
বরিশালের কাঁচাবাজারে এখনো অটুট রয়েছে বাজার সিন্ডিকেট। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে, আর ভোক্তারা পড়ছেন চরম দুর্ভোগে। ব্যবসায়ীদের দাবি, সাম্প্রতিক বন্যা ও টানা বৃষ্টির কারণে সরবরাহ সংকটে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সাধারণ মানুষ বলছেন, এসব অজুহাতের আড়ালে সিন্ডিকেটের কারসাজিই মূল কারণ।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বরিশালের বিভিন্ন বাজার, যেমন পোর্ট রোড, চৌমাথা ও রুপাতলী কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব সবজির দাম কেজি প্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। পটল, ঢ্যাঁড়শ, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, যা সপ্তাহখানেক আগে ৪০ টাকার কাছাকাছি ছিল। একইভাবে করলা, বরবটি ও লম্বা বেগুনের দাম বেড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি হয়েছে।
কাঁচা মরিচের দাম নিয়ে সবচেয়ে বেশি হতাশ ক্রেতারা। রুপাতলী কাঁচাবাজারে আসা সোহেল হাওলাদার নামে এক চাকরিজীবী বলেন, "কাঁচা মরিচের দামের কোনো ঠিক নেই। কোথাও ২০০ টাকা, আবার কোথাও ২৪০ টাকা। কয়েক দিন আগেও কিনেছি ১৬০ টাকায়।"
পেঁয়াজের বাজারও লাগামহীন। আমদানি করা পেঁয়াজ ৯০ থেকে ১০০ টাকা, আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়। দেশি রসুন ২০০ থেকে ২১০ টাকা এবং আমদানি করা রসুন ২২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
চালের দামও বেড়ে গেছে। মোটা চালের কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, মাঝারি চাল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং সরু চাল মানভেদে ৬৪ থেকে ৭৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে ডিম ও মুরগির বাজারও চরম অস্থিরতায় ভুগছে। পোর্ট রোড বাজারে আসা আসিকুল ইসলাম নামে এক নির্মাণ শ্রমিক বলেন, "ডিম ও মুরগির দামের ওঠানামা দেখে এখন ভয় লাগে। দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের জন্য এই অবস্থা কতদিন সহ্য করা সম্ভব?"
ব্যবসায়ীদের দাবি, টানা বৃষ্টি ও বন্যার কারণে সবজির সরবরাহ কমে গেছে, ফলে দাম বেড়েছে। তারা আশ্বাস দেন, এ পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হবে না এবং শিগগিরই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তবে ডিম ও মুরগি ব্যবসায়ীরা জানান, সাম্প্রতিক বন্যায় বহু খামার তলিয়ে গেছে, যার প্রভাব পড়েছে ডিম ও মুরগির উৎপাদনে। ফলে সরবরাহ সংকটে দাম বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে হলে সরকারকে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। ক্রেতারা চান, কঠোর নজরদারি এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা, যাতে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায়। সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়া সাধারণ মানুষের ভোগান্তি নিরসনের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন তারা।