যুক্ত একাধিক সদস্য বলেন, শুধু পুলিশ দিয়ে মাদকের বিস্তার রোধ করা সম্ভব নয়। এটি একটি সামাজিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। মাদক বন্ধ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তাছাড়া পরিবারের লোকজনকে এ ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
সরেজমিন দেখা যায়, ৫ আগস্ট থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম শিথিল থাকার সুযোগ নিয়ে অনেকটা প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে মাদক। নগরীর পলাশপুর, রসুলপুর, মোহাম্মদপুর, কেডিসি, রূপাতলী, গ্যাস্টারবাইন, নথুল্লাবাদ, কাশিপুর, কাউনিয়া, নাজিরপোলসহ অর্ধশত স্পটে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা ও গাঁজা। এছাড়া মোবাইল ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে ফেনসিডিল। রসুলপুর এলাকার চিহ্নিত লিপি-পলাশ দম্পতির নিয়ন্ত্রণে ডজনখানেক মাদক বিক্রেতা প্রকাশ্যে বিক্রি করছে গাঁজা। তাদের পাশেই যুথি-মুন্নাও একইভাবে চালিয়ে যাচ্ছে মাদক বাণিজ্য। সিএন্ডবি রোডের সুমন, নাজিরপোলের রফিক, কেডিসির নাজু, ময়না, খলিল, নিলু, ডাক্তার রাসেল, মানিক, এথেন ও শামিম বিক্রি করছে গাঁজা ও ইয়াবা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ না নিলে ধ্বংস হবে যুবসমাজ ও স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা।
বরিশাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এনায়েত হোসেন বলেন, গত মাসে কিছুদিন মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ ছিল। তবে এক সপ্তাহ ধরে অভিযান চলমান রয়েছে। গত ৭ দিনে ১৭ কেজি গাঁজা ও ২০০ ইয়াবাসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ধীরে ধীরে আমাদের অভিযানের গতি বাড়ছে। মাদকের বিষয়ে কোনো আপস নয়। এর বিস্তার রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জোরদার কার্যক্রমের আহ্বান জানিয়েছেন সুশীল সমাজের নেতারা।
সচেতন নাগরিক সমাজের বরিশাল জেলা সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শুধু কাগজে-কলমে থাকলেই চলবে না। বর্তমানে মাদকের প্রভাবে সমাজে বসবাস করা দায় হয়ে পড়েছে। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ করে বলতে চাই, তারা তাদের জায়গা থেকে কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করলেই শুধু বন্ধ হবে মাদকের বিস্তার।
শিক্ষাবিদ ও নারী নেত্রী অধ্যাপক শাহ সাজেদা বলেন, দেশের এই অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়তে হবে। না হলে সামনে আরও ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে।
এ বিষয়ে বরিশাল মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার উপকমিশনার জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, সারা দেশে কর্মবিরতি থেকে পুলিশ ধীরে ধীরে কাজে যোগদান করেছে। এরপর পুলিশের মধ্যে সংস্কার ও বদলিজনিত কারণে কিছুটা স্থবিরতা ছিল। এছাড়া দলবদ্ধভাবে মাদক উদ্ধার সম্ভব নয় উল্লেখ করে এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, দলবদ্ধভাবে অভিযানে গেলে মাদক বিক্রেতারা খবর পেয়ে সটকে পড়ে। তিনি বলেন, আমরা মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি। অচিরেই বন্ধ হবে বরিশাল নগরীতে মাদক বাণিজ্য।